সাক্ষাৎকার প্রকাশনার সময়: শুক্রবার ২৬, জানুয়ারী ২০২৪

বাংলাদেশি সাদ্দাম সেলিমের মার্কিন স্টেট সিনেটর হলেন যেভাবে

Share on:

বাংলাদেশি সাদ্দাম সেলিম ভার্জিনিয়া রাজ্য থেকে স্টেট সিনেটর নির্বাচিত হয়েছেন। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি মুসলিম যিনি স্টেট সিনেটর নির্বাচিত হয়েছেন। তার নির্বাচনী সফলতা এবং জীবনের গল্প নিয়ে প্রদত্ত সাক্ষাতকারটি নিচে তুলে ধরা হলো।


প্রশ্ন : আপনার জন্ম বাংলাদেশের কোথায়? ভার্জিনিয়ায় কবে থেকে বসবাস শুরু করলেন? 

সাদ্দাম সেলিম: আমার জন্ম বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি থানার নবগ্রামে। যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর প্রথমে আমরা ওয়াশিংটন ডিসিতে বসবাস শুরু করি। এরপর বাবা-মাসহ ভার্জিনিয়ায় আসি এবং সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করি। সেখানে আমি জর্জ মেসন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জনপ্রশাসন ও সরকার বিষয়ে এ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করি।

সাদ্দাম সেলিম

প্রশ্ন : পড়ালেখার পাশাপাশি আপনি কি কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন?   

সাদ্দাম সেলিম: আমি পড়ালেখার পাশাপাশি শুরুতে একটি ব্যাংকে এবং পরে একটি অ্যাকাউন্টিং ফার্মে কাজ করেছি। এরপর পড়ালেখা শেষে আমি একটি আর্থিক ব্যবস্থাপনা পরামর্শক সংস্থায় কাজ শুরু করি।

প্রশ্ন : চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে এলেন কেন?

সাদ্দাম সেলিম: আমি কখনও রাজনীতিতে আসার কথা ভাবিনি। তবে যখন কংগ্রেসে, ফক্স নিউজে দেখি বা বিভিন্ন রেডিও অন করলেই দেখি- আমাদের সম্প্রদায় তথা মুসলিম সম্প্রদায় আক্রমণের শিকার। এসব দেখে বা শুনে সবাই শুধু মুখেই বলে যে আমাদের কিছু একটি করতে হবে। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনা। তাই এক পর্যায়ে আমি ভাবলাম আমাদের কমিউনিটির লোকদের, মুসলিম কমিউনিটিকে এবং আরব আমেরিকান কমিউনিটিকে সাহায্য করতে পারি। সেখান থেকেই রাজনীতিতে আসা। এজন্য আমি ২০১৯ সাল থেকে স্থানীয় সরকার, স্কুল বোর্ড, স্টেট ডেলিগেট ও স্টেট সিনেটরদের নির্বাচনে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ শুরু করি। সেখান থেকে নির্বাচনী প্রক্রিয়াটা শিখে ফেলি। 

প্রশ্ন : নির্বাচনে বিজয়ী হতে কি কি করতে হয়েছে আপনাকে?

সাদ্দাম সেলিম: নির্বাচনী কৌশল হিসেবে আমি জনগণের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরি। বন্দুক সহিংসতা, আবাসন বা গণশিক্ষার, বন্ধকী ঋণ পেতে ডাউন পেমেন্ট প্রভৃতি নিয়ে কথা বলেছি। জনগণকে বলেছি আমি এই সমস্যাগুলো কমাতে চাই। বন্দুক সহিংসতা প্রতিরোধ করতে চাই, শিশুদের শিক্ষার বিষয়ে সাহায্য করতে চাই। আমি জনগণের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করি। জনগণের স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়েছি। আমি নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছি। যে কারণে প্রাইমারিতে প্রতিপক্ষের আট হাজার ভোটের বিপরীতে দশ হাজার মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছে। এরপর সাধারণ নির্বাচনে ৩৮ হাজার ৭২৭ (৬৮ শতাংশ) মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছে। বিপরীতে আমার প্রতিপক্ষ পেয়েছেন ১৭ হাজার ৮৭৯ (৩২ শতাংশ) ভোট। 

প্রশ্ন : যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের মূল শক্তি ও দুর্বলতাগুলো কি কি বলে মনে করেন আপনি?

সাদ্দাম সেলিম: যুক্তরাষ্ট্রের মতো অনেক দেশে গণতন্ত্র রয়েছে। কিন্তু এ দেশের গণতন্ত্রের শক্তিশালী দিক হলো যে এখানে সবাই ভোট দান প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারে, সবাই ভোট দিতে পারে। সেইসঙ্গে এদেশের গণতন্ত্রের দুর্বল দিক হলো যোগ্য-অযোগ্য যে কেউ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে। আর এ কারণেই ভালো মানুষের চেয়ে অনেক খারাপ আর অযোগ্য মানুষও নির্বাচিত হয়। তবে এসব নির্বাচিতরা যদি অযোগ্য মানুষ হয়, ভালো কাজ না করে তবে তারা আবার জনগণের ভোটে পরাজিত হয়ে যান। আর এ কারণেই আমেরিকায় ভারসাম্য রয়েছে। আর আমেরিকার গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এখানে জবাবদিহিতা রয়েছে।

প্রশ্ন : আপনি ভার্জিনিয়ার স্টেট সিনেটর হিসেবে কি কি দায়িত্ব পালন করছেন?

সাদ্দাম সেলিম: একজন স্টেট সেনেটর হিসেবে আমাকে পুরো রাজ্যের জন্য বাজেট, বিচার বিভাগীয় নিয়োগ, পাবলিক ট্রান্সপোর্টেশন ফান্ডিং, পাবলিক এডুকেশনের জন্য নীতিমালা তৈরি, দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে এমন সব নীতিমালা তৈরি করতে হয়। ধরুন, আপনি আমার এলাকার বাসিন্দা এবং আপনি ভাঙা রাস্তায় প্রতিনিয়ত আটকে থাকেন! সেক্ষেত্রে আমি স্টেট সিনেটর হিসেবে স্থানীয় সুপারভাইজারকে ডেকে এই রাস্তাটি ঠিক করতে অনুরোধ করব। 

প্রশ্ন : এখানকার বাঙালি সম্প্রদায়ের জন্য কি কি করবেন আপনি?

সাদ্দাম সেলিম: এই স্টেটের বিভিন্ন জায়গায় অনেক বাংলাদেশি কমিউনিটির লোকজন আছে। বিশেষত লাউডন, ফেয়ারফ্যাক্স, আর্লিংটন আর আলেকজান্দ্রিয়ায়। আমি বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছে। আরও বেশি সংখ্যক বাংলাদেশি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে পারে এজন্য বড় ইভেন্টের আয়োজন করছি। বাংলাদেশি কমিউনিটির কেউ ভাল ব্যবসা করছে বা চ্যারিটিতে সাহায্য করছে- তাদের বিষয়গুলো মানুষের নজরে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। 

প্রশ্ন : এদেশের রাজনীতিতে বেশি সংখ্যক বাংলাদেশিকে কীভাবে সম্পৃক্ত করতে পারেন?

সাদ্দাম সেলিম: আমিই প্রথম বাংলাদেশি আমেরিকান হিসেবে এই ভার্জিনিয়া স্টেটের সিনেটর নির্বাচিত হয়েছি। এদেশে আমাদের বাংলাদেশিরা পেশা হিসেবে শুধু ডাক্তার, আইটি ইঞ্জিনিয়ার আর আইনজীবীকেই বেশী পছন্দ করেন। আমি তাদের  বলতে চাই - এসব পেশার বাইরেও রাজনীতিসহ আরো অনেক পেশা রয়েছে যা তারা গ্রহণ করতে পারে। আমি সবার জন্য আমার অভিজ্ঞতার দুয়ার খুলে দিতে চাই। আমার অভিজ্ঞতা নিয়ে বাংলাদেশি কমিউনিটির আরও বেশি সংখ্যক মানুষ এদেশের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে সফল হতে পারে। একজন স্টেট সিনেটর হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসকে আমি এই স্টেট লেভেলে স্বীকৃতি দিতে চাই। আর স্বীকৃতির সেই দিনটি হবে আমাদের বাংলাদেশী কমিউনিটির জন্য বড় আনন্দের! 

প্রশ্ন : আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

সাদ্দাম সেলিম: আমি আগামী চার বছর এই পদে থাকব। এরপর প্রথমে ইউএস কংগ্রেস এবং তারপরে ইউএস সিনেটের পদের জন্য লড়বো। তবে সমস্যা হচ্ছে এখানকার বেশিরভাগ জনগণ ডেমোক্র্যাট। আবার এদের মধ্যে অনেকেই হেভিওয়েট ডেমোক্র্যাট। এসব ডেমোক্র্যাটরা অবসরে যেতে চাননা। আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে - আগামী চার বছরে স্টেট সিনেটর হিসেবে ভার্জিনিয়া স্টেটের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এমন সব ভাল কাজ এবং নীতি প্রণয়ন করা, যাতে করে আমি যখন ইউএস কংগ্রেস বা ইউএস সিনেটের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাইব তখন ভোটাররা আমার কাজকে মূল্যায়ন করবে। 

সূত্র: দৈনিক সমকাল