একুশ শতকের ডিজিটাল যুগে স্বৈরাচারী শাসকদের জন্য অপরাধ গোপন করা যে কতটা কঠিন, বাংলাদেশের ঘটনা তার এক জ্বলন্ত উদাহরণ। প্রযুক্তির মাধ্যমে ধারণকৃত ‘অসতর্ক মুহূর্তের সত্য’ এবং বিবেক থেকে উৎসারিত ‘স্বীকারোক্তি’ যখন একসঙ্গে মিলিত হয়, তখন তা ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণগুলোর একটি হয়ে উঠতে পারে। ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টে তৎকালীন স্বৈরাচারী সরকারের আমলে মানবতাবিরোধী অপরাধের স্বীকারোক্তির দিকগুলো বিশ্লেষণ করেছেন আরিফ রহমান
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে সবচেয়ে দুরূহ অধ্যায়টি হলো শীর্ষ নেতৃত্বের ‘অভিপ্রায়’ বা অপরাধমূলক উদ্দেশ্য প্রমাণ করা। রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারের শীর্ষ নির্বাহীরা সাধারণত সরাসরি হত্যার আদেশে স্বাক্ষর করেন না; বরং তাঁদের নির্দেশাবলি প্রায়ই প্রতীকী, অলিখিত বা গোপনীয়তার চাদরে ঢাকা থাকে। ফলে নুরেমবার্গ থেকে হেগ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক আদালতগুলোকে প্রায়ই ‘সারকামস্ট্যানশিয়াল এভিডেন্স’, প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য এবং বিক্ষিপ্ত নথিপত্র একত্র করে একটি অখণ্ড চিত্র নির্মাণ করতে হয়েছে।
এ ধরনের বিচারপ্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভেতর থেকে আসা ‘স্বীকারোক্তি’ বা ‘রাজসাক্ষীর জবানবন্দি’ একটি মামলার মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। এটি কেবল বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলোকে একটি সুসংবদ্ধ চেইন বা শৃঙ্খলে বাঁধে না, বরং সর্বোচ্চ পর্যায়ের ‘সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি’ অর্থাৎ ‘শীর্ষ নেতৃত্বের দায়’ প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে একটি অকাট্য সেতু হিসেবে কাজ করে।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার ওপর সংঘটিত দমন-পীড়নের ঘটনাপ্রবাহ এই প্রেক্ষাপটে এক নতুন এবং শক্তিশালী আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
এ ক্ষেত্রে কেবল আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর প্রমাণের সমাহারই ঘটেনি; বরং রাষ্ট্রযন্ত্রের শীর্ষ পর্যায় থেকে আসা স্বীকারোক্তিমূলক বয়ান এ ঘটনাকে ঐতিহাসিক অন্যান্য বিচারপ্রক্রিয়া থেকে স্বতন্ত্র করে তুলেছে।
আমরা জানি, আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আইনে ‘স্বীকারোক্তি’ কেবল আদালতে আসামির নিজের মুখে দোষ স্বীকার করা নয়। এর পরিধি আরও ব্যাপক। একে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়:
প্রত্যক্ষ স্বীকারোক্তি: অভিযুক্ত ব্যক্তি বা তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীর পক্ষ থেকে অপরাধ সংঘটনের সরাসরি স্বীকারোক্তি। যেমন কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেওয়া।
অনিচ্ছাকৃত স্বীকারোক্তি: অপরাধ ঢাকার চেষ্টায় বা আত্মপক্ষ সমর্থনে দেওয়া এমন কোনো বক্তব্য, যা অনিচ্ছাকৃতভাবে অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বা নীতির অস্তিত্ব প্রমাণ করে। যেমন সহিংসতাকে ‘রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে’ বা ‘উগ্রপন্থী দমনে’ অপরিহার্য ছিল বলে দাবি করা।
প্রামাণ্য স্বীকারোক্তি: ফাঁস হওয়া অডিও, ভিডিও বা গোপন নথি, যা অপরাধ সংঘটনের নির্দেশ বা পরিকল্পনাকে সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করে। এটি অজান্তেই তার নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য হয়ে ওঠে।
আইনগতভাবে একটি শক্তিশালী স্বীকারোক্তি ‘চেইন অব কমান্ড’-এর দুর্বলতম গ্রন্থিগুলোকে সংযুক্ত করে। এটি মাঠপর্যায়ের সহিংসতা এবং শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশের মধ্যে একটি সরাসরি ‘কার্যকারণ সম্পর্ক’ স্থাপন করে, যা অন্য কোনো প্রমাণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করা প্রায়ই কঠিন। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে জুলাই-আগস্টে যে প্রমাণগুলো উঠে এসেছে, তা এই তিন ধরনের স্বীকারোক্তির এক শক্তিশালী সমন্বয়।
জুলাই-আগস্টের ঘটনাবলির কেন্দ্রে রয়েছে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বর–সংবলিত একটি অডিও রেকর্ডিং, যেখানে ‘লিথাল উইপন’ (প্রাণঘাতী অস্ত্র) ব্যবহার এবং ‘যেখানেই পাওয়া যাবে, সেখানেই গুলি করো’–জাতীয় নির্দেশনার অভিযোগ উঠেছে।
বিবিসি, আল–জাজিরাসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো কর্তৃক এর ফরেনসিক যাচাই (বিশেষত ইএনএফ অ্যানালাইসিস) এই অডিওকে নিছক অভিযোগের স্তর থেকে একটি প্রামাণ্য স্বীকারোক্তির স্তরে উন্নীত করেছে।
এটি একটি অনিচ্ছাকৃত বা অসতর্ক মুহূর্তে ধারণকৃত বয়ান, যা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সহিংসতা ব্যবহারের ‘নীতিগত সিদ্ধান্ত’ এবং ‘অভিপ্রায়’-এর প্রমাণ হিসেবে কাজ করতে পারে।
পেরুর স্বৈরশাসক ফুজিমোরির বিরুদ্ধে তাঁর গোয়েন্দাপ্রধান ভ্লাদিমিরো মন্তেসিনোসের দুর্নীতিবিষয়ক বৈঠকের ভিডিও রেকর্ডিং যেমন অকাট্য প্রমাণ হিসেবে কাজ করেছিল, এ ক্ষেত্রে অডিও রেকর্ডিংটি তার চেয়েও গুরুতর; কারণ, এটি সরাসরি প্রাণহানির নির্দেশের সঙ্গে সম্পর্কিত।
প্রত্যক্ষ স্বীকারোক্তি: পুলিশপ্রধানের ‘রাজসাক্ষী’ হওয়ার সংবাদ
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে রাষ্ট্রীয় মদদে চালানো সহিংসতার মামলার সবচেয়ে নাটকীয় এবং আইনগতভাবে শক্তিশালী উপাদান হলো তৎকালীন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ‘রাজসাক্ষী’ হতে সম্মত হওয়ার খবর। একটি রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনীর প্রধান, যিনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সর্বোচ্চ কমান্ডার, তাঁর সাক্ষ্য কার্যত ‘চেইন অব কমান্ড’-এর বিতর্কের অবসান ঘটায়। তাঁর জবানবন্দি প্রমাণ করতে পারে যে:
ক) মাঠপর্যায়ের পুলিশ বা অন্যান্য বাহিনী বিচ্ছিন্নভাবে বা আত্মরক্ষার্থে গুলি চালায়নি।
খ) তাদের কাছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশ ছিল।
গ) এই নির্দেশ পালনের জন্য একটি সুসংগঠিত কাঠামো কার্যকর ছিল।
এ রকম স্বীকারোক্তি ফাঁস হওয়া অডিওর নির্দেশ এবং মাঠপর্যায়ের হত্যাকাণ্ডের ফুটেজের (যেমন দৃক ল্যাবের ব্যালিস্টিক বিশ্লেষণ দ্বারা প্রমাণিত ঘটনা) মধ্যে একটি জীবন্ত সেতু তৈরি করে। এটি ‘প্লাসিবল ডিনায়াবিলিটি’ বা ‘বিশ্বাসযোগ্য অস্বীকৃতি’র সব পথ বন্ধ করে দেয়, যা স্বৈরশাসকেরা প্রায়ই আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেন।
অনিচ্ছাকৃত স্বীকারোক্তি: রাষ্ট্রীয় বয়ান ও পরবর্তী পদক্ষেপ
আন্দোলন চলাকালে এবং পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী ও নেতারা বিক্ষোভকারীদের ‘সন্ত্রাসী’, ‘জামায়াত-বিএনপির এজেন্ট’ এবং ‘রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে সহিংসতার ন্যায্যতা প্রমাণের চেষ্টা করেছেন।
আন্তর্জাতিক আইনের চোখে এ ধরনের বক্তব্যগুলোও একপ্রকার অনিচ্ছাকৃত স্বীকারোক্তি। কারণ, এটি প্রমাণ করে যে রাষ্ট্র একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছিল এবং তাদের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগকে একটি ‘রাষ্ট্রীয় নীতি’ হিসেবে গ্রহণ করেছিল।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) প্রতিবেদনে উল্লিখিত হাসপাতাল থেকে সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব করা, আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় বাধা দেওয়া এবং ঘটনার পর স্বাধীন তদন্তে ব্যর্থতা—এই প্রতিটি পদক্ষেপ অপরাধ ঢাকার সম্মিলিত চেষ্টার প্রমাণ, যা একটি পরিকল্পিত রাষ্ট্রীয় অভিযানের দিকেই ইঙ্গিত করে।
এই ত্রিবিধ স্বীকারোক্তির সমন্বয়কে বুঝতে হলে আমাদের ফিরে তাকাতে হবে ইতিহাসের দিকে।
নুরেমবার্গ বিচার
নাৎসিদের বিচার ছিল মূলত ‘প্রামাণ্য স্বীকারোক্তি’নির্ভর। তাদের আমলাতান্ত্রিকতায় খুঁটিনাটি নথিভুক্ত করার প্রবণতাই তাদের ফাঁদে ফেলেছিল। বিভিন্ন ডিক্রি, আদেশ এবং কনফারেন্সের কার্যবিবরণী একটি বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরেছিল।
তবে নুরেমবার্গে হিটলারের কণ্ঠে সরাসরি গণহত্যার নির্দেশ দেওয়ার অডিও প্রমাণ ছিল না। আলবার্ট স্পিয়ারের মতো কিছু সহযোগীর ব্যক্তিগত স্বীকারোক্তি থাকলেও বাংলাদেশ পুলিশের শীর্ষ নির্বাহীর মতো ‘চেইন অব কমান্ড’-এর কেন্দ্রীয় কোনো কর্মকর্তার রাজসাক্ষী হওয়ার নজির সেখানে ছিল না।
রুয়ান্ডার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল
রুয়ান্ডা গণহত্যার বিচারে প্রধানমন্ত্রী জিন কামবান্দার দোষ স্বীকার ছিল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এটি প্রথমবারের মতো কোনো সরকারপ্রধানের পক্ষ থেকে গণহত্যার দায় স্বীকার। তবে কমান্ডারের স্বীকারোক্তি আসে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার পরে এবং তিনি একক ব্যক্তি হিসেবে দোষ স্বীকার করেন।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন; এখানে একটি অডিওর মাধ্যমে শীর্ষ নেতার ‘নির্দেশ’ এবং পুলিশপ্রধানের সাক্ষ্যের মাধ্যমে সেই নির্দেশের ‘বাস্তবায়ন’—উভয়ই প্রমাণের সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা একটি একক স্বীকারোক্তির চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী।
সাবেক যুগোস্লাভিয়ার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল
স্রেব্রেনিৎসা গণহত্যার জন্য রাতকো ম্লাদিচের মতো সামরিক কমান্ডারদের বিরুদ্ধে ভিডিও ফুটেজ এবং প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য ছিল। বসনীয় সার্ব বাহিনীর এক সৈনিক, দ্রাজেন এরডেমোভিচের স্বীকারোক্তি স্রেব্রেনিৎসার হত্যাকাণ্ড প্রমাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। কিন্তু এরডেমোভিচ ছিলেন মাঠপর্যায়ের একজন সৈনিক। তাঁর সাক্ষ্য সামরিক কাঠামোর নিচ থেকে ওপরের দিকে দায় প্রমাণে সহায়ক ছিল।
অন্যদিকে বাংলাদেশের পুলিশপ্রধানের স্বীকারোক্তি কাঠামোর শীর্ষ থেকে নিচের দিকে নির্দেশের প্রবাহকে প্রমাণ করে, যা আইনগতভাবে অনেক বেশি শক্তিশালী। স্লোবোদান মিলোসেভিচের মতো রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে মাঠপর্যায়ের হত্যাকাণ্ডের সরাসরি সংযোগ স্থাপন করা ছিল আইসিটিওয়াইয়ের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ।
চিলি ও আর্জেন্টিনা
লাতিন আমেরিকার স্বৈরশাসকদের বিচারে কয়েক দশক পর সামরিক বাহিনীর মধ্যম বা নিম্নসারির কর্মকর্তাদের স্বীকারোক্তি ‘ডেথ স্কোয়াড’ বা ‘গুম’-এর মতো অপরাধের রহস্য উন্মোচন করেছিল। কিন্তু সর্বোচ্চ নেতা, যেমন পিনোশে বা ভিদেলার সরাসরি নির্দেশের অডিও প্রমাণ বা তাঁদের প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কোনো নিরাপত্তা কর্মকর্তার সমসাময়িক রাজসাক্ষী হওয়ার ঘটনা ছিল বিরল।
এসব তুলনামূলক আলোচনা থেকে এটি স্পষ্ট যে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট ঘটনাবলির প্রমাণ–শৃঙ্খলে স্বীকারোক্তির ভূমিকা এটিকে স্বৈরাচারের বিচারকে এক স্বতন্ত্র অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে। এটি এমন এক পরিস্থিতি, যেখানে আছে:
(ক) শীর্ষ নেতার নিজের কণ্ঠের ‘প্রামাণ্য স্বীকারোক্তি’,
(খ) সেই নির্দেশ বাস্তবায়নকারী প্রধান সংস্থার শীর্ষ নির্বাহীর ‘প্রত্যক্ষ স্বীকারোক্তি’ এবং
(গ) রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের ‘অনিচ্ছাকৃত স্বীকারোক্তি’—এই তিনটি একসঙ্গে মিলে একটি দুর্ভেদ্য আইনি বয়ান তৈরি করেছে।
ইতিহাসের অন্যান্য বিচারে যেখানে আইনজীবীদের বিচ্ছিন্ন প্রমাণ একত্র করে একটি ‘মোজাইক’ তৈরি করতে হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রমাণগুলো নিজেরাই একটি সম্পূর্ণ চিত্র তুলে ধরছে।
পুলিশপ্রধানের সম্ভাব্য জবানবন্দি এখানে ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে, যা সর্বোচ্চ নেতৃত্বের অপরাধমূলক অভিপ্রায়কে সন্দেহের ঊর্ধ্বে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম।
একুশ শতকের ডিজিটাল যুগে স্বৈরাচারী শাসকদের জন্য অপরাধ গোপন করা যে কতটা কঠিন, বাংলাদেশের ঘটনা তার এক জ্বলন্ত উদাহরণ। প্রযুক্তির মাধ্যমে ধারণকৃত ‘অসতর্ক মুহূর্তের সত্য’ এবং বিবেক থেকে উৎসারিত ‘স্বীকারোক্তি’ যখন একসঙ্গে মিলিত হয়, তখন তা ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণগুলোর একটি হয়ে উঠতে পারে।
এই প্রমাণগুলো যদি একটি নিরপেক্ষ বিচারিক প্রক্রিয়ায় উপস্থাপিত হয়, তবে তা কেবল বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক হবে না; বরং আন্তর্জাতিক প্রাঙ্গণেও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ইতিহাসে ‘অধিনায়কত্বের দায়’ প্রমাণের ক্ষেত্রে একটি নতুন মানদণ্ড স্থাপন করবে।
বাংলাদেশে গত বছরের জুলাই-আগস্টে নির্বিচার মানুষ হত্যার যে অসংখ্য ফুটেজ অনলাইনে মজুত আছে, এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর বিশ্লেষণকে যুক্ত করলে অপরাধের প্রমাণের যে অভূতপূর্ব সম্মিলন হয়েছে, কবিতার ভাষায় বলতে হয় ‘অসংখ্য প্রমাণের ভারে আজ ইতিহাস ঝুঁকে আছে’, সেই ভারই হয়তো ভবিষ্যতের ন্যায়ের ভিত্তি স্থাপন করবে।
আরিফ রহমান লেখক ও গবেষক
মতামত লেখকের নিজস্ব