প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে প্রতিদিন নতুনভাবে বদলে দিচ্ছে। আমরা এমন এক যুগে বাস করছি যেখানে মেশিন শুধু মানুষের কাজকেই সহজ করছে না, বরং মানুষের মতো চিন্তা-ভাবনাও করছে। এই আশ্চর্য পরিবর্তনের নাম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। কয়েক বছর আগেও আমরা হয়তো ভাবতে পারতাম না, একটি মেশিন মানুষের মতো কথা বলবে, সমস্যা সমাধান করবে বা সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু আজ সেই কল্পনা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন শুধু বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিষয় নয়; এটি চিকিৎসা, শিক্ষা, কৃষি, ব্যবসা, পরিবহনসহ নানা খাতে ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা প্রতিদিন যে স্মার্টফোন ব্যবহার করি, তাতেই রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার। গুগল সার্চে তথ্য খোঁজা, ইউটিউবে ভিডিও সাজেশন, এমনকি ফেসবুকে কারো মুখ চিনে নেওয়ার ক্ষমতাথ সবই এআই-এর কাজ। এতসব সুবিধার মধ্যেও প্রশ্ন থেকে যায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াচ্ছে, নাকি চাকরি কেড়ে নিচ্ছে? কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অনেক ক্ষেত্রেই নতুন কর্মসংস্থানের পথ খুলে দিচ্ছে। আগে যেখানে চিকিৎসককে শুধু নিজের অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করতে হতো, এখন তিনি এআই-এর মাধ্যমে দ্রুত রোগ নির্ণয় করতে পারছেন। কৃষকরাও আবহাওয়া ও মাটির গুণাগুণ বিশ্লেষণ করে ফসলের সঠিক পরিচর্যা করতে পারছেন। এসব ক্ষেত্রে নতুন ধরনের চাকরি তৈরি হচ্ছেÑ ডেটা অ্যানালিস্ট, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, রোবোটিক্স বিশেষজ্ঞ, সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট প্রভৃতি। তবে এর নেতিবাচক দিকও রয়েছে। অনেক সাধারণ কাজ, যেমন ডেটা এন্ট্রি, কাস্টমার কেয়ার, টিকিট বুকিং ইত্যাদি এখন রোবট সহজেই করছে। ফলে এসব ক্ষেত্রে কর্মরত মানুষ চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া এআই-এর মাধ্যমে ভুয়া ভিডিও, ছবি বা তথ্য তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে, যা সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে। প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে, ততই এর অপব্যবহারের ঝুঁকি বাড়ছে। আরেকটি আশঙ্কা হলো, মানুষ প্রযুক্তির উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। প্রতিটি কাজে যদি মেশিনের সাহায্য নিতে হয়, তাহলে মানবিক যোগ্যতা ও সৃজনশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
সায়মা আক্তার
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।