দামেস্কে সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরের পাশে ইসরায়েলের হামলা
গত বুধবার যুদ্ধবিমানগুলো সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সামরিক সদর দপ্তর ও প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের আশপাশের এলাকা লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এগুলো কোনো সীমান্তবর্তী ‘ফ্রন্টলাইন’ এলাকা ছিল না, বরং এসব স্থাপনা সিরিয়ার রাজধানীর সার্বভৌম ও প্রতীকী কেন্দ্র।
অজুহাত ছিল দুর্বল—সিরিয়ার দ্রুজ সম্প্রদায়কে রক্ষার নামে এই হামলা। কিন্তু এতে কারও বিভ্রান্ত হওয়া উচিত নয়; এ হামলা সুরক্ষার জন্য নয়, বরং শক্তি ও ঔদ্ধত্য প্রদর্শনের জন্য। এটি দ্রুজদের জন্যও নয়—যারা সিরীয় আরব এবং সিরিয়ার জাতীয় কাঠামোর অবিচ্ছেদ্য অংশ—বরং বহুদিনের ইসরায়েলি আঞ্চলিক বিভাজন নীতি চাপিয়ে দেওয়ার প্রয়াস; যা গাজার রক্তাক্ত ধ্বংসস্তূপ থেকে শুরু করে দামেস্কের বিধ্বস্ত মন্ত্রণালয়, এমনকি অন্যান্য রাষ্ট্রের অস্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে বিস্তৃত।
গাজায় ইতিমধ্যে ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল, যাঁদের বেশির ভাগ নারী ও শিশু; আহত করেছে আরও ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষকে; ধ্বংস করেছে ওই ভূখণ্ডের প্রায় ৮০ শতাংশ স্থাপনা। এমন এক রাষ্ট্র এখন সংখ্যালঘুদের রক্ষাকর্তা সাজতে পারে না।
যে রাষ্ট্র দ্রুত বিশ্বের বৃহত্তম খোলা কারাগারে পরিণত হওয়া এক ভূখণ্ড গড়ে তুলছে, অনাহারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, অধিকৃত পশ্চিম তীরে প্রতিদিন জাতিবিদ্বেষী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে এবং তার মৌলিক আইনে বৈষম্যকে বৈধতা দিচ্ছে, সেটা কোনো নৈতিক উচ্চ অবস্থান দাবি করতে পারে না। তারা আসলে সিরিয়ার দ্রুজ জনগোষ্ঠীর জন্য ভুয়া সহানুভূতি দেখিয়ে নিজেদের ভয়ংকর উদ্দেশ্য আড়াল করতে চায়।
টেলিভিশনে সম্প্রচারিত অপমানের নাটক
লক্ষ্যবস্তু বাছাই ছিল প্রতীকী, কৌশলগত নয়। উমাইয়া স্কয়ার কেবল একটি সড়ক সংযোগ নয়—এটি দামেস্কের আত্মা। এটি সিরীয় গৌরব ও আরব মর্যাদার স্মারক। এখানে দাঁড়িয়ে আছে দামেস্ক তলোয়ারের ভাস্কর্য, প্রতিধ্বনিত হয় উমাইয়া খিলাফতের উত্তরাধিকার, যার এককালে বিস্তার ছিল পিরেনিজ পর্বতমালা থেকে মধ্য এশিয়ার তৃণভূমি পর্যন্ত।
মাত্র আট মাস আগে এই স্কয়ারেই সিরীয়রা উদ্যাপন করেছিল ছয় দশকের একনায়কতন্ত্রের পতন। সেই স্থানেই, কর্মদিবসের মাঝখানে, ইসরায়েল হামলা চালায়। তারা এটা জানে যে স্কয়ারটির চারপাশে আন্তর্জাতিক ও আরব টেলিভিশন চ্যানেলের কার্যালয় রয়েছে এবং এই হামলার ফুটেজ বারবার সম্প্রচারিত হবে স্যাটেলাইট চ্যানেল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
এটি শুধু একটি বোমাবর্ষণ ছিল না। এটি ছিল টেলিভিশনে সম্প্রচারিত অপমানের এক প্রদর্শনী। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রীই তা স্পষ্ট করে দেন, যখন তিনি গর্বের সঙ্গে একটি ভিডিও শেয়ার করেন—যেখানে দেখা যায়, এক আতঙ্কিত সিরীয় উপস্থাপক সরাসরি সম্প্রচারের সময় তার আসন ছেড়ে দৌড়ে চলে যাচ্ছেন আর পেছনে জ্বলছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
এটি ছিল এক পরিকল্পিত নাটক, যার উদ্দেশ্য সিরীয়দের চমকে দেওয়া এবং আরবদের আতঙ্কিত করা। এই হামলাটা শুধু অবৈধ বা অনৈতিক নয়—এটা আসলে এক দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপ, যার লক্ষ্য হলো একটি খণ্ডিত, দুর্বল, বিভক্ত অঞ্চলের ওপর ইসরায়েলি আধিপত্য চাপিয়ে দেওয়া।
এটি নতুন নয়, প্রতিক্রিয়াশীলও নয়; এটি ইসরায়েলের কৌশলের মূল ভিত্তি, যা দশকের পর দশক ধরে, ভিন্ন সরকার, সীমানা ও যুদ্ধে অনুসৃত হয়ে আসছে। সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতনের পর থেকে ইসরায়েল সিরিয়ায় যত হামলা চালিয়েছে, তা আগের সব দশক মিলিয়েও বেশি।
তারা পদ্ধতিগতভাবে সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করেছে, শত শত অভিযান চালিয়েছে এবং দক্ষিণ সিরিয়ার কৌশলগত পর্বতমালা দখল করে তাদের দখলদারত্ব গভীরতর করেছে। ইসরায়েলের বিমান হামলা এখন এতটাই নিয়মিত ও সাধারণ হয়ে উঠেছে যে এগুলো স্বাভাবিক করে তোলা, সার্বভৌমত্ব মুছে দেওয়া এবং সিরিয়ার আঞ্চলিক অবস্থান ভেঙে দেওয়াই যেন লক্ষ্য।
কিন্তু এটা শুধু এক হামলা নয়, এটা এক মানসিকতা—যা ইসরায়েলি নেতারা ধীরে ধীরে আরও স্পষ্ট করে তুলছেন। আসাদের দেশত্যাগের মাত্র এক দিন পর ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা দেন, ‘একক, সার্বভৌম সিরিয়ার ধারণা অবাস্তব।’
ইসরায়েলি সামরিক প্রশিক্ষক রামি সিমানি আরও এগিয়ে বলেন, ‘সিরিয়া একটি কৃত্রিম রাষ্ট্র…ইসরায়েলকে অবশ্যই সিরিয়াকে বিলুপ্ত করতে হবে। তার জায়গায় গড়ে উঠবে পাঁচটি ক্যান্টন।’
উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দেন, ‘যুদ্ধ থামবে না যতক্ষণ না লাখ লাখ গাজার বাসিন্দা চলে যায়… এবং সিরিয়া ভাগ হয়ে যায়।’
এগুলো কেবল কথার ফুলঝুরি নয়, বরং এক বাস্তব নীতি এবং সেটিই এখন কার্যকর করা হচ্ছে।
আরব ঐক্য দুর্বল করার কৌশল
এই কৌশলের শিকড় প্রসারিত সাত দশকেরও বেশি পেছনে, তথাকথিত ‘পেরিফেরি নীতি’তে, যা ইসরায়েলের অস্তিত্বের শুরুর বছরগুলোতে ডেভিড বেন-গুরিয়ন ও এলিয়াহু সাসুন প্রণয়ন করেছিলেন। এর যুক্তি ছিল সহজ ও নির্মম: যেহেতু ইসরায়েল আরব বিশ্বে মিশে যেতে পারবে না, তাই তাকে ঘিরে ফেলতে হবে অ-আরব শক্তিগুলোর (তুরস্ক, ইরান, ইথিওপিয়া) সঙ্গে জোট গড়ে তুলে এবং আরব রাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরীণ বিভাজনকে কাজে লাগিয়ে জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের শক্তিশালী করে।
এই নীতির তিনটি লক্ষ্য ছিল—অ-আরব, পশ্চিমাপন্থী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে অংশীদারত্ব গড়ে তোলা; ভেতর থেকে বিভাজন উসকে দিয়ে আরব ঐক্যকে দুর্বল করা এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরবদের সম্মিলিত বিরোধিতাকে প্রশমিত করা।
এই কৌশল ইসরায়েলকে তার শুরুর বছরগুলোয় টিকে থাকতে এবং উন্নতি করতে সাহায্য করেছিল। কিন্তু এটি কখনো প্রতিরক্ষামূলক ছিল না, বরং ছিল সম্পূর্ণ সম্প্রসারণবাদী। বেন-গুরিয়ন নিজেই তা স্বীকার করেছিলেন: ‘আমাদের লক্ষ্য লেবানন, ট্রান্স-জর্ডান এবং সিরিয়াকে গুঁড়িয়ে দেওয়া… এরপর আমরা বোমা মারব, এগিয়ে যাব এবং পোর্ট সাইদ, আলেকজান্দ্রিয়া ও সিনাই দখল করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের একটি গতিশীল রাষ্ট্র তৈরি করতে হবে, যা সম্প্রসারণের দিকে অভিমুখী। চূড়ান্ত বন্দোবস্ত বলে কোনো কিছু নেই…শাসনব্যবস্থা, সীমানা কিংবা আন্তর্জাতিক চুক্তি—কোনো ক্ষেত্রেই নয়।’
আঞ্চলিক গতিশীলতা বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে ইসরায়েলের লক্ষ্যও বদলেছে। মিসর শান্তি স্থাপন করেছে। ইরানের শাহ ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। তুরস্ক ফিলিস্তিনিদের আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে। নীতিকে তাই রূপান্তরিত হতে হয়েছে। কিন্তু মূল লক্ষ্য হিসেবে ‘বিভাজন’ অবিচল থেকেছে। লেবানন, ইরাক, সুদানে ইসরায়েল এই সূত্র প্রয়োগ করেছে। তবে সিরিয়া এখনো এই কৌশলের মুকুটমণি।
অন্যত্র তিনি আরও স্পষ্ট করে বলেন, ‘জায়োনিস্ট বা জায়নবাদী আকাঙ্ক্ষার সীমানা হলো ইহুদি জনগণের উদ্বেগ এবং কোনো বাহ্যিক শক্তি তা সীমিত করতে পারবে না।’
এসব শুধু কল্পনাপ্রসূত চিন্তা ছিল না, এগুলো ছিল নীতির মৌলিক স্তম্ভ এবং আজও এগুলোই ইসরায়েলের নীতিকে চালিত করছে।
আঞ্চলিক গতিশীলতা বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে ইসরায়েলের লক্ষ্যও বদলেছে। মিসর শান্তি স্থাপন করেছে। ইরানের শাহ ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। তুরস্ক ফিলিস্তিনিদের আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে। নীতিকে তাই রূপান্তরিত হতে হয়েছে। কিন্তু মূল লক্ষ্য হিসেবে ‘বিভাজন’ অবিচল থেকেছে।
লেবানন, ইরাক, সুদানে ইসরায়েল এই সূত্র প্রয়োগ করেছে। তবে সিরিয়া এখনো এই কৌশলের মুকুটমণি। কেন?
কারণ, সিরিয়া ফিলিস্তিন সীমান্তবর্তী সবচেয়ে জনবহুল আরব রাষ্ট্র এবং সিরীয়রা ফিলিস্তিনকে বিদেশি ইস্যু নয় বরং তাদের নিজস্ব ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক ও আধ্যাত্মিক ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে দেখে। তা ছাড়া বিলাদ আল-শাম শুধু ভৌগোলিক স্থান নয়, এটি একটি যৌথ স্মৃতি এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ, ইসরায়েল সিরিয়ার ভূমি দখল করে রেখেছে।
এ কারণেই ইসরায়েল গত দশকে কুর্দি ও দ্রুজ সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে, ভবিষ্যতের বিভাজনের হাতিয়ার হিসেবে তাদের ব্যবহারের প্রস্তুতিতে এবং এখন আসাদ চলে যাওয়ার পর, সেই ভবিষ্যৎ বাস্তবে রূপ নিচ্ছে।
একটি মারাত্মক ভুল হিসাব
কিন্তু সিরিয়াই ইসরায়েলের শেষ গন্তব্য নয়। এটি শুধু মাঝপথ। ইসরায়েলের আকাঙ্ক্ষা এখন অঞ্চলটির আরও গভীরে প্রসারিত হয়েছে—‘পেরিফেরি’ অঞ্চলের ভেতরে—যেখানে ইরান ও পাকিস্তান তার প্রধান লক্ষ্যবস্তু।
সম্প্রতি ইরান যুদ্ধ চলাকালে ইসরায়েলি ‘ঘনিষ্ঠ কণ্ঠস্বর’—বিশেষত জেরুজালেম পোস্ট ও নব্য রক্ষণশীল থিঙ্কট্যাংকগুলো প্রকাশ্যে ইরানের বিভাজনের আহ্বান জানিয়েছে। একটি সম্পাদকীয়তে ট্রাম্পকে আহ্বান জানানো হয়েছিল—‘শাসন পরিবর্তন গ্রহণ করুন… ইরানের বিভাজনের জন্য একটি মধ্যপ্রাচ্য জোট গঠন করুন…বিচ্ছিন্ন হতে আগ্রহী সুন্নি, কুর্দি ও বেলুচি অঞ্চলগুলোকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিন।’
ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অব ডেমোক্রেসিস যুক্তি দিয়েছিল যে ইরানের বহুজাতিগত গঠনকে একটি কৌশলগত দুর্বলতা হিসেবে বিবেচনা করে তা কাজে লাগানো উচিত। এমনকি পাকিস্তানও এখন এই দৃষ্টিভঙ্গির অংশ। ইসরায়েলের পক্ষের কেউ কেউ ‘পাকিস্তান থেকে মরক্কো পর্যন্ত’ অঞ্চলটিকে পুনর্গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে বলেছে।
এসব পরিকল্পনা আব্রাহাম চুক্তি বা শান্তিচুক্তি থেকে অনেক দূরে। এগুলো ইসরায়েলের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে স্বাভাবিক করার হাতিয়ার—ইসরায়েলকে অঞ্চলটির অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও প্রযুক্তির কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এ বিষয়ে ক্রমশ আরও খোলামেলা হয়ে উঠছেন। কেউ কেউ এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন, যেখানে ইসরায়েল একটি নতুন আঞ্চলিক ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু, প্রায় একটি ‘সাম্রাজ্য’ এবং স্পষ্ট করেছেন যে আরব রাষ্ট্রগুলোকে ইসরায়েলকে ‘মূল্য পরিশোধ’ করতে হবে, ইরান ও হামাসের মতো হুমকি থেকে সুরক্ষা দেওয়ার বিনিময়ে।
বার্তাটি স্পষ্ট—ইসরায়েল সহিংসতা সরবরাহ করবে আর প্রতিবেশীরা খাজনা দেবে। এটি কোনো অংশীদারত্ব নয়; এটি কূটনীতির ছদ্মবেশে আধিপত্য। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভেন উইটকফ আরও নরম ভাষায় বলেন, ‘যদি এই দেশগুলো একসঙ্গে কাজ করে, এটি ইউরোপের চেয়েও বড় হতে পারে…।’
কিন্তু এটি একীকরণ নয়, বরং অধিক্রমণ—অর্থনীতি, রাজনীতি এবং সার্বভৌমত্বের। এটি এমন একটি পরিকল্পনা, যেখানে ইসরায়েলের নেতৃত্বে একটি ব্লক গড়ে তোলা হবে, যা ইউরোপকে পাশ কাটিয়ে বৈশ্বিক শক্তিকেন্দ্রগুলোকে চ্যালেঞ্জ করবে।
আরও পড়ুন
ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ করে যে হুমকির মুখে পড়ল ইসরায়েল
০৪ জুলাই ২০২৫
ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ করে যে হুমকির মুখে পড়ল ইসরায়েল
তবে এখানেই ইসরায়েলের মারাত্মক ভুল হিসাব: যতই এটি প্রসারিত হয়, ততই এটি শত্রু তৈরি করে। ‘পেরিফেরি’তে মিত্র খোঁজা দিয়ে শুরু করে আর শেষে সেই ‘পেরিফেরি’কেই অস্তিত্বগত শত্রুতে পরিণত করে। ইরান, তুরস্ক, পাকিস্তান—একসময় দূরবর্তী প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল—এখন ইসরায়েলকে শুধু বিরক্তিকর নয়, সরাসরি হুমকি হিসেবে দেখে।
আরব বিশ্বজুড়ে, গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা, দামেস্কে ঘৃণ্য হামলা, বৈরুত, সানা ও তেহরানে হামলা—কোনো সম্মেলন যতটা পারত, তার চেয়ে বেশি হৃদয়কে একত্র করেছে। ইসরায়েল যত বেশি আঞ্চলিক সাম্রাজ্য হিসেবে আচরণ করে, অঞ্চলটি তত বেশি এটিকে ঔপনিবেশিক শক্তি হিসেবে দেখতে শুরু করে। আর ইতিহাস আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য টেকে না।
ইসরায়েল যা বিভাজন হিসেবে দেখে, তা শেষ পর্যন্ত রূপ নিতে পারে ঐক্যে এবং একটি যৌথ উপলব্ধিতে: প্রকৃত হুমকি ইরান, সিরিয়া বা এমনকি রাজনৈতিক ইসলাম নয়, বরং আধিপত্যের নীতি নিজেই। যে নীতিতে ইসরায়েল আজ যে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে, তার বিপরীতে অবশ্যই জবাব পাবে।
ইসরায়েল যে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে—যেখানে আধিপত্য আর বশ্যতা থাকবে—এই অঞ্চল তা কখনো মেনে নেবে না। কারণ, এ অঞ্চলের জনগণ এর আগে সব দেখেছে। তারা সাম্রাজ্যের পতন দেখেছে, ক্রুসেডারদের, ঔপনিবেশিকদের এবং স্বৈরশাসকদের কবর দিয়েছে। আর তারা শিখেছে, সত্যিকার নীতি হলো সেই নীতি, যা মানুষকে এক করে, আলাদা করে না।
ইসরায়েল মানচিত্র আঁকতে পারে, সংখ্যালঘুদের ব্যবহার করতে পারে, রাজধানীতে বোমা ফেলতে পারে, শিশুদের অনাহারে ফেলতে পারে; কিন্তু স্থায়িত্ব বোমা মেরে আদায় করা যায় না।
ইসরায়েল একটি অঞ্চলকে চিরদিনের জন্য নীরব করতে পারবে না। অন্যদের ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে নিজের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারবে না। কারণ, সেই ধ্বংসস্তূপ মনে রাখে। এই ভূমিতে, স্মৃতি কোনো ক্ষত নয়। স্মৃতি এক অস্ত্র।
মিডলইস্ট আই থেকে নেওয়া
সৌমায়া ঘান্নুশি একজন ব্রিটিশ তিউনিসীয় লেখক ও মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির বিশেষজ্ঞ। তাঁর লেখা দ্য গার্ডিয়ান এবং দ্য ইনডিপেনডেন্টে প্রকাশিত হয়েছে।
মিডল ইস্ট আই থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মনজুরুল ইসলাম