সম্পাদকীয় প্রকাশনার সময়: শনিবার ২০, জানুয়ারী ২০২৪

ঔদাসীন্যের অবসান চাই

Share on:

জাতীয় বিল্ডিং কোড, তৎসঙ্গে নির্মাণকালীন নিরাপত্তা নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়নে দ্রুত রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট সকলে তৎপর হবেন। সচেতন নাগরিকরাও আলোচ্য বিষয়ে সোচ্চার থাকবেন বলে আমরা মনে করতে চাই। অন্যথায় নির্মাণাধীন ভবন থেকে ইট অথবা নির্মাণসামগ্রিক পড়ে, ঢাকনাবিহীন রাস্তার গর্তে পা পিছলে পতিত হয়ে কিংবা অন্যভাবে মানুষের অমূল্য জীবনের আকস্মিক সমাপ্তি ঘটতেই থাকবে।


ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকাসমূহে পরিকল্পিত নগরায়ণের অংশ হিসেবে বিশেষত ভবন নির্মাণে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশে স্থাপিত রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউক দুঃখজনকভাবে নির্ধারিত দায়িত্ব পালনে অব্যাহত ঔদাসীন্যের পরিচয় দিয়ে আসছে। সম্প্রতি এক রিপোর্টে প্রকাশ, বিদ্যমান ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় রাজউকের ওপর ভবন নির্মাণের নকশা অনুমোদনের পর প্রতিটি পর্যায়ে কাজ তদারকির দায়িত্ব দেয়া হলেও, সংস্থাটির সে-ব্যাপারে কোনও ভ্রƒক্ষেপ নেই। ফলে একদিকে এ মহানগরে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড শুধু নয়; অনুমোদিত নকশাবহির্ভূত নির্মাণযজ্ঞ চলছে, অন্যদিকে ভবন নির্মাণে নিরাপত্তা-সংক্রান্ত নির্দেশনা অমান্য করায় একের পর এক প্রাণঘাতী দুর্ঘটনাও ঘটছে। গত ১১ জানুয়ারি মৌচাক মার্কেটের পাশে নির্মাণাধীন এক ভবন থেকে কংক্রিটের খ- মাথায় পড়া মাত্র বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তার মৃত্যুর ঘটনা সবাই জেনেছেন। একইভাবে গত বছর মোহাম্মদপুরে এক স্কুলশিক্ষার্থী এবং ২০২১ সালে ডেমরায় একজন তৈরি পোশাক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনাও আমরা জানি। বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ লেবার স্টাডিজের তথ্যমতে, গত ১০ বছরে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ১৪  হাজারের বেশি শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এর বড় অংশই নির্মাণশ্রমিক।

ভবন নির্মাণকার্য তদারকিতে প্রতি এলাকায় রাজউকের নিজস্ব ইন্সপেক্টর ও অথরাজইড অফিসার আছেন। তারা নিয়মিত সরেজমিন পরিদর্শন করলেও অন্তত ভবন নির্মাণকালে নিরাপত্তা ঘাটতির বিষয়টি গোচরে আসতো। কিন্তু ওই দায়িত্ব তারা পালন করেন বলে মনে হয় না। আইনে ভবন নির্মাণকাজ তদারকির এখতিয়ার সিটি করপোরেশনকেও দেয়া হয়েছে। তদনুসারে সংশ্লিষ্ট এলাকাসমূহের কাউন্সিলররা অনায়াসে বিষয়টি দেখভাল করতে পারেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক সত্য যে, রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা এ দায়িত্ব পালন তো করেনই না, বরং অনেকে নানা কৌশলে নির্মাণাধীন ভবন মালিকদের কাছ থেকে অবৈধ উপায়ে অর্থ আদায় করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

জাতীয় বিল্ডিং কোড, তৎসঙ্গে নির্মাণকালীন নিরাপত্তা নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়নে দ্রুত রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট সকলে তৎপর হবেন। সচেতন নাগরিকরাও আলোচ্য বিষয়ে সোচ্চার থাকবেন বলে আমরা মনে করতে চাই। অন্যথায় নির্মাণাধীন ভবন থেকে ইট অথবা নির্মাণসামগ্রিক পড়ে, ঢাকনাবিহীন রাস্তার গর্তে পা পিছলে পতিত হয়ে কিংবা অন্যভাবে মানুষের অমূল্য জীবনের আকস্মিক সমাপ্তি ঘটতেই থাকবে। অনাকাক্সিক্ষতভাবে মানুষের হৃদয়ের রক্তক্ষরণও অব্যাহত থাকবে।

সূত্র: দৈনিক সংগ্রাম

তারিখ: ২০ জানুয়ারি, ২০২৪