বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর একটি বড় অংশই বিদেশি ঋণনির্ভর। আমাদের দেশে এসব প্রকল্পে ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলোকে ‘দাতা সংস্থা’ এবং প্রদত্ত ঋণকে ‘সহায়তা’ হিসেবে উল্লেখ করার একটি চল রয়েছে। তবে বাস্তবে এসব ঋণের উদ্দেশ্য কতটা গ্রাহক-দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা, আর কতটা ঋণদাতা দেশের ব্যবসা সম্প্রসারণ ও রপ্তানি বৃদ্ধি, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

বিশ্বব্যাংক ও এডিবির মতো বহুপক্ষীয় আন্তর্জাতিক সংস্থার ঋণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বহুজাতিক করপোরেশনের ব্যবসা সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যটি সহজে বোঝা যায় না। তবে দ্বিপক্ষীয় ঋণের ক্ষেত্রে কেনাকাটা, পরামর্শক ও ঠিকাদার নিয়োগে বিভিন্ন শর্তের মধ্য দিয়ে মূল উদ্দেশ্যটি আড়ালে থাকে না।

২.

জিন সাতো ও ইয়াশিতামি শিমোমুরা সম্পাদিত দ্য রাইজ অব এশিয়ান ডোনারস (রাউটলেজ, ২০১৩) বই থেকে দেখা যায়, জাপানের বিদেশি ঋণ ও অর্থনৈতিক সহায়তার মূল লক্ষ্য শুরু থেকেই ছিল বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও কাঁচামালের নিরাপদ জোগান নিশ্চিত করা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী দুর্বল অর্থনৈতিক অবস্থায়ও জাপান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে প্রযুক্তিসহায়তা, ঋণ ও অনুদানের মাধ্যমে এমন সম্পর্ক গড়ে তোলে। এটা একদিকে জাপানি পণ্যের রপ্তানি বাজার তৈরি করে, অন্যদিকে সস্তা ও নির্ভরযোগ্য কাঁচামাল সরবরাহ নিশ্চিত করে। এ সহায়তার মাধ্যমে জাপানি কোম্পানিগুলো সরাসরি লাভবান হয়।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাণিজ্যিক স্বার্থ ছাড়াও ভূরাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের হাতিয়ার হয়ে ওঠে, বিশেষ করে শীতল যুদ্ধের পটভূমিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের উদ্দেশ্যে। এর অর্থ হলো, অন্য আরও অনেক দেশের মতো জাপানের বিদেশি ঋণনীতি মূলত বাণিজ্য, সম্পদের নিরাপত্তা ও ভূরাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের সমন্বিত কৌশল।

দ্য রাইজ অব এশিয়ান ডোনারস বই থেকে দেখা যায়, চীনের বৈদেশিক ঋণ ও সহায়তা শুরুতে আদর্শিক ও ভূরাজনৈতিক লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠলেও ১৯৮০ সালের পর সংস্কারের পর অর্থনৈতিক স্বার্থ নিশ্চিতে মনোযোগী হয়ে ওঠে। অনুদান ও সুদমুক্ত ঋণের বদলে বেশি গুরুত্ব পায় ‘কনসেশনাল’ লোন, যা সরাসরি চীনা পণ্য ও সেবার সঙ্গে যুক্ত থাকে।

১৯৯৪ সালে এক্সিম ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই নীতি আরও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায় এবং ‘গোয়িং গ্লোবাল’ কৌশলের অংশ হিসেবে চীনা কোম্পানিগুলোর বিদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণের হাতিয়ার হয়ে ওঠে। ফলে চীনের বৈদেশিক ঋণনীতি ক্রমে বাণিজ্যিক লাভ, রপ্তানি বৃদ্ধি ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত হয়ে যায়।

স্বার্থের সংঘাত ও প্রতিযোগিতাহীনতার ঘটনা শুধু জাপানি ঋণ প্রকল্পের ক্ষেত্রেই নয়; চীন, ভারত, রাশিয়া ইত্যাদি দেশের ঋণ প্রকল্পের ক্ষেত্রেও দেখা যায়।

অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত ছিল বিগত সরকারের আমলে নেওয়া বিদেশি ঋণনির্ভর উন্নয়ন প্রকল্পগুলো পুনর্মূল্যায়ন করা ও সেই সঙ্গে নতুন প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে ঋণদাতা সংস্থা নয়, দেশের স্বার্থকে গুরুত্ব দেওয়া।

৩.

প্রশ্ন উঠতে পারে, ঋণদাতা দেশের উদ্বৃত্ত পুঁজি নিজ দেশের ব্যবসা সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে যদি অন্য দেশে নিয়োজিত হয়, তাহলে সমস্যা কোথায়? সাধারণভাবে কোনো দেশের উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় পুঁজি অন্য দেশ থেকে ঋণ হিসেবে গ্রহণ করার মধ্যে কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়, বরং উভয়ের জন্যই লাভজনক হওয়ার কথা।

কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, ঋণদাতা দেশের ব্যবসা সম্প্রসারণ অধিক গুরুত্ব পাওয়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্প গ্রহণে ঋণগ্রহীতা দেশের স্বার্থের চেয়ে ঋণদাতা দেশের স্বার্থ প্রাধান্য পায়। ঋণের সুদ বেশি হয়, ঋণ পরিশোধের সময়ও কম পাওয়া যায়।

আরও দেখা যায়, যে দেশ ঋণ দিচ্ছে, সেই দেশের সংস্থাই প্রকল্পের পরিকল্পনা করছে, সম্ভাব্যতা যাচাই করছে, পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে, আবার ঠিকাদার হিসেবে প্রকল্প বাস্তবায়নও করছে। প্রকল্পের বেশির ভাগ কেনাকাটাও হচ্ছে ঋণদাতা দেশ থেকে। এর ফলে প্রকল্পের লাভ–লোকসান যাচাই যেমন নিরপেক্ষভাবে হয় না, তেমনি প্রকল্পের খরচ অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। এতে ঋণদাতা দেশের করপোরেশনগুলো লাভবান হলেও প্রকল্পের উচ্চ ব্যয় ও যথাযথ সম্ভাব্যতা যাচাই না করার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঋণগ্রহীতা দেশের জনগণ।

উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পের কথাই ধরা যাক। মেট্রোরেল নির্মাণ করা হচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (জাইকা) ঋণে। নির্মাণকাজের দরপত্র দলিল তৈরি ও মূল্যায়নে মূল ভূমিকা পালন করছে জাপানি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিপ্পন কোই। ঋণ ও দরপত্রের শর্ত এমনভাবে দেওয়া হয়, যাতে জাপানি কোম্পানির জন্য কাজ পাওয়া সহজ হয়, যেন অন্য কোনো দেশের কোম্পানি প্রতিযোগিতাই করতে না পারে।

যেমন এমআরটি-১ প্রকল্পের দরপত্রে টানেল বা পাতালপথ নির্মাণে ‘ওয়ান পাস জয়েন্ট’ পদ্ধতি প্রয়োগের শর্ত দেওয়া হয়েছে, যা জাপানি ঠিকাদারের জন্য সুবিধাজনক। সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের জাপানি স্টিল ব্যবহার করার শর্ত দেওয়া হয়েছে, যা মূলত জাপানের তিনটি কোম্পানি উৎপাদন করে। অন্য দেশের একই মানের স্টিল ব্যবহার করতে হলে ঠিকাদারকে অবশ্যই জাপানি রোড অ্যাসোসিয়েশন থেকে অনুমোদন নিতে হবে। (শুধু জাপানি ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ, বাড়তি ব্যয়ের আশঙ্কা, প্রথম আলো, ১৪ আগস্ট ২০২৫)

এসব শর্তের কারণে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করেও জাপানের বাইরের কোনো ঠিকাদার পাওয়া যায় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঘুরেফিরে জাপানি দুই-তিনটা ঠিকাদার চূড়ান্ত দরপত্রে অংশ নেন। তারা যে দর প্রস্তাব করে, সেটিই মেনে নিতে হয়। এর ফলে জাইকার ঋণে নির্মিত মেট্রোরেলের নির্মাণ ব্যয় সমসাময়িক কালে আশপাশের অন্যান্য দেশের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি হচ্ছে।

যেমন ঢাকার প্রথম মেট্রো এমআরটি-৬ নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। অথচ ভারতে উড়ালপথে এ ধরনের মেট্রোরেল নির্মাণে ব্যয় প্রতি কিলোমিটারে ১৫০ কোটি টাকা আর পাতালপথে সর্বোচ্চ ৪৫০ কোটি টাকা।

বিশ্বের অন্যান্য দেশেও মেট্রোরেল নির্মাণ ব্যয় বাংলাদেশের চেয়ে কম। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) বিশ্লেষণ অনুসারে, প্রতি কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণে তুরস্কে ৬৭২ কোটি টাকা, আইভরিকোস্টে ৪৪৮ কোটি টাকা, দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে ৭৮৪ কোটি টাকা, থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ৭৪০ কোটি টাকা ব্যয় হয়।

জাইকার ঋণের শর্তে যেভাবে ঢাকার পরবর্তী দুটি মেট্রোরেল লাইন-১ ও লাইন-৫–এর জন্য ঠিকাদার নির্ধারণ করা হচ্ছে, তাতে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় ৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এটা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় তো বেশি বটেই, এমনকি বিগত আওয়ামী লীগ আমলে নির্মিত এমআরটি-৬–এর ব্যয়েরও প্রায় দ্বিগুণ। (কমলাপুর-বিমানবন্দর ও সাভার-ভাটারা পথে মেট্রোর ব্যয় দাঁড়াবে ২ লাখ কোটি টাকা, কী ভাবছে সরকার, প্রথম আলো, ২৮ জুলাই ২০২৫)

প্রায় একই রকম ভূপ্রকৃতির দেশ ভারতও বিদেশি ঋণে অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। কিন্তু ঋণে এমন কোনো শর্ত তারা গ্রহণ করে না, যা ঠিকাদার নিয়োগে প্রতিযোগিতা ক্ষুণ্ন করে। এর ফলে দেখা যায়, বিদেশি ঠিকাদারদের বদলে অনেক ক্ষেত্রে সে দেশের ঠিকাদারেরাই কাজ করেন, এতে ব্যয়ও কম হয়।

যেমন জাইকার ঋণে ভারতের বিহার রাজ্যের পাটনায় মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পের কাজের মূল ঠিকাদার সব ভারতীয়। পাতালপথের এই মেট্রো নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় ৪৫০ কোটি টাকা। অথচ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ঋণদাতা সংস্থার অন্যায্য শর্ত মেনে নেওয়ার কারণে মারাত্মক স্বার্থের সংঘাত তৈরি হয়। যে দেশের সংস্থা পরিকল্পনা তৈরি করে, সে দেশের সংস্থাই ঋণ দেয়, ফিজিবিলিটি স্টাডি করে এবং পরামর্শক ও ঠিকাদার হিসেবে কাজ করে।

৪.

জাইকার বিরুদ্ধে স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ আরও অনেক প্রকল্পের ক্ষেত্রেই রয়েছে। বাংলাদেশের পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান ২০১৬ তৈরি হয়েছে জাইকার পৃষ্ঠপোষকতায়। এরপর সেই মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী যে কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র, সমুদ্রবন্দর ও এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়, সেগুলোর কাজও পেয়েছে বিভিন্ন জাপানি কোম্পানি।

স্বার্থের সংঘাত ও প্রতিযোগিতাহীনতার ঘটনা শুধু জাপানি ঋণ প্রকল্পের ক্ষেত্রেই নয়, চীন, ভারত, রাশিয়া ইত্যাদি দেশের ঋণ প্রকল্পের ক্ষেত্রেও দেখা যায়।

চীনা ঋণের প্রকল্পে চীনা ঠিকাদার কাজ করেন, চীনের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়, প্রকল্পের প্রকৌশলী, পরামর্শকও থাকে চীনের। যেহেতু কোনো প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ঠিকাদার ঠিক করা হয় না, তাই প্রকৃত খরচের তুলনায় অনেক বেশি খরচ হয়।

একসময় চীনের ঋণদাতা ব্যাংকই সরাসরি ঠিকাদার নির্ধারণ করে দিত। এরপর ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে সীমিত পরিসরে দরপত্র বা লিমিটেড টেন্ডারিং মেথডের (এলটিএম) মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগের বিষয়ে চীন রাজি হয়। তবে এ পদ্ধতিতেও যথাযথ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত হয় না। কারণ, দরপত্রে শুধু চীনা ঠিকাদারেরা অংশ নিতে পারেন। (কঠিন শর্তে আরও চীনা ঋণ নিচ্ছে সরকার, প্রথম আলো, ২৭ মার্চ ২০২৩)

ভারতের লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) মাধ্যমে নেওয়া প্রকল্পের ক্ষেত্রেও এলটিএম পদ্ধতিতে শুধু ভারতীয় ঠিকাদার ঠিক করা হয়। সেই সঙ্গে প্রকল্পের ৭৫ শতাংশ (কিছু ক্ষেত্রে শর্ত সাপেক্ষে ৬৫ শতাংশ) পণ্য বা সেবা ভারত থেকে ক্রয় করতে হয়। (ঋণ আর বাণিজ্যে এখন বড় অংশীদার ভারত, প্রথম আলো, ২৩ নভেম্বর ২০২৩)

ভারতীয় ঋণে বাংলাদেশের সড়ক ও রেলপথে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে কতগুলো বাংলাদেশের নিজস্ব প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিয়ে গ্রহণ করা হয়েছিল, আর কতগুলো ভারতের ট্রানজিট-ট্রান্সশিপের মতো কৌশলগত স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

এই প্রশ্ন চীন, জাপান কিংবা রাশিয়ার ঋণে নেওয়া প্রকল্পের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সারা বিশ্বে যখন নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়ছে, তখন দেখা গেল বাংলাদেশে ভারত, চীন, জাপান আর রাশিয়ার ঋণে কয়লা কিংবা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো দূষণকারী ও বিপজ্জনক প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা তৈরি করা হচ্ছে। এতে ঋণদাতা দেশগুলোর প্রযুক্তি ও পরামর্শক সেবা বিক্রি নিশ্চিত হলেও বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে সময়ের তুলনায় পিছিয়ে পড়েছে।

৫.

ওপরের উদাহরণগুলো থেকে স্পষ্ট, বিদেশি ঋণনির্ভর মেগা প্রকল্প মানেই উন্নয়ন—এ ধারণা সঠিক নয়। প্রকল্পের ভালো–মন্দ যাচাই করতে হবে তার অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত প্রভাবের ওপর ভিত্তি করে। বিদেশি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা বা পরামর্শে নয়, অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে জনস্বার্থকে মাথায় রেখে।

অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত ছিল বিগত সরকারের আমলে নেওয়া বিদেশি ঋণনির্ভর উন্নয়ন প্রকল্পগুলো পুনর্মূল্যায়ন করা ও সেই সঙ্গে নতুন প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে ঋণদাতা সংস্থা নয়, দেশের স্বার্থকে গুরুত্ব দেওয়া।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিদেশি ঋণনির্ভর মেগা প্রকল্পের বদলে জনগুরুত্বপূর্ণ ছোট প্রকল্প নেওয়ার কথা বললেও বাস্তবে আগের মতোই বিদেশি ঋণনির্ভর মেগা প্রকল্প গ্রহণ অব্যাহত আছে। জাইকার ঋণে ব্যয়বহুল কক্সবাজার-মাতারবাড়ী সড়ক, বিশ্বব্যাংকের ঋণে বে টার্মিনাল প্রকল্প, পিপিপি পদ্ধতিতে ভোলা-বরিশাল সেতু এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ঋণে কালুরঘাট রেল কাম রোড সেতু নির্মাণ প্রকল্প তারই উদাহরণ।

এসব প্রকল্প হয়তো অগুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু এখনই অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য কি না, স্বাস্থ্য বা শিক্ষা খাতে বিনিয়োগের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কি না, ঋণের শর্ত দেশের অনুকূলে কি না, অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে কি না—এগুলো পুনর্মূল্যায়ন করার প্রয়োজন রয়েছে। যেমন পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন পাঁচ হাজার কোটি টাকা খরচ করে ঢাকায় পাবলিক বাসব্যবস্থা চালু করা এ মুহূর্তে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, নাকি লাখো কোটি টাকা খরচ করে নতুন মেট্রোরেল নির্মাণ।

বাস বা মেট্রোরেল বা অন্য যে প্রকল্পই নেওয়া হোক, সেটার বাস্তবায়নে অবশ্যই উন্মুক্ত দরপত্র ও যথাযথ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যান্য দেশের তুলনায় অস্বাভাবিক বাড়তি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আর সিদ্ধান্তগুলো নিতে হবে দেশীয় বিশেষজ্ঞ ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে, যাতে উন্নয়নের নামে দেশের জনগণের অর্থ শুধু অন্য দেশের ব্যবসা সম্প্রসারণে ব্যয় না হয়।

● কল্লোল মোস্তফা লেখক ও গবেষক

* মতামত লেখকের নিজস্ব

সূত্র, প্রথম আলো