জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের জন্য প্রস্তাবিত দুই-রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধান নিয়ে গত ২৮ জুলাই বৈঠকে বক্তব্য দেন মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
জি-৭ ভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ তিন দেশ—কানাডা, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে।
এর মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া রাষ্ট্রের সংখ্যা ১৫০–এ দাঁড়াবে। প্রশ্ন উঠছে, এ স্বীকৃতির বাস্তবিক অর্থ কী? এতে আসলে ফিলিস্তিনের কতটুকু লাভ হবে? এর আগে ১৪৭টি রাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও তা ৭৭ বছর ধরে ফিলিস্তিন একটি পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে দাঁড়াতে পারেনি।
বহু দেশের স্বীকৃতি সত্ত্বেও ফিলিস্তিন কিংবা গাজা উপত্যকার নিরীহ সাধারণ মানুষের ওপর ইসরায়েলের অব্যাহত আগ্রাসন কখনোই থামেনি। এমনকি বর্তমানে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল সৃষ্ট চলমান অবরোধ সেখানে দুর্ভিক্ষ রূপ লাভ করেছে। ওষুধ, খাদ্য ও জরুরি সহায়তা সেখানে পৌঁছানো একপ্রকার অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
আজ পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় হাজার শিশু, নারী, বৃদ্ধ ও নিরস্ত্র সাধারণ নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, দুই বছরে গাজায় অন্তত ৩৫ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একটি বড় অংশ নারী ও শিশু। ১৯৪৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত এই অঞ্চলে ইসরায়েলের নৃশংসতায় প্রায় দেড় লাখ ফিলিস্তিনি মানুষ নিহত হয়েছেন। হাজার হাজার মানুষকে হতে হয়েছে পঙ্গু আহত ও উদ্বাস্তু। লাখ লাখ ফিলিস্তিনি হয়েছেন শরণার্থী।
বিশ্লেষকের মতে, জি-৭ ভুক্ত উল্লিখিত রাষ্ট্রগুলোর স্বীকৃতি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য অবশ্যই কূটনৈতিক গুরুত্ব বহন করে। তবে সেটি কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
অনেক বিশ্লেষক বলেছেন, ফিলিস্তিনির পক্ষে স্বীকৃতি দেওয়া আগের ১৪৭ দেশের মতো এই তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতিও একধরনের প্রতীকী। এ প্রতীকী স্বীকৃতি ফিলিস্তিনিদের প্রকৃত স্বাধীনতা কতটুকু আনতে পারবে, তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে।
ফিলিস্তিনের পক্ষে স্বীকৃতি দেওয়া রাষ্ট্রের সংখ্যা দিন দিন হয়তো আরও বাড়বে, তবে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যর ঐতিহাসিক ভূমিকার জন্য এ স্বীকৃতি অনেকটা ‘পাপের প্রায়শ্চিত্ত’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, মধ্যপ্রাচ্যের এ সংকটের পেছনে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক নীতি এবং সমর্থনই মূলভাবে দায়ী।
অটোমান সাম্রাজ্যের বিলুপ্তি ও ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের তৎপরতা
ফিলিস্তিন ছিল অটোমান সাম্রাজ্যের (১২৯৯-১৯২২) একটি প্রদেশ। শত শত বছর ধরে খ্রিষ্টান জনগণ ও মুসলমানরা ফিলিস্তিনে পাশাপাশি বসবাস করতেন। সেখানে ছোট একটি ইহুদি গোষ্ঠীও বাস করত।
১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত ও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল অটোমান সাম্রাজ্য জার্মানির পক্ষে যুদ্ধে যোগ দিলে মিত্রশক্তির টার্গেটে পরিণত হয়। এ সময়ে অটোমানদের আরব প্রদেশগুলোতে ধীরে ধীরে আরব জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটে।
আরবরা অনুভব করে তুর্কিরা তাদের ওপর শাসন করছে এবং নিজেদের সংস্কৃতি ও ভাষা উপেক্ষা করছে। সুযোগটি ব্রিটিশরা কাজে লাগায় এবং আরব ও তুর্কিদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করে।
ব্রিটিশরা আরবদের স্বপ্ন দেখায়, আরবরা অটোমানদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে যুদ্ধ শেষে আরবদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনে ব্রিটেন সহায়তা করবে {ম্যাকমোহন-হুসেইন চিঠিপত্র (১৯১৫-১৬)}। আরবরা ব্রিটিশদের এই ফাঁদে পা দেয়। ঠিক একই সময়ে ব্রিটেন ফ্রান্সের সঙ্গে একটি গোপন চুক্তি করে, ইতিহাসে যেটি সাইক্স-পিকো চুক্তি (১৯১৬) হিসেবে পরিচিত।
অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে এ চুক্তি সম্পন্ন হয়। এ চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটেন ও ফ্রান্স ঐকমত্যে পৌঁছে যে যুদ্ধোত্তর অটোমান ভূখণ্ডকে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেবে। ব্রিটেন পাবে ইরাক ও ফিলিস্তিন আর ফ্রান্স পাবে সিরিয়া, লেবানন, দক্ষিণ-পূর্ব আনাতোলিয়া (তুরস্ক) ও মসুলের (ইরাক) কিছু অংশ।
এ চুক্তিতে রাশিয়া পরে যুক্ত হয় এবং তারা পায় কনস্টান্টিনেপল (ইস্তাম্বুল), আর্মেনিয়া ও কুর্দিস্তানের কিছু অংশ। সাইক্স-পিকো চুক্তি অনুযায়ী, ফিলিস্তিনকে আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণে রাখার সিদ্ধান্ত হয়। যদিও তা পরে ব্রিটেন দখল করে নেয়।
রাশিয়া পরে এ চুক্তির বিষয় ফাঁস করে দিলে বিষয়টি বিশ্ববাসীর নজরে আসে। ওই বছরেই আরবরা ব্রিটিশদের সহায়তায় বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং আরবরা মক্কা, জেদ্দা, দামেস্ক ও অন্যান্য শহর দখল করে নেয়।
এর পরের বছর ১৯১৭ সালে ব্রিটেনের তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব আর্থার বেলফোর ঘোষণা দেন যে ব্রিটেন ফিলিস্তিনে ‘ইহুদি জনগণের একটি জাতীয় আবাসভূমি’ প্রতিষ্ঠাকে সমর্থন করে। এর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের পথ সুগম হয়।
এখানে ব্রিটিশরা একসঙ্গে কয়েকটি কাজ করে। তারা আরবদের স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি দেয়, ইহুদিদের জন্য আবাসভূমির ঘোষণা করে এবং ফ্রান্সের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের জমি ভাগাভাগির বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে এসব ঘটনা একসঙ্গে ঘটে। ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অটোমান সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ে (আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত হয় ১৯২২ সালে), সাইক্স-পিকো চুক্তি এবং পরে সেভ্রেস (১৯২০) চুক্তির মাধ্যমে অটোমান সাম্রাজ্যের অবশিষ্ট অংশ বিভক্ত হয়। কিন্তু আরবদের সঙ্গে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ব্রিটেন স্বাধীন আরব রাষ্ট্র বানানোর কোনো উদ্যোগ নেয় না, অর্থাৎ ব্রিটেনের কাছ থেকে আরবরা ধোকা খায়। মাঝখান দিয়ে ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র বানানোর সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।
ব্রিটিশ ম্যান্ডেট ও ইহুদি রাষ্ট্র তৈরির চূড়ান্ত রূপ
১৯২০ সালে লিগ অব ন্যাশনসের মাধ্যমে ব্রিটেন ফিলিস্তিনে ম্যান্ডেট গ্রহণ করে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে শাসন করার বৈধতা পায়। এ ম্যান্ডেটের একমাত্র ভিত্তি ছিল বেলফোর ঘোষণা (১৯১৭)। ব্রিটেন ফিলিস্তিনে ম্যান্ডেট পাওয়ার পর এ সময়ে রাশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইহুদিরা জাহাজে করে দলে দলে ফিলিস্তিনে আসা শুরু করে।
এককথায় ফিলিস্তিনে ইহুদিদের ঢল নামে। ফিলিস্তিনি আরবরা বুঝতে পারে, তাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে। বিষয়টা আরব জনগণের মধ্যেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় এবং ক্ষোভ দেখা দেয়। ফলে ফিলিস্তিনি আরবরা বিদ্রোহ (১৯৩৬-১৯৩৯) শুরু করে।
এ সময় পর্যন্ত ব্রিটেন ফিলিস্তিনিদের জাতি হিসেবে ন্যূনতম অধিকারের প্রতি কোনো সম্মান প্রদর্শন করেনি।
ফিলিস্তিনি আরবরা ব্রিটিশ সেনা ও ইহুদি নাগরিকদের হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। কিন্তু ব্রিটিশ সেনারা ফিলিস্তিনি আরবদের কঠোর হাতে দমন করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৭ সালে পিল কমিশন গঠন করে।
সেখানে ফিলিস্তিনকে আরব ও ইহুদি অঞ্চলে দুই ভাগে ভাগ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু ফিলিস্তিনি আরব ও ইহুদি উভয়ই এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এরই মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-১৯৪৫) শুরু হয়। এ যুদ্ধে হিটলারের নাৎসি বাহিনী দ্বারা লাখ লাখ ইহুদি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় ও ইহুদিদের প্রতি আন্তর্জাতিক সহানুভূতি বাড়ে।
যুদ্ধ শেষে দাবি উঠতে থাকে বেঁচে যাওয়া ইহুদিদের নিয়ে আলাদা একটি ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান ইহুদিদের রাষ্ট্রের পক্ষে জোরালো দাবি জানান এবং ফিলিস্তিনে তাদের জায়গা দেওয়া পক্ষে মতামত দেন। ব্রিটেন বিষয়টা ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘে তোলে।
জাতিসংঘ ফিলিস্তিন বিভক্তকরণ পরিকল্পনা (ইউএন রেজল্যুশন ১৮১) অনুমোদন করে। যেখানে ফিলিস্তিনকে দুটি রাষ্ট্রের ভাগ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়, একটি ইহুদি রাষ্ট্র ও অন্যটি ফিলিস্তিনি আরব রাষ্ট্র। জেরুজালেমকে রাখা হয় আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণে।
প্রস্তাবে বলা হয়, ফিলিস্তিনের মোট জমির ৫৫ ভাগ জমি ইহুদি রাষ্ট্রের জন্য। ৪৫ ভাগ জমি ফিলিস্তিনি আরবদের জন্য। অথচ ১৯৪৭ সালে ফিলিস্তিনে ইহুদিদের সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ।
তাদের মালিকানাধীন জমি ছিল ফিলিস্তিনের মোট জমির ৭ শতাংশ। জাতিসংঘের এ সিদ্ধান্ত আরব রাষ্ট্রগুলো মেনে নেয়নি।
গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলীয় বেই লাহিয়ায় খাবারের জন্য বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি শিশুদের অপেক্ষা
গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলীয় বেই লাহিয়ায় খাবারের জন্য বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি শিশুদের অপেক্ষাফাইল ছবি: এএফপি
এ সিদ্ধান্তকে ইহুদিরা সাধুবাদ জানায় এবং ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ডে ইহুদিরা বিজয় উল্লাস শুরু করে। জাতিসংঘের একতরফা এ ঘোষণার পর শুরু হয় নতুন অধ্যায়। ইহুদি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো ধীরে ধীরে সামনে আসে এবং সেখানকার আরব জনগোষ্ঠীর ওপর শুরু হয় নির্যাতন।
১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ৭ লাখ ফিলিস্তিনি নিজ ভূখণ্ড ছাড়তে বাধ্য হন। ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ব্রিটিশ ম্যান্ডেট শেষ হয় এবং ব্রিটিশরা ওই দিনই ফিলিস্তিন ছেড়ে চলে যায়। পরদিন ইহুদি নেতারা ঘোষণা করেন, সেদিন রাতেই ইহুদি রাষ্ট্রের জন্ম হবে। ইসরায়েল রাষ্ট্র জন্মের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আরবরা আক্রমণ শুরু করে।
শুরু হয় প্রথম আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ। এরপর বিভিন্ন সময় ১৯৫৬, ১৯৬৭, ১৯৭৩, ১৯৮২ ও গাজা যুদ্ধগুলো, যা এখনো চলমান। প্রতিটি যুদ্ধে ফিলিস্তিনি জনগণের ওপরই বয়ে গেছে নির্মম ধ্বংসযজ্ঞ।
হাজার হাজার নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছেন। লাখ লাখ আরব তাঁদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়েছেন। আহত ও পঙ্গু হয়েছেন অগণিত মানুষ। এ ইস্যু নিয়ে মধ্যপ্রাচ্য বছরের পর বছর উত্তেজনা বিরাজ করে। মধ্যপ্রাচ্যের খুব কম দেশ আছে, যার সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ হয়নি। এ যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যাও অনেক, শুধু টাকা দিয়ে যেটা গণনা করা সম্ভব নয়। মধ্যপ্রাচ্যের সীমারেখাতেও এসেছে পরিবর্তন। এর সব দায়ভার ব্রিটেন ও ফ্রান্স কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।
বেলফোর ঘোষণার (১৯১৭) মধ্য দিয়ে ইসরায়েলের রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন শুরু হলেও ইহুদিরা ১৮৯৭ সাল থেকে চাইছিল, একটি আলাদা রাষ্ট্র গড়তে। সে হিসাবে ৫০ বছর ধরে সময় নিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র জোর করে দখল করে নেয় ইসরায়েল।
আর এ পুরো প্রক্রিয়ায় জড়িত ব্রিটেন ও ফ্রান্স। এ রাষ্ট্র দুটি এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে। সেটাও আবার শর্ত সাপেক্ষে। এটি একধরনের পাপের প্রায়শ্চিত্ত বললে বেশি বলা হবে। গত ১০০ বছরে ইসরায়েলের এই ফিলিস্তিন রাষ্ট্র দখলকে কেন্দ্র করে অনেকগুলো যুদ্ধ–বিগ্রহ হয়েছে।
হাজার হাজার নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছেন। লাখ লাখ আরব তাঁদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়েছেন। আহত ও পঙ্গু হয়েছেন অগণিত মানুষ। এ ইস্যু নিয়ে মধ্যপ্রাচ্য বছরের পর বছর উত্তেজনা বিরাজ করে। মধ্যপ্রাচ্যের খুব কম দেশ আছে, যার সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ হয়নি।
এ যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যাও অনেক, শুধু টাকা দিয়ে যেটা গণনা করা সম্ভব নয়। মধ্যপ্রাচ্যের সীমারেখাতেও এসেছে পরিবর্তন। এর সব দায়ভার ব্রিটেন ও ফ্রান্স কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।
রাষ্ট্র দুটি তাদের কৃতকর্মের জন্য পৃথিবীবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে, বিনা শর্তে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলে যদি পাপের প্রায়শ্চিত্ত কিছুটা লাঘব হয়। তা না হলে প্রতীকী স্বীকৃতি দিয়ে শুধু সংখ্যায় বাড়ানো হবে, ফিলিস্তিনের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কিছুই হবে না।
ফিলিস্তিন সংকট কোনো ধর্মীয় সংকট নয়, এটি একটি দখলদারি ও উপনিবেশবাদী আগ্রাসনের ইতিহাস। ইহুদি জনগণের জন্য একটি নিরাপদ রাষ্ট্রের প্রয়োজন থাকলেও ফিলিস্তিন জাতিকে তাদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করে ইসরায়েল রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠিত হওয়া ইতিহাসের একটি বড় অন্যায়।
একবিংশ শতাব্দীতে এসে আন্তর্জাতিক সমাজের উচিত সেই ভুল শোধরানোর। শুধু প্রতীকী স্বীকৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
এগুলো হলো গাজা উপত্যকায় অবরোধ প্রত্যাহার, মানবিক সাহায্য সরবরাহ নিশ্চিত করা, ইসরায়েলি যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং একটি কার্যকর ও স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ করা এখন সময়ের দাবি।
ড. মো. সাহাবুল হক অধ্যাপক, পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট