রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এখনো কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হয়নি। বরং বলা চলে, দিন দিন অবনতিই হচ্ছে। রোববার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, রাজধানীতে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, নগরবাসীর কাছে ছিনতাই এখন এক আতঙ্কের নাম। পুরান ঢাকা থেকে শুরু করে ধানমন্ডি, মগবাজার, মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া, মিরপুর, উত্তরা, গুলশানসহ নগরীর প্রায় সব স্থানেই প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় ছিনতাইয়ের ঘটনা। সন্ধ্যা নামলেই তৎপরতা বাড়ে ছিনতাইকারীদের। সড়কের ফুটপাতে চলার পথে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে নেওয়া হচ্ছে সর্বস্ব। যানবাহন থামিয়েও প্রকাশ্যে ছিনতাই করা হচ্ছে। ছিনতাইকারীদের চাকু বা খুরের আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে প্রাণও দিচ্ছেন অনেকে। তবে অবাক করার বিষয় হচ্ছে-রাজধানীর এসব ছিনতাইকারীর বেশির ভাগই পুলিশের তালিকাভুক্ত। এমনকি কে কোন এলাকায় থাকে, তার বিস্তারিত তথ্য রয়েছে পুলিশের কাছে। শুধু তাই নয়, এই মুহূর্তে ৯৭২ জন ছিনতাইকারী যে সক্রিয়-সেই তথ্যও আছে। এরপরও কেন ছিনতাইকারীদের অবাধ বিচরণ-এমন প্রশ্ন সংশ্লিষ্ট সবার।

পুলিশের একটি বিশেষায়িত ইউনিটের তৈরি তালিকা থেকে জানা যায়, অপরাধীদের বিরুদ্ধে একাধিক ছিনতাইয়ের মামলাও রয়েছে। এদের অনেকেই এক যুগের বেশি সময় ধরে নিয়মিত ছিনতাই করে আসছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক সূত্র জানিয়েছে, এসব ছিনতাইকারীর অনেককেই তিন থেকে চারবার গ্রেফতার করে কোর্টে চালান করা হলেও তারা জামিনে বের হয়ে ফের ছিনতাইয়ে যুক্ত হয়। ফলে অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হলেও এ অপকর্ম ঠেকানো যাচ্ছে না। এদিকে, আইনজীবীদের কাছ থেকে জানা গেছে, পুলিশের ত্রুটিপূর্ণ মামলার কারণে অনেক ছিনতাইকারী জামিন পেয়ে যায়। অনেক সময় দেখা যায়, পুলিশ আটক করে নতুন মামলা না দিয়ে পুরাতন মামলায় গ্রেফতার দেখায়। ফলে মামলার এজাহারের ঘটনার সঙ্গে ছিনতাইকারীর সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় না।

পালটাপালটি মত যাই থাকুক, রাজধানীসহ সারা দেশে কিশোর গ্যাংসহ নানা শ্রেণির অপরাধীদের যেভাবে দাপটের সঙ্গে অস্ত্র ব্যবহার করতে আমরা দেখছি, তাতে জনগণের নিরাপত্তা যে সংকটে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ফুটপাত দখল, আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক বিরোধ কিংবা সামান্য দ্বন্দ্ব-প্রায় সব ক্ষেত্রেই আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রের ব্যবহার বাড়ায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সাধারণ মানুষ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা না বাড়লে যে এ পরিস্থিতি অবনতি বৈ উন্নতি হবে না, তা বলাই বাহুল্য।

আমরা মনে করি, যে কোনো মূল্যে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার বিকল্প নেই। জুলাই বিপ্লবের পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পুরোপুরি কার্যকর করা যাচ্ছে না কেন, তা-ও খতিয়ে দেখতে হবে। প্রয়োজনে যৌথ বাহিনীর অভিযানের পরিধি বাড়াতে হবে। ঘটনা ঘটে গেলে নয়, অঘটনের আগেই তা ঠেকাতে গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে হবে। ব্যর্থতার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের কঠোর জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িত কেউ অপরাধীদের প্রশ্রয় দিচ্ছে কি না, কিংবা নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে কি না, সেদিকেও নজর দিতে হবে। রাজধানীসহ সারা দেশে হত্যা-খুন, ছিনতাইসহ সব ধরনের অপরাধ ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।

সূত্র, যুগান্তর