মসজিদ কমিটির সভাপতির আচরণ
Share on:
আমাদের যে ঈদ, তা শুধু আনন্দের বিষয় নয়, ইবাদতের প্রসঙ্গও থাকে সেখানে। ফলে ঈদের বাহ্যিক রূপের চাইতে এর অন্তর্গত বার্তা আমাদের জন্য অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। ক’দিন আগে আমরা কোরবানীর ঈদ উদযাপন করলাম।
আমরা জানি, কোরবানীর ঈদে পশু জবাই একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তবে ঈদের সালাতের আগে এই কাজটি করা যাবে না। আগে সালাত, তারপর পশু কোরবানী। পশু কোরবানী করতে হবে মহান আল্লাহর নামে। এরপর আসে গোস্ত বন্টনের বিষয়। এ ক্ষেত্রে উত্তম হলো, গোস্ত তিন ভাগ করে দুইভাগ গরীব-দুঃখী এবং আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের মধ্যে বন্টন করা, আর এক ভাগ নিজে নেওয়া। তবে প্রয়োজনের নিরিখে এই বন্টনে কম-বেশি করা যেতে পারে। এমন বাস্তবতায় উপলব্ধি করা যায় যে, ইসলামের ইবাদত-বন্দেগী, উৎসব তথা সর্বক্ষেত্রেই রয়েছে বিধিবিধান এবং কল্যাণ চেতনা।
মসজিদ ব্যবস্থাপনার বিষয়টিও ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মসজিদ ব্যবস্থাপনায় কমিটির দায়িত্ব কি, ইমামের মর্যাদা ও কর্তব্য কি তা স্পষ্ট থাকা প্রয়োজন। কিন্তু গাজীপুরের শ্রীপুর মসজিদ কমিটির সভাপতি এ কেমন কান্ড করে বসলেন? তার কোরবাণীর গরু একটু দেরিতে জবাই করায় তিনি সম্মানিত ইমামকে লাঞ্ছিত করলেন। এমন কাজে সভাপতি পদ এবং কোরবাণীর মর্যাদা রক্ষিত হলো কী? উল্লেখ্য যে, লাঞ্ছিত ইমাম আবুবকর সিদ্দিক বায়তুন নূর জামে মসজিদে ইমামতি করতেন। লাঞ্ছনার পর মসজিদ কমিটির সভাপতি কফিল উদ্দিন ইমাম সাহেবকে মৌখিকভাবে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতিও দিয়ে দেন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রচারিত হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখান মানুষ। ঘটনার পর ইমাম সাহেব ভয়ে এলাকা ছেড়ে নিজ গ্রামের বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। ২০ জুন দুপুরে লাঞ্ছনার শিকার ইমাম সাহেব ও অভিযুক্ত সভাপতিকে নিয়ে মসজিদ প্রাঙ্গণে আলোচনায় বসেন শ্রীপুর উপজেলা ওলামা পরিষদ ও ইমাম সমিতির লোকজন। তাদের উপস্থিতিতে মসজিদ কমিটির সভাপতি কফিল উদ্দন তার ভুল স্বীকার করে বলেন, ‘আমি এই ঘটনায় ক্ষমাপ্রার্থী। আমরা দুইপক্ষই বিষয়টির মীমাংসা করেছি। আমরা ইমামকে চাকরিতে পুনর্বহাল করেছি। তার বেতনও বাড়ানো হয়েছে।’
মসজিদ কমিটির অভিযুক্ত সভাপতি তার অন্যায় আচরণের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। আর মজলুম ইমাম সাহেবকে শুধু চাকরিতে পুনর্বহালই করা হয়নি, বেতনও বাড়ানো হয়েছে। এসব তো হলো, কিন্তু খুশি হওয়ার মতো কোনো কিছু তো সেখানে খুঁজে পাওয়া গেলো না। সভাপতি বললেন, ইমাম সাহেবকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল কোন কারণে, কোন বিধানে? সভাপতির গরু একটু দেরিতে কোরবানী হলে কি কাউকে লাঞ্ছিত করা যায়, করা যায় চাকরীচ্যুত? আর হঠাৎ করে ইমাম সাহেবের বেতনই বা বাড়ানো হলো কোন কারণে? উপলব্ধি করা যায়, সেখানে নিয়ম-নীতি ও বিধি-বিধানের কোনো বালাই নেই। সভাপতি সাহেব যা চান তাই হয়। এমন স্বেচ্ছাচারিতা তো মসজিদ কমিটির নামে চলতে পারে না। আর এমন আচরণে কোরবানী বা ধর্মাচরণের কোনো পরিচয়ও পাওয়া গেলো না।