একটা গল্প দিয়ে আজকের আলোচনাটি শুরু করতে চাই। একবার জনৈক পাদ্রীকে স্বর্গ ও নরকের মধ্যে ব্যবধান ব্যাখ্যা করতে অনুরোধ করা হয়েছিল। পাদ্রী বললেন, “স্বর্গ ও নরকের মধ্যে পার্থক্য অতি নগণ্য। সামান্য পরিবর্তন হলেই স্বর্গ-নরকে পরিণত হয়। তাজ্জব হয়ে শ্রোতারা পাদ্রীকে উদাহরণ দিয়ে তার বক্তব্য ব্যাখ্যা করতে অনুরোধ করলেন।
একটা গল্প দিয়ে আজকের আলোচনাটি শুরু করতে চাই। একবার জনৈক পাদ্রীকে স্বর্গ ও নরকের মধ্যে ব্যবধান ব্যাখ্যা করতে অনুরোধ করা হয়েছিল। পাদ্রী বললেন, “স্বর্গ ও নরকের মধ্যে পার্থক্য অতি নগণ্য। সামান্য পরিবর্তন হলেই স্বর্গ-নরকে পরিণত হয়। তাজ্জব হয়ে শ্রোতারা পাদ্রীকে উদাহরণ দিয়ে তার বক্তব্য ব্যাখ্যা করতে অনুরোধ করলেন। পাদ্রী বললেন, ‘ধরুন, স্বর্গ হচ্ছে এমন এক দেশ যেখানে পুলিশ হলো ইংরেজ, বাবুর্চিরা বাংগালী, চিত্রকররা ফরাসী আর জার্মানরা হলো প্রকৌশলী। নরক হচ্ছে সে দেশ, যে দেশে বাংগালীরা পুলিশ, ইংরেজরা পাচক, চিত্রকররা জার্মান এবং ফরাসীরা প্রকৌশলী।
গল্পটি বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ খ্যাতনামা আমলা, গবেষক এবং লেখক মরহুম ড. আকবর আলী খানের কাছ থেকে শোনা। গল্পে বর্ণিত স্বর্গ-নরকের ফারাক সম্পর্কে পাদ্রী সাহেবের বক্তব্যের সাথে হয়ত অনেকেই একমত হবেন না; তবে বিভিন্ন জাতির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে তিনি যা বলেছেন অধিকাংশ মানুষই অকপটে তা মেনে নেবেন বলে আমার ধারণা।
গত ২০শে এপ্রিল সহযোগী দৈনিক যুগান্তরে একটি লীড আইটেম ছাপা হয়েছে। শিরোনামটি হচ্ছে : আওয়ামী লীগের চেতনার দোকানে লুটপাট, বুদ্ধিজীবীদের এ কেমন কাণ্ড। রিপোর্টটিতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন প্রকল্পের উপর একটি তদন্ত প্রতিবেদনের উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরে আওয়ামী বুদ্ধিজীবী ও তাদের প্রতিষ্ঠানসমূহ কর্তৃক গবেষণার নামে কোটি কোটি টাকা তুলে নেয়ার একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বিষয়টি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নজরে এলে তারা প্রকল্পটি বাতিলসহ জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এদিকে অতিশীঘ্র নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপর প্রচণ্ড চাপ, কোন কোন দল কর্তৃক আন্দোলনের হুমকি, গুম, খুন, হত্যা, লুটপাট, লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার প্রক্রিয়া নস্যাতের জন্য প্রতিবেশী দেশের উস্কানিতে একটি মহলের অশুভ প্রচেষ্টা, দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী কর্তৃক ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার দাবি দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনকে উত্তপ্ত করে তুলেছে বলে প্রতীয়মান হয়। জুলাই বিপ্লবের বীর ছাত্রজনতার তরফ থেকে পরিষ্কার বলে দেয়া হয়েছে যে, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এক লুটেরাকে হটিয়ে আরেক লুটেরার হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়ার জন্য বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী হাজার হাজার লোক প্রাণ, সম্পদ ও সম্ভ্রম দেয়নি। তাদের মধ্যে ফ্যাসিস্ট হাসিনার প্রতিভূদের হাতে নিগৃহীত হাজার হাজার মানুষ অঙ্গ প্রত্যঙ্গ হারিয়ে এখনো হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন; তাদের সুচিকিৎসা হচ্ছে না। অপরাধীদের শাস্তি এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কার অপরিহার্য হলেও একটি দল নির্দলীয় নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তা করতে দিতে নারাজ। শেখ হাসিনাসহ তার দলের কয়েকশ’ নেতা নেত্রীর বিরুদ্ধে মামলা এবং তাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্টও ইস্যু হয়েছে।
বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, ওয়ারেন্টভুক্ত এসব আসামী বিশেষ করে শেখ হাসিনাকে টক শোর নামে কোন কোন চ্যানেল মিডিয়া প্লাটফরমে এনে পতিত আওয়ামী লীগকে সক্রিয় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করার সুযোগ দিচ্ছে। ফলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো সরকার বিরোধী কর্মতৎপরতাসহ জঙ্গী মিছিল বের করতে শুরু করেছে। যার বা যাদের স্থান এখন কারাগার ও বিচারালয়ের কাঠগড়া হওয়া উচিত তারা কিভাবে টিভি চ্যানেলের প্লাটফরমে বক্তব্য প্রচার ও সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের সুযোগ পায় এ প্রশ্নের উত্তর কে দেবে? ভারতীয় গণমাধ্যমের অপপ্রচারের সাথে বাংলাদেশের বুকে নমরুদ-ফেরাউনের এ উত্তরসূরীর প্রকাশ্য পদচারণা, সেটা ডয়েচে ভ্যালে বা অন্য কোন চ্যানেলের মাধ্যমেই হোক, কিছুতেই কাম্য হতে পারে না। এখন অন্য প্রসঙ্গে আসি।
গত কয়েকদিনে বাংলাদেশের কূটনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনা ঘটেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে সংশ্লিষ্ট দু’জন মন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেছেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিবও বাংলাদেশে দু’দিনের সফরে এসে পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও দায়িত্বশীল উপদেষ্টাদের সাথে আলাপ আলোচনা করেছেন।
বলাবাহুল্য স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার ও তার পূর্ববর্তী সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গত প্রায় সাড়ে সতেরো বছরে পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল অনেকটা স্থবির। বাংলাদেশ ছিল ভারতের একচেটিয়া বাজার। শেখ হাসিনা জনরোষের মুখে পদত্যাগ করে প্রাণ নিয়ে ভারতে পলায়নের পর ভারতের মোদি সরকার বাংলাদেশের উপর রুষ্ট হয় এবং এই বাংলাদেশকে শিক্ষাদানের জন্য পেঁয়াজ, ডাল চালসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী বাংলাদেশ রফতানি বন্ধ করে দেয়। ব্যবসা-বাণিজ্য ও চিকিৎসার উদ্দেশে যথাক্রমে বাংলাদেশী ব্যবসায়ী এবং রোগীদের ভিসা প্রদানও প্রায় বন্ধ করে দেয়। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ আমদানি ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিকল্প দেশ চিহ্নিতকরণ এবং এমনকি আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদনের পথেও অগ্রসর হয়। এ উদ্যোগের অংশ হিসাবে পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়। দীর্ঘকাল ধরে পাকিস্তান থেকে সরাসরি পণ্য আমদানি বন্ধ ছিল। দেশটি থেকে কোনও পণ্য আমদানি করতে হলে তৃতীয় একটি দেশের মাধ্যমে তা করতে হতো। অর্থাৎ পাকিস্তানী বন্দর থেকে জাহাজ ভর্তি মালামাল নিয়ে তৃতীয় একটি দেশে তা খালাস করে পুনরায় অন্য জাহাজে করে সংশ্লিষ্ট মালামাল বাংলাদেশে আনা যেত। এখন শেখ হাসিনার পতনের পর পাকিস্তানী জাহাজ মালামাল (যেমন পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ অন্যান্য ভোগপণ্য) নিয়ে করাচী বন্দর থেকে সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে মাল খালাস করতে পারে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি জাহাজ ভর্তি মালামাল বাংলাদেশে খালাসও হয়েছে। একইভাবে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও সমমর্যাদার ভিত্তিতে দু’ দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়ন ও পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে এবং পাকিস্তানী বিদেশ সচিবের ঢাকা সফরকালে উভয় দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিরাজিত সমস্যাবলির সমাধানের উপর গুরুত্ব আরোপ করে সামনে এগিয়ে যাবার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা যায়।
এ অবস্থার প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশের ভারতপন্থী কিছু বুদ্ধিজীবী এবং বিশ্লেষক উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন বলে মনে হয়। তারা হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেছেন যে, বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের উন্নয়ন যাতে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য কোন দেশের সাথে বাংলাদেশ সম্পর্কের অবনতি না ঘটায় সে ব্যাপারে সর্তক থাকা বাঞ্ছনীয়। অন্য কোন দেশ বলতে যে তারা ভারতকেই বুঝাচ্ছেন তা পরিষ্কার। দক্ষিণ এশিয়া তথা সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারত এবং পাকিস্তান সম্পর্কই অত্যন্ত তিক্ত। এতদিন পর্যন্ত ভারত বাংলাদেশকে শেখ হাসিনা ও তার দলের মাধ্যমে অনেকটা করদ রাজ্যের মতো ব্যবহার করে এসেছে। এখন যদি পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয় তাহলে তাদের ধারণা ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটবে। এজন্যই হুঁশিয়ারী। এটা ভারতের পক্ষে চমৎকার একটি দালালীর অভিব্যক্তি বলে অভিজ্ঞমহল মনে করেন।
এখন সততা, নিষ্ঠা, দেশ প্রেম, গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকারের প্রতি অঙ্গীকার এবং প্রশাসনিক দক্ষতার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের কীর্তি নিয়ে কিছু বলা দরকার। দলটি একটি বড় দল সন্দেহ নেই। জনবল অর্থবল ও পেশীশক্তি সবকিছুই তার আছে কিন্তু তবু বার বার দলটি গণবিচ্ছিন্ন হয়ে মানুষের ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়। এর কারণ কী?
স্বাধীনতাপূর্ব আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতা পরবর্তী আওয়ামী লীগকে অভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন দল বলে মনে করেন না। স্বাধীনতাপূর্ব আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিব ছিল জনপ্রিয়তার তুঙ্গে, ছয় দফায় যদিও স্বাধীনতার কোন অঙ্গীকার ছিলনা তবু অনেকে তাকে ম্যাগনা কার্টা হিসেবে গণ্য করতেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিবের সম্পৃক্তি থাকলেও তার জনপ্রিয়তার কাছে সামরিক শাসক ফিল্ড মার্শাল আইয়ূব খানকে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছিল।
শেখ মুজিব যখন ক্ষমতায় আসলেন তখন দৃশ্যপট সম্পূর্ণ উল্টে গেল। আওয়ামী লীগ নেতা এম.এ মোহায়মেনের (লক্ষ্মীপুরের এমপি) ভাষায় মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত এ জনপ্রিয়তা মোটামুটি ভালোই ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তার এতই অবনতি ঘটে যে, মানুষ দলটি ও তার নেতা শেখ মুজিবকে লোভী, দুর্নীতিপরায়ণ, অযোগ্য বলে অভিহিত করতে শুরু করে। প্রিয় দল ও প্রিয় নেতার জন্য যারা জীবন ও সম্পদ কুরবানি দিতে প্রস্তুত ছিলেন তারাই এ দল ও নেতার প্রতি সম্পূর্ণভাবে আস্থা হারিয়ে ফেলেন। দেশ শাসনে তাদের অযোগ্যতা মানুষের জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তোলে। স্বাধীনতার দু’বছরের মধ্যেই ছয়আনা দামের গামছার দাম দু’টাকায় ওঠে। উন্নতমানের ১২/১৪ টাকার শাড়ি ৬০/৬৫ টাকায় উন্নীত হয়। ১২ আনা সের তথা ৩০ টাকা মণের মিহি চালের দাম ৪৮০ টাকা, ১০ আনা সেরের শুকনো মরিচ প্রতি সের ২৫০ টাকা, চারআনা মূল্যের প্রতিসের লবণ ৮০ টাকায় উত্তীর্ণ হয়। একইভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য সামগ্রী, গরম মসলা, চিনি, শিশু খাদ্য, প্রভৃতির দামও রকেটের গতিতে বৃদ্ধি পায়। ফলে ১৯৭৪ সালে দেশ ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে এবং প্রায় দশ লক্ষ লোক এতে মৃত্যুবরণ করে। রাষ্ট্র পরিচালনায় অদক্ষতা, দুর্নীতি, চোরাচালান, মজুতদারী প্রভৃতি ছিল এর জন্য দায়ী এবং ফলে দলটির জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। এ অবস্থায় পার্টি প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান এবং অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ একটার পর একটা মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত নিতে থাকেন। প্রথম সিদ্ধান্তটি ছিল বাঙালি-অবাঙালি মালিকানা নির্বিশেষে সকল পাট ও বস্ত্রকল জাতীয়করণ। তিনটি শর্ত পূরণ করা এজন্য অপরিহার্য ছিল। প্রথমত এ কর্মসূচি সফল করার জন্য সৎ ও যোগ্য একটি দলের দরকার ছিল।
দ্বিতীয় প্রয়োজন ছিল শত শত শিক্ষিত, ত্যাগী ও ক্যাডার যারা নিষ্ঠা ও সততার সাথে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেন। তৃতীয় অপরিহার্য শর্ত ছিল সৎ ও বিশ্বাসযোগ্য একটি প্রশাসন যন্ত্র যার কোনোটিই শেখ মুজিব ও তার দলের ছিল না। আবার শেখ মুজিবের লেখাপড়ার জোরও ছিল কম, বুদ্ধিবৃত্তির পরিবর্তে ইমোশন বা আবেগ তাকে নিয়ন্ত্রণ করত। জাতীয়করণকৃত শিল্প-কারখানাগুলো অনভিজ্ঞ ও দুর্নীতিপরায়ণ পার্টি ক্যাডারদের হাতে তুলে দেয়া হয়। ফলে শিগগিরই এসব শিল্প-কারখানার প্রশাসক, ব্যবস্থাপক এবং ক্রয় কর্মকর্তারা শ্রমিক নেতাদের যোগসাজসে কল-কারখানাসমূহে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেন। পাট ও বস্ত্রকলে হাজার হাজার ভুয়া শ্রমিক পোষা শুরু হয়। তাদের নামে মজুরি তুলে ভাগাভাগি হতো। কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ের নামে কাগজি লেনদেন তথা ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। এতে শুধু যে শিল্প-কারখানা ধ্বংস হয়েছে তা নয় এর ফলে সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাও ধ্বংস হয়েছে।
সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে স্বাধীনতা সপক্ষ ও বিপক্ষ শক্তির সৃষ্টি, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ, দেশের আলেম-ওলামা ও তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনীতিকদের ওপর নির্যাতন ছিল দলটির গণবিচ্ছিন্নতার অন্যতম কারণ। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিধ্বস্ত অর্থনীতির পুনর্বাসন, দুস্থ, দুর্গত মানুষের আর্থিক ও সামাজিক সহায়তার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহসহ দুনিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে হাজার হাজার কোটি টাকার ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হয়েছিল। আওয়ামী লীগ নেতারা এগুলোর বেশিরভাগই তছরুপ করেছেন। কালোবাজারে বিক্রি করেছেন এবং ভারতেও পাচার করেছেন এবং এভাবে পয়সা কামাই করেছেন। স্বয়ং শেখ মুজিবকে আক্ষেপ করে বলতে শোনা গেছে যে, রিলিফের সাড়ে সাত কোটি কম্বলের মধ্যে আমার ভাগেরটা কই? আওয়ামী লীগ ও তার দেশ শাসনের ইতিহাস কলঙ্কিত ইতিহাস। যতবারই তারা ক্ষমতায় গেছেন ততোবারই দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি আত্মসাৎ, মানবাধিকার লংঘন, হত্যা, গুম, সম্পদ পাচার, গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ ও স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং রাজনৈতিক শিষ্টাচারকে পদদলিত করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। এ প্রেক্ষিতে দলটিকে Refined আকারে বিপ্লবোত্তর নতুন বাংলাদেশের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ ও নির্বাচনে অন্তর্ভুক্ত করার প্রশ্ন উঠেছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, কয়লার যেমন ময়লা যায় না আওয়ামী লীগ ও তার নেতাকর্মীদের খাসলতও বদলানোর মতো নয়। দু’বছর অপেক্ষা করে তাদের পরিশুদ্ধ হতে দিন। তারা রাজনীতি ও নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করে প্রমাণ করুক যে তারা কোনো শক্তির ক্রীড়নক নয় বরং বাংলাদেশের বন্ধু।