মালদ্বীপে কী হচ্ছে
Share on:
ভারত বরাবরই মালদ্বীপকে তার একনিষ্ঠ মিত্ররাষ্ট্র হিসাবেই গণ্য করে এসেছে। তাদের এতদিনের সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে গিয়ে চীনের দিকে ঝুঁকে যাওয়া, ভারত কোনোদিনই মেনে নিতে পারবে না। তাছাড়া, চীন দীর্ঘদিন ধরে এ সমুদ্রপথে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে আসছে।
একেএম শামসুদ্দিন
মোহাম্মদ মুইজ্জু প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ভারতের সঙ্গে মালদ্বীপের যে কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়েছিল, সম্প্রতি নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে মালদ্বীপের তিনজন উপমন্ত্রীর কিছু অপ্রত্যাশিত মন্তব্য, দুই দেশের সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটিয়েছে। প্রতিবাদে ভারতব্যাপী তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়; ফলে মালদ্বীপ সরকার এসব উপমন্ত্রীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছিল। এ ঘটনা যখন ঘটে, তখন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু ছিলেন চীন সফরে। মালদ্বীপে এতদিন প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, নির্বাচিত হওয়ার পর প্রেসিডেন্টের বিদেশ সফর শুরু হতো ভারত সফরের মধ্য দিয়ে। সাম্প্রতিককালে মালদ্বীপের কোনো প্রেসিডেন্ট ভারত ডিঙিয়ে চীন সফরে যাননি। ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর মোহাম্মদ নাশিদের প্রথম সফরের গন্তব্য ছিল ভারত। এরপর ২০১২ সালে মোহাম্মদ ওয়াহিদ ও ২০১৪ সালে আবদুল্লাহ্ ইয়ামিন চীনপন্থি হলেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম বিদেশ সফরের গন্তব্য হিসাবে ভারতকেই বেছে নিয়েছিলেন; কিন্তু প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু সেই প্রথা ভেঙে প্রথম সফর করেন তুরস্কে। সেখান থেকেই পাঁচদিনের সফরে চীন যান। এ বিষয়টি ভারতের ভালো লাগেনি। উল্লেখ্য, এ দুদেশের সঙ্গেই ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক ভালো নয়।
চীন সফর শেষে মুইজ্জুর কিছু ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্যও দুদেশের সম্পর্কে প্রভাব ফেলেছে। তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘মালদ্বীপ কারও বাড়ির উঠান নয়, আমরা ছোট হতে পারি, তাই বলে আমাদের ধমক দিয়ে কথা বলার লাইসেন্স কারও নেই।’ এছাড়া প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু মালদ্বীপে অবস্থানরত ভারতীয় সেনাসদস্যদের ফিরে যেতে বলেন। ১৪ জানুয়ারি মালদ্বীপের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভারতীয় হাইকমিশনারের উপস্থিতিতে দুদেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয়। বৈঠকে ১৫ মার্চের মধ্যে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে ভারতকে অনুরোধ জানানো হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২ ফেব্রুয়ারি নয়াদিল্লিতে মালদ্বীপ ও ভারতের শীর্ষপর্যায়ের কূটনীতিকদের মধ্যে এক বৈঠক হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ভারত মে মাসের মধ্যে মালদ্বীপ থেকে সেনাসদস্যদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। ভারতীয় সেনাদের এ প্রত্যাবর্তন ঘটবে দু-ধাপে। মার্চে ফিরে যাবে প্রথম দল এবং বাকিদের প্রত্যাহার করা হবে মে মাসে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারতীয় সেনাসদস্য প্রত্যাহার অনেকটাই নির্ভর করছে আগামী ১৭ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সংসদীয় নির্বাচনের ফলাফলের ওপর। এ নির্বাচনকে ঘিরে মুইজ্জু প্রশাসন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। মুইজ্জুবিরোধী মালদিভিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টি বা এমডিপি ভারতপন্থি দল। অতএব আসন্ন নির্বাচনে মুইজ্জুর দল যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায়, তাহলে আগামীতে অনেক সিদ্ধান্তই বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে পড়বে। প্রশ্ন হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত মুইজ্জু কি পারবেন তার সিদ্ধান্তে অটল থাকতে? উল্লেখ্য, সম্প্রতি সংসদ-সদস্যদের মধ্যে নজিরবিহীন মারামারির ঘটনা ঘটেছে। মন্ত্রিপরিষদ গঠন নিয়ে এ ঘটনার সূত্রপাত। সংসদে বিরোধীদের চাপে ২২ জনের মন্ত্রিপরিষদ গঠন করতে চাইলেও আপাতত ১৯ জন মন্ত্রী নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে মুইজ্জুকে। সেনাসদস্য ফিরিয়ে নেওয়ার অনুরোধের পাশাপাশি মুইজ্জু, ভারতের সঙ্গে হওয়া সব চুক্তি স্থগিত করে পুনরায় যাচাইয়ের নির্দেশও দিয়েছেন। উল্লেখ্য, মালদ্বীপ ইতোমধ্যেই ভারতের সঙ্গে সমুদ্র জরিপ চুক্তি নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উপকূলীয় জলসীমা এবং এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনের মানচিত্র তৈরির জন্য ২০১৯ সালে ভারতের সঙ্গে মালদ্বীপের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল। শর্ত অনুসারে পাঁচ বছর পরপর এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নবায়ন হওয়ার কথা। সে অনুসারে আগামী জুনে এ চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে।
সমুদ্রসীমায় নজরদারির জন্য যে কাজ এতদিন ভারতীয় সেনাসদস্যরা করে এসেছেন, সেই কাজ এখন থেকে নিজেরাই করবে বলে মুইজ্জু সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা, দেশের সমুদ্রসীমায় নজরদারি চালাতে ড্রোন কেনার জন্য তুরস্কের সঙ্গে ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের একটি চুক্তি করেছে। এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু তার বক্তব্যে দেশের ভারতনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসার ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, ‘আমাদের দ্বীপগুলো ছোট হলেও দেশ হিসাবে আমরা অনেক বড়। আমাদের দেশের এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন ৯ লাখ বর্গকিলোমিটার ধরে বিস্তৃত। ভারত মহাসাগর কোনো দেশের নিজস্ব সম্পত্তি নয়। এ দীর্ঘ সমুদ্রসীমায় নজরদারি চালানোর মতো শক্তি ও ক্ষমতা অর্জনের চেষ্টা শুরু করেছি। আমার বিশ্বাস, কারও সাহায্য ছাড়াই আমরা তা করতে পারব।’ এ ধরনের সরাসরি বক্তব্যের পরই মূলত ভারতের সঙ্গে মুইজ্জু সরকারের বিরোধ অন্য মাত্রা পায়।
মালদ্বীপে ভারতীয় সামরিক উপস্থিতি নতুন কোনো ঘটনা নয়। ১৯৮৮ সালে মালদ্বীপের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মামুন আবদুল গাইয়ূমকে এক সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাতের চেষ্টা করা হলে সেখানে কমান্ডো বাহিনী পাঠিয়ে সে প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দেয় ভারত। সে সময় মালদ্বীপের জনগণ স্বাগত জানালেও এখন তাদের ভূখণ্ডে ভারতীয় বাহিনীর উপস্থিতি পছন্দ করছে না। তারা ভারতীয় সেনাদের মালদ্বীপের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হিসাবে দেখছে। এরই মধ্যে তারা বিক্ষোভ সমাবেশ করে ভারতের সেনা সরিয়ে নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছে। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট সোলিহ, ভারতের সঙ্গে যেসব চুক্তি করেছিলেন, সে চুক্তিগুলোকে অনেকেই দেশবিরোধী বলে আখ্যা দিয়েছেন। বিশেষ করে আদালতের রায় সংক্রান্ত যে চুক্তি করা হয়েছিল, সে সম্পর্কে তাদের আপত্তি আছে। এ চুক্তি অনুযায়ী, মালদ্বীপের বেশকিছু ইস্যুতে ভারতীয় আদালতের রায়কে চূড়ান্ত রায় বলে মেনে নেওয়ার শর্তজুড়ে দেওয়া হয়েছে। মালদ্বীপের জনগণ মনে করেন, এ চুক্তির মাধ্যমে তাদের নাগরিক অধিকারকে খর্ব করা হয়েছে। তাদের বক্তব্য, ‘নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিদেশি আদালতের রায় কেন আমাদের মেনে নিতে হবে।’
এ চুক্তি ছাড়াও সোলিহ সরকার এমন কিছু সামরিক চুক্তি করেছিলেন, যা মালদ্বীপের স্বার্থবিরোধী বলে মনে করা হচ্ছে। ২০২০ সালে মালদ্বীপের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নিরাপত্তা তদারকির জন্য ভারত একটি ডোর্নিয়ার এয়ারক্রাফট মালদ্বীপকে দেয়। বলা হয়েছিল, মালদ্বীপে উদ্ধার ও ত্রাণ অভিযান, অবৈধ মাছ শিকার ও মাদক চোরাচালানসহ মানব পাচার ঠেকাতে এ এয়ার ক্রাফট ব্যবহার করা হবে। এ ছাড়াও এর আরেকটি কাজ হচ্ছে, আঞ্চলিক জলসীমায় বহিঃশক্তির যে কোনো চলাচলের ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখা। তবে মুশকিল হলো, এ এয়ার ক্রাফট চালানোর সক্ষমতা মালদ্বীপের পাইলটদের ছিল না। এ কারণে এয়ার ক্রাফটগুলো ভারতীয় সেনাসদস্যরাই অপারেট করে আসছে। তাছাড়াও ভারত একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় মালদ্বীপে নজরদারির জন্য হেলিকপ্টারও মোতায়েন করেছে। তারও আগে, ২০০৯ সালে ভারতপন্থি সাবেক প্রেসিডেন্ট নাশিদের আমলে মালদ্বীপের ২৬টি প্রধান দ্বীপে ভারত রাডার ব্যবস্থা স্থাপন করে। এ রাডারগুলোয় ভারতের উপকূলীয় কমান্ডের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা হয়। এছাড়া ছিল ভারতীয় নৌবাহিনী ও মালদ্বীপের জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর যৌথ নজরদারি এবং টহল কার্যক্রম। ২৫ শয্যার একটি সামরিক হাসপাতালও নির্মাণ করে দেয় ভারত। এসব চুক্তির মধ্য দিয়ে মালদ্বীপ ভারতীয় নিরাপত্তা বলয়ের অধীনে চলে যায় বলে সামরিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন।
১৯৬৫ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে মালদ্বীপ বরাবরই ভারতপন্থি দেশ ছিল। স্বাধীনতার আগে মালদ্বীপ মূলত ছিল ব্রিটিশ মিলিটারি বেইজ। স্বাধীনতার পর ভারতই প্রথম স্বীকৃতি দেয় মালদ্বীপকে। ভারতই প্রথম দেশ, রাজধানী মালেতে আবাসিক মিশন খুলেছিল। স্বাধীনতার প্রথম চার দশক মালদ্বীপ ভারতের মাধ্যমেই বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখত। ২০০৪ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী মালদ্বীপের কূটনৈতিক মিশন ছিল মাত্র চারটি, যার একটি হলো নয়াদিল্লিতে। ২০১০ সাল পর্যন্ত সবই ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু এরই মধ্যে চীন হঠাৎ করেই ভারত-মালদ্বীপের সম্পর্কের মধ্যে ঢুকে পড়ে। সেই সময়ে পাকিস্তান ও শ্রীলংকাসহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে চীন ব্যাপক ঋণ প্রদান ও উন্নয়ন কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। ২০১২ সালে মালদ্বীপও চীন থেকে ঋণ নিয়ে মালেতে বিমানবন্দর নির্মাণ করে। তারপর ২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট নাশিদ ক্ষমতাচ্যুত হলে ক্ষমতায় বসেন তারই ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ওয়াহিদ। ওয়াহিদের আমলে চীনের অর্থ সাহায্যে মালদ্বীপে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ শুরু হয়। ফলে, চীনের সঙ্গে ওয়াহিদের একটি বিশেষ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তার আমলেই মালদ্বীপ মূলত ভারত বলয়ে থেকে বেরিয়ে যেতে শুরু করে। ২০১৩ সালে চীনপন্থি আবদুল্লাহ্ ইয়ামিন দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে মালদ্বীপ পুরোপুরি চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। ইয়ামিনের আমলেই প্রথম চীনের রাষ্ট্রপ্রধান শি জিন পিং মালদ্বীপ সফর করেন।
ভারত মহাসাগরের ওপর ১১৯৪টি ছোট ছোট দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত ক্ষুদ্র এ রাষ্ট্রটির প্রতি চীন ও ভারতের আগ্রহের অন্যতম কারণ এর ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান। দক্ষিণ চীন সাগর থেকে শুরু করে ভারত মহাসাগরের এ সমুদ্রপথে মালদ্বীপের অবস্থানটি এমন এক স্থানে, যেখান থেকে অনায়াসে বাণিজ্যিক চলাচল পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। পৃথিবীর প্রায় ৬০ শতাংশ বাণিজ্যিক চলাচল হয় এ সমুদ্রপথে। প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যিক পণ্য মালাক্কা প্রণালি হয়ে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও ইউরোপে সরবরাহের জন্য এ সমুদ্রপথ ব্যবহৃত হয়। মালদ্বীপ এ কারণেই ভারত মহাসাগর অঞ্চলের বাণিজ্যিক সমুদ্রপথে নজরদারির সুবিধার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হয়ে আসছে। চীন ও ভারতের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রেরও আগ্রহ বাড়ছে মালদ্বীপের ব্যাপারে। মালদ্বীপের ভৌগোলিক অবস্থান এবং যুক্তরাজ্যের নিয়ন্ত্রণাধীন ডিয়েগো গার্সিয়া, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের নৌ ও সামরিক ঘাঁটি আছে, সেই দ্বীপের নিকটবর্তী হওয়ার কারণেও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এ ক্ষুদ্র রাষ্ট্রটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হয়েছে। মালদ্বীপের এ কৌশলগত অবস্থানের কথা বিবেচনা করে ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্র, তাদের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করে। ভারত বাদে যুক্তরাষ্ট্র হলো প্রথম কোনো দেশ, যাদের সঙ্গে মালদ্বীপ প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। বর্তমান বিশ্বরাজনীতির প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের কারণে এ চুক্তির ব্যাপারে ভারত কোনো আপত্তি করেনি।
ভারত বরাবরই মালদ্বীপকে তার একনিষ্ঠ মিত্ররাষ্ট্র হিসাবেই গণ্য করে এসেছে। তাদের এতদিনের সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে গিয়ে চীনের দিকে ঝুঁকে যাওয়া, ভারত কোনোদিনই মেনে নিতে পারবে না। তাছাড়া, চীন দীর্ঘদিন ধরে এ সমুদ্রপথে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে আসছে। ভারত মহাসাগরে আধিপত্য বিস্তার ও বাণিজ্যিক সমুদ্রপথ নিয়ন্ত্রণে চীনের এ প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করতে ভারত প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছে। চীন, আফ্রিকার জিবুতি বন্দর থেকে শুরু করে পাকিস্তানের গোয়াদার বন্দর, শ্রীলংকার হাম্বানটা, মিয়ানমারের রাখাইন গভীর সমুদ্রবন্দর হয়ে থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও হংকংয়ে চীনের বন্দর, অর্থাৎ, দক্ষিণ চীন সাগর থেকে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত প্রভাব বৃদ্ধির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মালদ্বীপ ভারতের নিকটবর্তী দেশ, ভারতের লাক্ষ্মা দ্বীপ থেকে ৭০ নটিক্যাল মাইল এবং মূল ভূখণ্ডের পশ্চিম উপকূল থেকে ৩০০ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থিত। এ অবস্থায়, ঘরের কাছের বন্ধু রাষ্ট্রটি যদি চীনের প্রতি ঝুঁকে থাকে, তাহলে সেটি হবে ভারতের জন্য সত্যিই অস্বস্তিকর।
সূত্র: দৈনিক যুগান্তর