অক্টোবরের ৯ তারিখ মিসরের শার্ম আল–শেখে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন অস্ত্রবিরতি চুক্তির ঘোষণা করা হয়। পরদিন ১০ অক্টোবর থেকে তা কার্যকর হয়।
এরপর উভয় পক্ষ থেকে চুক্তিভঙ্গের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এলেও এখনো তা বহাল আছে। গার্ডিয়ানের তথ্যমতে, ইসরায়েল ইতিমধ্যেই ৪৭ বার চুক্তি ভঙ্গ করেছে। যদিও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, এই সংখ্যা ৮০–এর বেশি।
সবকিছুর পরও মোটাদাগে উভয় পক্ষই এখনো চুক্তি মেনে চলছে এবং গত সোমবার দুই পক্ষই চুক্তির প্রতি তাদের সম্মতি আবারও প্রকাশ করেছে।
তবে বারবার ঘুরেফিরে যে প্রশ্ন আসছে, তা হলো এই চুক্তি কি আদৌ টিকবে?
শুধু কৌতূহলী বাংলাদেশি নন; বরং গোটা বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু এই প্রশ্ন।
এমনকি খোদ শান্তিচুক্তির আলোচকদের ভেতরও তা ঘুরপাক খাচ্ছে। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে এ প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাঁদের।
এখানে পক্ষে-বিপক্ষে দুটো মতই আছে। এক পক্ষের মতে, এবারের চুক্তি টিকে যাবে। অপর পক্ষের মতে, এই চুক্তি টিকবে না এবং তাদের যুক্তির পাল্লাই ভারী।
তাদের যুক্তিগুলোও সহজবোধ্য এবং ইসরায়েলের অতীত বিবেচনায় বাস্তবসম্মত মনে হয়।
আর সংখ্যায় নিতান্ত অল্প হলেও কিছু মানুষ বিশ্বাস করেন, এবারের চুক্তি টিকে যাবে। এর মূল কারণ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘মাথায় পিস্তল ঠেকানো’ কূটনীতি।
অর্থাৎ অপরাপর মার্কিন প্রেসিডেন্টরা যেমন ডিপ স্টেট দ্বারা পরিচালিত হন, ইসরায়েলি লবি দ্বারা তাড়িত হন, ট্রাম্পের ক্ষেত্রে তা কঠিন।
ট্রাম্প নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পছন্দ করেন এবং নিজের একান্ত আস্থাভাজন গুটিকয় লোকের পরামর্শ গ্রহণ করে থাকেন।
এটা স্বতঃসিদ্ধ যে লবি ধরে ট্রাম্পের ক্ষেত্রে কাজ হয় না। শুধু সরাসরি ট্রাম্পকে বোঝানো গেলেই কোনো সিদ্ধান্ত আদায় করা সম্ভব।
তা ছাড়া ট্রাম্প নিজেই ক্যামেরার সামনে বলেছেন, আগে ইসরায়েলি লবির অনেক প্রভাব ছিল। এখন তাদের কোনো ক্ষমতাই নেই। তিনি বলেছেন, তিনি তাদের কথা শোনেন না।
অপরাপর মার্কিন প্রেসিডেন্টরা যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ তত্ত্বকে বিবেচনা করতেন। ট্রাম্প সেসবের পরোয়া করেন না।
আর সিদ্ধান্তটা যদি হয় ইসরায়েলের ক্ষেত্রে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সব প্রেসিডেন্টকে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক সম্পর্ক বিবেচনায় নিতে হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে ধরে নেওয়া হয়, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলই যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধিক বিশ্বস্ত বন্ধু। ফলে ইসরায়েলের নিরাপত্তাই যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা। ইসরায়েল অনিরাপদ হলে যুক্তরাষ্ট্রও অনিরাপদ হয়ে উঠবে।
অনেক ঘটনা ও বহু পক্ষের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এ বয়ান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ফলে কোনো প্রেসিডেন্ট চাইলেই ইসরায়েলের বিপক্ষে বলতে পারেন না; মনে মনে তিনি যতই সংক্ষুব্ধ হয়ে থাকুক না কেন।
এ কারণেই চাক্ষুষ গণহত্যা চালানোর পরও জো বাইডেনের আমলে মুখ ফুটে এ কথা বলা যায়নি যে ইসরায়েলে অস্ত্র পাঠানো বন্ধ হয়ে যাবে বা ইসরায়েলকে সাহায্য-সহযোগিতা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হবে।
যদিও বাস্তবে গুটিকয় অস্ত্রের চালান সাময়িক স্থগিত করা হয়েছিল, তবে সেটা ঘোষণা দেওয়ার মতো সাহস কারও হয়নি।
কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের ডিপ স্টেটের মনোজগতে ইসরায়েলকে প্রকাশ্যে যেকোনো ধরনের হুমকি তো বহুদূর; বরং যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে—নিছক এ ধরনের কোনো বার্তার সারমর্ম হলো, ইরানকে আশকারা দেওয়া।
হিজবুল্লাহ, হুতি, হামাস, ইরান ও অপরাপর ইসরায়েলবিরোধীদের ইসরায়েলে আক্রমণের গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া আক্রমণের পরবর্তী ঢেউ নিশ্চিতভাবেই যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ঠেকবে। চাই তা নাইন-ইলেভেনের মতো করে হোক কিংবা পার্ল হারবারের মতো।
একমাত্র ট্রাম্পই ব্যতিক্রম। ইসরায়েলি আইনসভা পশ্চিম তীর দখল করার আইন পাস করার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেছেন, ‘এটা আমি কোনোভাবেই সমর্থন করতে পারি না। আরব বন্ধুদের আমি কথা দিয়েছি। তারা খুবই ভালো মিত্র। অনেক করেছে আমাদের জন্য। ইসরায়েল যদি এটা করে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের সব সমর্থন হারাতে হবে!’
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সম্পর্কে এটি একদমই নতুন বাঁক। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক, পররাষ্ট্রবিষয়ক নীতিনির্ধারকেরা তো বটেই, খোদ মার্কিনদের একাংশ এবং বেশির ভাগ ইসরায়েলি এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এ কথা বলেছেন।
এখানে ইসরায়েলকে সমর্থন বন্ধের হুমকির চেয়েও বড় বিষয়, আরব রাষ্ট্রগুলোকে ইসরায়েলের চেয়ে বেশি সহায়ক ও গুরুত্বপূর্ণ মনে করা।
যদিও যুক্তরাষ্ট্র ও গোটা বিশ্বের সব নন-জায়নিস্ট আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা শুরু থেকেই বলে আসছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের জন্য যতটা না সহায়ক, তার চেয়ে বেশি প্রতিবন্ধক।
দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থই শুধু ক্ষুণ্ন করছে তা নয়; বরং ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড খোদ মার্কিন ভূখণ্ডকেও অনিরাপদ করে তুলছে।
কিন্তু ইসরায়েলি লবির প্রভাবে সরকারি সিদ্ধান্তগুলো সব সময়ই ইসরায়েলের পক্ষে গিয়েছে। শিকাগো ইউনিভার্সিটির প্রফেসর জন মিয়ারশেইমারের ভাষ্যমতে, শুধু আধুনিক ইতিহাসে নয়; বরং গোটা পৃথিবীর ইতিহাসে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে যেভাবে নিঃশর্ত সমর্থন দিচ্ছে এবং বিনিময়ে নিজের বিপদ ডেকে আনছে।
এর দ্বিতীয় কোনো নজির নেই।
ট্রাম্পের বক্তব্যে প্রথমবারের মতো এর ব্যত্যয় ঘটেছে। ফলে যাঁরা মনে করছেন, এবারের চুক্তি টিকে যাবে, তাঁদের সবচেয়ে বড় যুক্তি হলো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্ব-উদ্যোগী হয়ে এই শান্তিচুক্তি তত্ত্বাবধান করছেন।
তেল আবিবে সমুদ্র সৈকতে ট্রাম্পের ছবি এঁকেছেন ইসরায়েলি কোনো শিল্পী। গাজা যুদ্ধ বিরতিতে তাঁর ভূমিকাকে বড় করে দেখা হচ্ছে।
তেল আবিবে সমুদ্র সৈকতে ট্রাম্পের ছবি এঁকেছেন ইসরায়েলি কোনো শিল্পী। গাজা যুদ্ধ বিরতিতে তাঁর ভূমিকাকে বড় করে দেখা হচ্ছে।ছবি: এএফপি
হামাস–নিয়ন্ত্রিত এলাকায়ও যুদ্ধের ধ্বংসাবশেষ সরানোর মতো ভারী যন্ত্রপাতি নেই। তুরস্ক যেগুলো পাঠিয়েছে, সেগুলো ইসরায়েল তখনো রাফা সীমান্তে আটকে রেখেছে। ফলে এই চুক্তির প্রথম ধাপই ছিল সবচেয়ে সহজ ধাপ। এর পরের ধাপ কী হবে, আর সেটিতে যাওয়া হবেই–বা কীভাবে, তার কোনো কিছু স্পষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে গেরশন বাসকিনের বক্তব্য হলো ইতিমধ্যেই গাজায় মিসর, কাতার ও তুরস্ক উদ্ধারকর্মী পাঠিয়েছে। মিসর ও জর্ডানে ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনী হিসেবে মোতায়েন করার জন্য ফিলিস্তিনিদের প্রশিক্ষণ চলছে।
৯ সেপ্টেম্বর কাতারে হামাস আলোচকদের ওপর ইসরায়েলি আক্রমণের পর ট্রাম্প ও যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান পররাষ্ট্রবিষয়ক নীতিনির্ধারকদের মনোভাবে পরিবর্তন আসে। শান্তিচুক্তিতে যুক্ত ইসরায়েলি আলোচক গেরশন বাসকিন আল–জাজিরা, মিডল ইস্ট আই, ডয়েচে ভেলেসহ অসংখ্য আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যেদিন এ আক্রমণ হয়েছে, এর পরদিন ইস্তাম্বুলে স্টিভ উইটকফের সঙ্গে হামাস নেতাদের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল।
অর্থাৎ মার্কিনরা ধরেই নিয়েছিলেন, ৯ তারিখের আলোচনায় উভয় পক্ষ একটা সমঝোতায় পৌঁছাবে, পরদিন সেটি স্বাক্ষরিত হবে। কিন্তু ইসরায়েলের এ উন্মাদসুলভ আচরণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও হতবাক হয়ে যান এবং প্রথমবারের মতো স্টিভ উইটকফ প্রকাশ্যে বলেন, ইসরায়েল নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
সেপ্টেম্বরেই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে ওভাল অফিসে আসতে ‘আদেশ’ করেন।
সেখানে সাংবাদিকদের ক্যামেরা চালু অবস্থায় নিজের ফোন নেতানিয়াহুর দিকে এগিয়ে দেন। বলেন, ‘কাতারের প্রধানমন্ত্রীকে কল দিন। ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করুন।’ কী বলতে হবে, শব্দে শব্দে ট্রাম্প সেটিও নির্ধারণ করে দেন।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীকে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো আরব ‘বন্ধুর’ জন্য এতটা অপমানিত হতে হবে, ১০ দিন আগেও তা ছিল কল্পনারও বাইরে। কিন্তু ৯ সেপ্টেম্বর ইসরায়েলের ব্যর্থ অপারেশন সেটি সম্ভব করে তুলেছে।
এরপর সাংবাদিকদের বের করে দিয়ে ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে বলেন, যুদ্ধ শেষ। বন্দীরা ঘরে ফিরে যাবেন। এরপরই তিনি তাঁর ট্রুথ সোশ্যালে এটি জানিয়ে পোস্ট করেন। এতে ২১ দফার উল্লেখ ছিল।
আলোচনার পর তা ২০ দফায় রূপান্তরিত হয়ে অবশেষে অস্ত্রবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপ হিসেবে স্বাক্ষরিত হয়।
অ্যালায়েন্স ফর টু স্টেটসের সহকারী প্রেসিডেন্ট এবং ইসরায়েলি বন্দীর মুক্তি আলোচক গেরশন বাসকিন ও তাঁর সহকর্মীদের অনেকেই (যাঁরা এবারের অস্ত্রবিরতি চুক্তির ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন) তাই বিশ্বাস করেন, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে গুরুতর পরিবর্তন, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান সহযোগী নির্বাচনে পরিবর্তন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আনকনভেনশনাল বা অপ্রথাগত কূটনীতি এবং ব্যক্তিগতভাবে গাজা সংকট সমাধানে তাঁর সংযুক্তির ফলে এবারের চুক্তি একটি পরিণতিতে পৌঁছাবে। এটি টিকে থাকবে।
কিন্তু এর বিপরীতে জন মিয়ারশেইমারসহ অপরাপর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক–বিষয়ক পণ্ডিতেরা মনে করেন, এই চুক্তি টিকবে না। কারণ, বিগত ৮০ বছরে ইসরায়েল কখনো ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে করা চুক্তি মেনেছে, এ রকম নজির নেই। প্রতিটি চুক্তি ছিল পরবর্তী প্রতারণার আগে সময়ক্ষেপণের বাহানা মাত্র।
তা ছাড়া জায়নবাদের মৌলিক যে চরিত্র, তার সঙ্গে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কোনোভাবেই যায় না। ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ প্রতিষ্ঠা করতে হলে ফিলিস্তিন তো বটেই, আশপাশের আরও দু-তিনটি আরব রাষ্ট্রের ভূমি দখল করতে হবে।
এখানকার বাসিন্দাদের বিতাড়ন করতে হবে। ফলে মিয়ারশেইমারের মতে, ইসরায়েলিদের সামনে ফিলিস্তিনিদের ওপর জাতিগত নিধন, গণহত্যা কিংবা গণবিতাড়নের বাইরে কোনো বিকল্প নেই।
এ ছাড়া চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল ক্রমাগত চুক্তি লঙ্ঘন করে যাচ্ছে।
প্রতিটি সুযোগেই চুক্তি বাতিল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। যেমন চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার মাত্র তিন দিনের মাথায়, অর্থাৎ ১৪ সেপ্টেম্বর হামাস মৃতদের লাশ ফেরত দিচ্ছে না—এই অজুহাত দেখিয়ে রাফা ক্রসিং বন্ধ করে দেয়। পরে যদিও যুক্তরাষ্ট্রের চাপে দুই দিন পর তা খুলে দিতে বাধ্য হয়।
কারণ, গাজার মাত্র ৪৭ শতাংশ এখন হামাসের নিয়ন্ত্রণে। ৫৩ শতাংশ ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে। সেখানে বহু লাশ থেকে থাকতে পারে।
আবার হামাস–নিয়ন্ত্রিত এলাকায়ও যুদ্ধের ধ্বংসাবশেষ সরানোর মতো ভারী যন্ত্রপাতি নেই। তুরস্ক যেগুলো পাঠিয়েছে, সেগুলো ইসরায়েল তখনো রাফা সীমান্তে আটকে রেখেছে।
ফলে এই চুক্তির প্রথম ধাপই ছিল সবচেয়ে সহজ ধাপ। এর পরের ধাপ কী হবে, আর সেটিতে যাওয়া হবেই–বা কীভাবে, তার কোনো কিছু স্পষ্ট নয়।
এ ক্ষেত্রে গেরশন বাসকিনের বক্তব্য হলো ইতিমধ্যেই গাজায় মিসর, কাতার ও তুরস্ক উদ্ধারকর্মী পাঠিয়েছে। মিসর ও জর্ডানে ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনী হিসেবে মোতায়েন করার জন্য ফিলিস্তিনিদের প্রশিক্ষণ চলছে।
চুক্তিতে ফিলিস্তিনিদের নিয়ে গঠিত টেকনোক্র্যাট সরকারের হাতে অস্ত্র সমর্পণে হামাস রাজি হয়েছে।
সেই সরকারের সদস্য হিসেবে মিসর ১৫ জনের নামের তালিকা দিয়েছে। সেখানে ফিলিস্তিনের সব কটি দল-উপদলের প্রতিনিধি রয়েছেন। রয়েছেন হামাসের প্রতিনিধিও। ইসরায়েল আলাদাভাবে ১৫ জনের নাম প্রস্তুত করছে।
সব দেশের প্রস্তাবিত নাম থেকে ফিলিস্তিনি সরকার গঠিত হবে। সেই সরকারের কাছে হামাস তাদের অস্ত্র সমর্পণ করবে। আন্তর্জাতিক অর্থায়নে সেই অস্ত্র তাদের কাছ থেকে ক্রয় করে নেওয়া হবে এবং হামাস সদস্যদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হবে।
কিন্তু এখানে সবচেয়ে মৌলিক যে প্রশ্ন বাদ পড়ে গেছে, সেটি হলো এই প্রক্রিয়ার শেষে কি একটা স্বাধীন সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হবে? মিয়ারশেইমারের ভাষায় এই চুক্তির ফলে তাৎক্ষণিক লড়াই বন্ধ হয়েছে।
দৈনন্দিন ফিলিস্তিনিদের যে রক্তপাত আর প্রাণহানি, তা বন্ধ হয়েছে বটে। এটুকুই পাওনা। এটিও টিকবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু এই চুক্তির ধারাবাহিকতায় ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হবে, সেই সম্ভাবনা একদম শূন্য।
আর চুক্তির কোনো পয়েন্টেও এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। ওদিকে প্রথমবারের মতো ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সদম্ভে প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছে, কখনোই ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হবে না।
ইতিপূর্বে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালে কেউ এ রকম ঘোষণা দেননি। যদিও তাঁদের সবারই অঘোষিত নীতি এটিই ছিল।
আর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত না হলে নিজ অধিকারের পক্ষে ফিলিস্তিনিদের অস্ত্র নিবারণ করা সম্ভব হবে? দল হামাস হয়তো থাকবে না, কিন্তু ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার চেতনা ও লড়াই-সংগ্রাম কি থাকবে না?
সে কারণেই সবাই সতর্ক করে বলছেন, হামাস কোনো দলের নাম নয়, এটি চেতনা আর মতাদর্শের নাম।
ফলে হামাসকে বিলুপ্ত করা হলেও স্বাধীন সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র যত দিন না প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, তত দিন শান্তি আসছে না। না ফিলিস্তিনে, না মধ্যপ্রাচ্যে।
তাই এই চুক্তি টিকিয়ে রাখতে হলে অবশ্যই এমন প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে, যা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বপ্নকে বাস্তব করে তুলবে।
রাকিবুল হাসান লেখক ও অনুবাদক