হজযাত্রীদের ব্যয় প্রসঙ্গে
Share on:
পঞ্চমবারের মতো সময় বাড়িয়েও বাংলাদেশিদের জন্য নির্ধারিত হজ্বের কোটা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। তথ্যাভিজ্ঞরা অভিমত প্রকাশ করে বলেছেন, সরকারের ভেতরে এমন কিছু লোকজন ঘাপটি মেরে বসে রয়েছে, যারা নানা অজুহাত তৈরি করছে- যাতে বাংলাদেশ থেকে হজ্বযাত্রীদের সংখ্যা অনেক কমে যায়।
আশিকুল হামিদ
জিলহজ মাস আসতে এখনও দেরি থাকলেও সম্ভাব্য ব্যয় এবং সরকারের নীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশের মুসলিম জনগণের মধ্যে এরই মধ্যে নানামুখী আলোচনা শুরু হয়েছে। বলাবাহুল্য, সকল আলোচনার বিষয়বস্তুই এবারের হজ্ব। সৌদি আরব সিদ্ধান্ত নেয়ার পর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চলতি বছর ১৪৪৫ হিজরি তথা ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ্বে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। অন্য দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি- এক লাখ ৫৯ জন যাবেন জনবহুল মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়া থেকে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পাকিস্তান। সেদেশ থেকে যাবেন ৮১ হাজার ১৩২ জন। তৃতীয় স্থানে থাকা ভারত থেকে যাবেন ৭৯ হাজার ২৩৭ জন।
এরপরই এসেছে বাংলাদেশের নাম। হজ্বের জন্য প্রতিজন বাংলাদেশির লাগবে ৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। টাকার কারণে তো বটেই, মার্কিন ডলারকেন্দ্রিক ঘটনাপ্রবাহের কারণেও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে হজ্বযাত্রীদের মধ্যে। কারণ, হজ্বযাত্রীদের জন্য মার্কিন ডলারের বিপরীতে মূল্য কমানোর কোনো বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে হজ্বযাত্রীদের সকলকেই সরকার নির্ধারিত দরে টাকা দিয়ে ডলার কিনতে ও ভাঙাতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় তারা ক্ষতিগ্রস্তও হবেন যথেষ্ট পরিমাণে। উল্লেখ্য, বেশ কয়েক মাস ধরেই বাংলাদেশে প্রতি মার্কিন ডলার ১২০/১২৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। যদিও সরকারিভাবে ১০৯/১১০ টাকার কথা জানানো হচ্ছে। যার অর্থ, হজ্বে যেতে হলে প্রত্যেক বাংলাদেশিকে ডলারের জন্য অস্বাভাবিক পরিমাণে ডলার ব্যয় করতে হবে।
হজ্বেযাত্রীদের জন্য আশান্বিত হওয়ার মতো কিছু কারণের কথাও অবশ্য শোনা যাচ্ছে। এরকম একটি খবর হলো, কিছুদিন আগে ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি হজ্বযাত্রীদের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য সুপারিশ করেছে। কমিটির পক্ষ থেকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। এই সুপারিশ মানা হলেও হজ্বযাত্রীরা কিছুটা স্বস্তি পাবেন বলে মনে করা হচ্ছেÑ যদিও সিদ্ধান্তের জন্য ধর্মমন্ত্রণালয়ের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে হবে। সংসদীয় কমিটির একজন সদস্য সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, হজ্ব সম্পূর্ণরূপে ধর্মীয় বিষয় বলে এতে ব্যবসা বা মুনাফার কথা চিন্তা করা উচিত নয়। তাছাড়া হজে¦র সময় রাজনৈতিক বিবেচনায় বহু নেতা-কর্মী এবং বিভিন্ন খাতে সেবক নামধারীদের সরকারি খরচে নিয়ে যাওয়া হয়- বাস্তবে যাদের কোনো কাজ থাকে না। এটাও বন্ধ করা দরকার। এভাবে প্রতি বছরই সরকারকে বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয় থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
এ প্রসঙ্গেই বিশেষ করে উঠেছে বিমান ভাড়ার কথা। কারণ, স্বাভাবিক সময়ে ঢাকা থেকে জেদ্দা পর্যন্ত বিমান ভাড়া যেখানে ৮০/৮৫ হাজার টাকা, হজ্বের সময় সেখানে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে এক লক্ষ ৮৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ না থাকলেও ভাড়া বাড়ানো হয়েছে প্রায় এক লক্ষ টাকা। একই কারণে হজ্বযাত্রীদের সংখ্যাও আশংকাজনকভাবে কমে যাচ্ছে বলে প্রকাশিত খবরে জানানো হয়েছে। কথাটা ধর্ম মন্ত্রণালয়ও স্বীকার করেছে। অনেকে এমনকি স্থলপথে এবং নৌপথে হজ্বে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলেও জানা যাচ্ছে।
একই কারণে বাংলাদেশিদের জন্য নির্ধারিত হজ্বের কোটাও পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। সর্বশেষ ৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত খবরে জানানো হয়েছে, কয়েকদিনের ব্যবধানে পরপর পঞ্চমবারের মতো সময় বাড়িয়েও বাংলাদেশিদের জন্য নির্ধারিত হজ্বের কোটা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যখন হজ্বে যাওয়ার পরিবর্তে উমরাহ করার ব্যাপারেই বাংলাদেশিদের মধ্যে অনেক বেশি আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একই কারণে তথ্যাভিজ্ঞরা অভিমত প্রকাশ করে বলেছেন, সরকারের ভেতরে এমন কিছু লোকজন ঘাপটি মেরে বসে রয়েছে, যারা নানা অজুহাত তৈরি করছে- যাতে বাংলাদেশ থেকে হজ্বযাত্রীদের সংখ্যা অনেক কমে যায়। উল্লেখ্য, অমন অবস্থায় বাংলাদেশের যতো কমবে ভারতের সংখ্যা ততোই বাড়বে। এভাবেও বাংলাদেশকে যথেষ্ট পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে।
প্রসঙ্গক্রমে ভারতের উদাহরণ টেনে বলা হচ্ছে, ‘হিন্দুরাষ্ট্র্র’ হিসেবে পরিচিতি থাকলেও ভারত থেকে যেখানে তিন লাখ টাকায় হজ্ব করা সম্ভব হচ্ছে সেখানে রাষ্ট্রধর্ম এখনও ইসলাম হলেও বাংলাদেশের মানুষের ওপর দ্বিগুণেরও বেশি টাকা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। বিষয়টিকে একবাক্যে অগ্রহণযোগ্য বলেছেন সংশ্লিষ্ট সকলে। বলা হচ্ছে, এভাবে ব্যয় বাড়ানোর মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে হজ্বে যাওয়ার বিষয়ে মানুষের আগ্রহ কমানোর পদক্ষেপই নেয়া হয়েছে। এমন কোনো সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপকে কোনোক্রমেই সমর্থন করা যায় না। হজ্বের মতো ধর্মীয় একটি বিষয় নিয়ে মুনাফাখোরের মতো কর্মকান্ড অনতিবিলম্বে বন্ধ করা দরকার। আমরা মনে করি, সরকারের উচিত বিশেষ করে হজ্বের ব্যাপারে নমনীয় মনোভাব প্রদর্শন করা এবং সম্ভাব্য সকল পন্থায় হজ্বযাত্রীদের জন্য খরচ কমিয়ে আনা।
উল্লেখ্য, গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতি মার্কিন ডলারের মূল্য ছিল ৩ দশমিক ৭৬ রিয়াল। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সৌদি রিয়ালের মূল্য হয়েছে ৩ দশমিক ৭৫ রিয়াল। অর্থাৎ পরিমাণে সামান্য হলেও সৌদি রিয়ালের মূল্য কমেছে। কিন্তু সে কারণে বাংলাদেশের হজ্বযাত্রীরা উপকৃত বা লাভবান হতে পারবেন না। এর কারণ, উচিত যেখানে ছিল মার্কিন ডলারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে খরচের হিসাব ঠিক বা নির্ধারণ করা, ধর্মমন্ত্রণালয় সেখানে খরচের ব্যাপারে স্বেচ্ছাচারিতা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
প্রমাণ হিসেবে বিশেষ করে বিমান ভাড়ার কথা উল্লেখ করা হচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে ঢাকা থেকে জেদ্দা পর্যন্ত বিমান ভাড়া যেখানে ৮০/৮৫ হাজার টাকা, হজ্বের সময় সেখানে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে এক লক্ষ ৮৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ না থাকলেও ভাড়া বাড়ানো হয়েছে অন্তত এক লক্ষ টাকা। একই কারণে হজ¦যাত্রীদের সংখ্যাও আশংকাজনকভাবে কমে যাচ্ছে বলে প্রকাশিত খবরে জানানো হয়েছে। কথাটা ধর্ম মন্ত্রণালয়ও স্বীকার করেছে। অনেকে এমনকি স্থলপথে এবং নৌপথেও হজে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানা যাচ্ছে। প্রসঙ্গক্রমে ভারতের উদাহরণ টেনে বলা হচ্ছে, ‘হিন্দুরাষ্ট্র্র’ হিসেবে পরিচিতি থাকলেও ভারত থেকে যেখানে তিন লাখ টাকায় হজ্ব করা সম্ভব হচ্ছে সেখানে রাষ্ট্রধর্ম এখনও ইসলাম হলেও বাংলাদেশের মানুষকে দ্বিগুণেরও বেশি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। বিষয়টিকে একবাক্যে অগ্রহণযোগ্য বলেছেন সংশ্লিষ্ট ও তথ্যাভিজ্ঞ সকলে। বলা হচ্ছে, এভাবে ব্যয় বাড়ানোর মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে হজ্বে যাওয়ার বিষয়ে মানুষের আগ্রহ কমানোর নেতিবাচক পদক্ষেপই নেয়া হয়েছে। এমন কোনো সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপকে কোনোক্রমেই সমর্থন করা যায় না। সরকারের উচিত বিশেষ করে হজ্বের ব্যাপারে নমনীয় মনোভাব প্রদর্শন করা। হজ্বের মতো ধর্মীয় একটি বিষয় নিয়ে মুনাফাখোরের মতো কর্মকান্ড অনতিবিলম্বে বন্ধ করা দরকার।
সূত্র: দৈনিক সংগ্রাম