সম্পাদকীয় প্রকাশনার সময়: মঙ্গলবার ২৫, জুন ২০২৪

বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

Share on:

বিদ্যুৎ খাতে লোকসান এড়াতে সরকার ভর্তুকি ও গ্রাহক পর্যায়ে কয়েক দফা মূল্যবৃদ্ধির পরও পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটেনি। সোমবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-সরকারের ভুলনীতির কারণে ২০২৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) লোকসানের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৮ হাজার কোটি টাকা।


রোববার রাজধানীতে বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতে বাজেট বরাদ্দ নিয়ে এক আলোচনা সভায় এ তথ্য জানানো হয়। জানা যায়, বিতরণ ও সঞ্চালন লাইনের সীমাবদ্ধতার কারণে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ফলে উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ থাকার পরও লোডশেডিং হচ্ছে। আবার বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে বিপুল পরিমাণ ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে। ফলে বিপিডিবির লোকসান বাড়ছে। এছাড়া সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে পরিকল্পনা নিয়েছে, সেটিও উচ্চাভিলাষী। কারণ, ওই সময় ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত রিজার্ভ ধরেও সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎই যথেষ্ট হবে।

আসলে দেশে এখন যে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা তৈরি হয়েছে, তা ২০৩০ সালেও প্রয়োজন হবে না। কারণ দেশে এখন ১৪ হাজার মেগাওয়াট পাওয়া গেলেও বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ৩০ হাজার ৭৩৮ মেগাওয়াট। আগামী ছয় বছরে এ চাহিদা দাঁড়াতে পারে ১৯ হাজার ৪০০ মেগাওয়াটে। উৎপাদনের ২৫ শতাংশ রিজার্ভ ধরলেও তখন ২৩ হাজার ২৫২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ হলেই হবে। এত উৎপাদন সক্ষমতার পরও অবশ্য লোডশেডিং বন্ধ হয়নি। দেশে গড়ে ১১শ মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, লোডশেডিং, জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে অনেক শিল্পকারখানার কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে। সরকারের রাজস্ব আয়ও সামগ্রিকভাবে কমেছে। প্রভাব পড়েছে কর্মসংস্থানেও।

বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের উন্নয়নে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের বিকল্প নেই। এজন্য সরকারের প্রতিটি স্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা দরকার। আমরা মনে করি, লোকসান এড়াতে উচ্চমূল্যের জ্বালানিনির্ভরতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধানে আরও বেশি সচেষ্ট হতে হবে। স্মার্ট গ্রিড ব্যবস্থায় উত্তরণের জন্য সরকারকে কাজ করতে হবে। দেশের বিদ্যুৎ খাত বড় ধরনের সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে বলে আগে থেকেই খাতসংশ্লিষ্টরা অভিযোগ জানিয়ে আসছেন। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়, পিডিবি ও বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিসহ বিভিন্ন স্থানে দুর্নীতিবাজরা সক্রিয়। তাদের তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আজ এ খাতের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা মনে করি, অপ্রয়োজনে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রেখে এগুলোর পেছনে মোটা অঙ্কের ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার কোনো যুক্তি নেই। ভর্তুকি বন্ধ কিংবা গ্রাহক পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধি নয়, বরং লোকসান এড়াতে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার। পাশাপাশি বিদ্যুৎ খাতে অযৌক্তিক উন্নয়ন প্রকল্প হাতে না নিয়ে বরং অবৈধ সংযোগ, দুর্নীতি, সিস্টেম লস বন্ধ করে সরবরাহের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে নজর দেওয়া দরকার। ভুলে গেলে চলবে না, সরকারি সেবা খাতে ভর্তুকি দেওয়া হয় জনস্বার্থে। কারণ জনগণের জন্যই সরকার, জনগণের জন্যই রাষ্ট্র। লোকসান কমিয়ে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।

দৈনিক যুগান্তর