এখনকার বাংলাদেশ এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রশংসনীয় হলেও স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও শিক্ষার মতো মানব উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে বড় ধরনের ঘাটতি স্পষ্ট।

এই ঘাটতি শুধু ব্যক্তির সম্ভাবনাই নয়, জাতির সার্বিক সমৃদ্ধি ও সামাজিক ন্যায়বিচারের পথেও বড় বাধা। এমন এক সংকটকালেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান রাষ্ট্র মেরামতের জন্য একটি সুস্পষ্ট, বলিষ্ঠ ও বাস্তবভিত্তিক রূপরেখা পেশ করেছেন।

তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির ৩১ দফার ‘স্টেট রিপেয়ার ফ্রেমওয়ার্ক’ শুধু সমস্যা চিহ্নিতই করেনি, তা সমাধানের জন্য একটি সমন্বিত কৌশলও দাঁড় করিয়েছে।

তারেক রহমানের নেতৃত্ব মূলত শাসনব্যবস্থার এক নতুন ধারা সূচিত করছে, যেখানে অবকাঠামো নির্মাণকেই প্রধান উন্নয়ন নির্দেশক হিসেবে দেখার পরিবর্তে মানবিক সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন, ‘আমাদের কম খরচে বেশি অর্জন করতে হবে।’

তারেক রহমানের এ দর্শনের কেন্দ্রে রয়েছে জনগণের জীবনমান, সক্ষমতা এবং মর্যাদা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিনিয়োগ বাড়ানো। তবে এই সব পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে তখনই, যখন জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত হবে এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্য দিয়েই তারেক রহমান ও বিএনপির সামনে দরজা খুলবে বাংলাদেশের রূপান্তরের।

স্বাস্থ্য খাতে তারেক রহমানের ঘোষণা অত্যন্ত সুস্পষ্ট—‘কেউ যেন চিকিৎসা না পেয়ে মারা না যায়’। এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বিএনপি সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা দিতে চায়, বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য।

শিক্ষা খাতে তারেক রহমানের অঙ্গীকার—‘ড্রপআউট শব্দটিকে জাদুঘরে পাঠাতে হবে’। অর্থাৎ, আর কোনো শিশু যেন স্কুল থেকে ঝরে না পড়ে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, অষ্টম শ্রেণি থেকে শিক্ষার্থীরা চাইলে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ট্র্যাকে যেতে পারবে, যাতে উচ্চশিক্ষায় না গিয়েও তারা কর্মসংস্থানের উপযুক্ত দক্ষতা অর্জন করতে পারে।

পরিকল্পনার মধ্যে আছে—একটি জাতীয় ইলেকট্রনিক হেলথ কার্ড চালু করা, যা দিয়ে সব নাগরিক প্রাথমিক চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ বিনা মূল্যে পাবে। সঙ্গে থাকবে ইলেকট্রনিক মেডিকেল রেকর্ডস সিস্টেম, যা ভুল রোগনির্ণয় কমাবে, রেফারেল সহজ করবে এবং স্বাস্থ্য ব্যয়ের ধাক্কা থেকে মানুষকে রক্ষা করবে।

জাতীয় স্বাস্থ্য হিসাব অনুযায়ী, এখনো ৭৩ শতাংশ স্বাস্থ্য খরচ মানুষকে নিজেদের পকেট থেকেই দিতে হয়—এ বাস্তবতা বদলানো জরুরি।

পুষ্টি খাতে তারেক রহমানের ঘোষিত লক্ষ্য—‘সব নারী ও শিশুকে পুষ্টিহীনতা থেকে মুক্ত করতে হবে’। বাংলাদেশে এখনো শিশুদের ২৪ শতাংশ খর্বকায় এবং প্রজননক্ষম নারীদের প্রায় ২৯ শতাংশ রক্তস্বল্পতায় ভোগেন। তাই স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা—এই তিনটিকে একসঙ্গে নিয়ে সমন্বিত পুষ্টি নীতি বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে।

এর আওতায় বাড়িতে বাড়িতে বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সাপ্লিমেন্টেশন ও খাবারে পুষ্টি বাড়ানোর কার্যক্রম সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এই বহুমাত্রিক উদ্যোগের লক্ষ্য—পুষ্টিহীনতার আন্তপ্রজন্মগত শৃঙ্খল ভেঙে একটি সুস্থ-সবল জনশক্তি গড়ে তোলা।

শিক্ষা খাতে তারেক রহমানের অঙ্গীকার—‘ড্রপআউট শব্দটিকে জাদুঘরে পাঠাতে হবে’। অর্থাৎ, আর কোনো শিশু যেন স্কুল থেকে ঝরে না পড়ে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, অষ্টম শ্রেণি থেকে শিক্ষার্থীরা চাইলে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ট্র্যাকে যেতে পারবে, যাতে উচ্চশিক্ষায় না গিয়েও তারা কর্মসংস্থানের উপযুক্ত দক্ষতা অর্জন করতে পারে।

মাধ্যমিক পর্যায়েই ডিজিটাল শিক্ষা ও বিদেশি ভাষা শেখার সুযোগ রাখা হবে, যাতে যুবসমাজকে বৈশ্বিক শ্রমবাজারের জন্য প্রস্তুত করা যায়।

তারেক রহমানের নেতৃত্বের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো—সরকারি সেবা ও নীতিনির্ধারণে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও দক্ষতা নিশ্চিত করার অনমনীয় অঙ্গীকার। তিনি বিভিন্ন দেশের সেরা উদাহরণ থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশ উপযোগী নীতিমালা তৈরি করছেন।

এ কাজে দেশের অভ্যন্তর ও প্রবাসের বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞদের এক বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়েছে, যাঁরা নীতিমালা তৈরিতে সরাসরি যুক্ত। তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতিটি খাতে সংশ্লিষ্ট পেশাদারেরা নীতিমালার বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন, যাতে সর্বোত্তম ফল নিশ্চিত হয়।

শেষ পর্যন্ত, বাংলাদেশের সমৃদ্ধি, সমতা ও আধুনিক জাতি হিসেবে গড়ে ওঠা নির্ভর করছে মানবসম্পদে বিনিয়োগের দক্ষতার ওপর। তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির ৩১ দফার আলোকবর্তিকা ধরে বাংলাদেশ তার মানব উন্নয়নের ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে পারে।

যদি এই রূপরেখা সততা ও তৎপরতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে বাংলাদেশ এক নতুন সামাজিক বাস্তবতায় প্রবেশ করবে—যেখানে কেউ পিছিয়ে পড়বে না। এটি হবে নারীবান্ধব ও তরুণবান্ধব একটি দেশ, যেখানে প্রতিটি নারী ও তরুণের জন্য থাকবে সাফল্যের সুযোগ, উন্নয়নের অবকাশ এবং দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে অবদান রাখার সমান অধিকার।

ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বিশ্বব্যাংকের সাবেক ঊর্ধ্বতন স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কর্মকর্তা

*মতামত লেখকের নিজস্ব

সূত্র, প্রথম আলো