দেশে কোভিড-১৯ ভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে বুধবার প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য বাতায়নে করোনা বিষয়ক কলের সংখ্যা হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। মঙ্গলবার ১০১জনের করোনা পরীক্ষায় ১৩জনের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এর পরবর্তী ২৪ ঘন্টায় ১০৭ জনের পরীক্ষায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১০জন। ঈদের দুদিন আগে করোনা ভাইরাসে একজন বয়স্ক রোগীর মৃত্যুর সংবাদে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ নড়েচড়ে বসেছে। গত দেড়বছরে প্রথম করোনায় রোগীর মৃত্যুর ঘটনা, করোনা সংক্রমণ সন্দেহে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য বাতায়নে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়া এবং শনাক্তের হার বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে জনমনে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের তরফ থেকে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে সীমিত পরিসরে করোনা পরীক্ষা চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদফতর ১১ দফা নির্দেশনাও জারি করেছে। নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে, জনসমাগম যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা এবং রাস্তায় ও জনসম্মুখে মাস্ক ব্যবহার করা, হাঁচি-কাশির সময় বাহু বা টিস্যু দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখা, সাবান বা সেনিটাইজার দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোয়া, অপরিচ্ছন্ন হাতে নাকে-মুখে হাত না দেয়া, আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা, জ্বর কাশি ও স্বাসকষ্টে আক্রান্ত হলে সুস্থ্য না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে থাকা, প্রয়োজনে নিকটস্থ হাসপাতালে ভর্তি কিংবা স্বাস্থ্য বাতায়নে যোগাযোগের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এসব নির্দেশনা নতুন কিছু নয়। ২০২০ সালে কোভিড-১৯ সংক্রমণের শুরুতেই প্রায় একই ধরণের নির্দেশনা জারি করা হয়েছিল।
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হার যদিও এখনো উদ্বেগজনক নয়। তবে প্রতিবেশি দেশগুলোতে হঠাৎ করে সংক্রমণের হার অনেক বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশকে বাড়তি সর্তকতা অবলম্বন করতে হচ্ছে বলে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে বলা হয়েছে। বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মো. আবু জাফর সংবাদ সম্মেলন ডেকে প্রতিবেশি ৩টি দেশে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি এবং আইসিডিডিআরবি’র সাম্প্রতিক গবেষণায় করোনার দুটি সাব-ভেরিয়েন্ট পাওয়া গেছে। যা ওমিক্রন জেএন-১ এর উপশাখা এক্সএফজি এবং এক্সএফসি নামে অভিহিত হচ্ছে। এসব ভ্যারিয়েন্টের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে এখনো যথেষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। ভারত, থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়ায় আকষ্মিকভাবে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশকে বাড়তি সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। এসব দেশে ভ্রমণ এবং সেখান থেকে আগত যাত্রী ও পর্যটকদের নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও প্রয়োজনীয় কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা আবশ্যক হয়ে পড়েছে। সেই সাথে দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবায় করোনার যে কোনো সম্ভাব্য প্রাদুর্ভাব মোকাবেলার উপযোগী করে তোলার প্রস্তুতি থাকতে হবে। স্বাস্থ্য বিভাগ ও হাসপাতালগুলোর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির সাথে সাথে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। বয়স্ক ও জটিল রোগীদের বাড়তি সর্তকতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। অতীতের অভিজ্ঞতা আলোকে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ ও করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোকে প্রয়োজনীয় কিট, সরঞ্জামাদির সরবরাহ নিশ্চিত করতে আগেই কার্যকর প্রস্তুতি নিতে হবে।
মহামারি আকারে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়া এবং লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু সাম্প্রতিক বিশ্বের এক নতুন অভিজ্ঞতা। লক-ডাউনে জনজীবন ও অর্থনীতির চাকা থমকে যাওয়ার সে বাস্তবতা থেকে এখনো বিশ্ব অর্থনীতি পুরোপুরি সেরে উঠতে পারেনি। বল্গাহীন লুটপাট, দুর্নীতি ও অর্থপাচারের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে খাদের কিনারে রেখে পতিত স্বৈরাচার পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের অর্থনীতিকে তার সম্ভাবনার জায়গায় টেনে তোলার উপযোগি করা বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। এহেন বাস্তবতায় করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট এবং সংক্রমণ বৃদ্ধির যে কোনো আশঙ্কা উদ্বেগজনক। তবে সীমিত সম্পদ ও সামর্থ্যের মধ্যেও একটি বৈশ্বিক মহামারি মোকাবেলায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগ প্রসংশনীয় সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। দুর্নীতি, ভারতের অসহযোগিতা, এবং আমলাতান্ত্রিক সময়ক্ষেপনের বিষয়গুলো না থাকলে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় বাংলাদেশ আরো ভালো দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারতো। ভারত, থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়ার মত দেশগুলোতে নতুন করে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে যথাযথ লজিস্টিক সাপোর্ট নিয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে। তার আগে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, জনসচেতনতা। বৈশ্বিক মহামারির প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় শুধুমাত্র সরকারের পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে নাগরিক সমাজের সচেতন অংশগ্রহণ জরুরি। আমাদের যেন আর কোনো লক-ডাউন কিংবা বৈশ্বিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতার সম্মুখীন হতে না হয়, সেদিকে আগেই খেয়াল রাখতে হবে। ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে জনসচেতনতা এবং স্বাস্থ্য বিধি পালনের কোনো বিকল্প নেই। করোনা সংক্রমণ এখনো উদ্বেগজনক হয়ে না উঠলেও যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি, বিকল্প ব্যবস্থা ও নীতি নির্ধারণ করা জরুরি। বিশেষত বিমান বন্দর এবং স্থলবন্দরগুলোতে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ সম্ভাব্য উদ্যোগের প্রস্তুতি রাখতে হবে। বিগত করোনা মহামারির অভিজ্ঞতার আলোকে সাফল্য, ব্যর্থতাসহ আগামির প্রস্তুতি ও পরিষেবা নিশ্চিত করতে হবে।