মৌলিক অধিকার রক্ষা করা হোক
Share on:
সরকার নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে গেছে। বিরোধীদের পক্ষ থেকে আন্দোলনের কর্মসূচি নেই। এই অবস্থায় বিরোধীদের ওপর দমন পীড়নের প্রয়োজনীয়তা নেই। সাধারণ জীবনযাপনে বাধা দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। আমরা মনে করি, এ ধরনের হিংসাত্মক নীতি থেকে সরকারের সরে আসা উচিত।
রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশে বিরোধীদের ওপর নজিরবিহীন পীড়ন হয়েছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা একেবারে সঙ্কুচিত হওয়ার পর বাসাবাড়িতে থাকা ও ন্যূনতম নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার থেকেও বঞ্চিত হয়েছে নাগরিকদের বিশাল একটা অংশ। নির্বাচনের আগে সরকারের পীড়ন চরম আকার ধারণ করে। বিরোধীদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে এই সময় জেলে পুরে দিয়েছে সরকার। সক্রিয় বাকি নেতাকর্মীদের ফেরারি জীবনযাপন করতে হচ্ছে। সরকারি দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি পুলিশের বিমাতাসুলভ আচরণের কারণে তারা মৌলিক অধিকার হারিয়েছে। নির্বাচনের সময় মাঠে ঘাটে পরিত্যক্ত জায়গায় তাদের রাত যাপনের বহু ছবি প্রকাশ হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে কতকাল বিরোধীদের এমন কষ্টকর জীবনযাপনে বাধ্য করবে সরকার।
সহযোগী একটি দৈনিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতাকর্মীদের দুঃসহ জীবন নিয়ে প্রতিবেদনে লিখেছে, দলটির প্রায় সবার জীবনের একটি সমান পরিণতি নেমে এসেছে। হামলা মামলায় তাদের জীবন যেন একটি ‘কষ্টগাথা’। দলটির তৃণমূল থেকে শীর্ষনেতা প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলার পাহাড়। জেলে থাকা নেতাকর্মীদের নিজেদের পরিণতি নিয়ে ভাবার সুযোগ কম। আমাদের বিচারব্যবস্থা নিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জনমানুষের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ রয়েছে। বিচার প্রার্থীর অধিকারের চেয়ে এখানে সরকারের স্বার্থ বড়- এমন অনুমান মানুষের মনে গেড়ে বসেছে। দণ্ড নিয়ে জেলে থাকা এই নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিপুলসংখ্যক পেন্ডিং মামলা রয়েছে। সাজা শেষ হলে মুক্তি পাবেন, তার নিশ্চয়তা নেই।
অন্যদিকে যারা ফেরারি হয়ে ঘুরছেন তাদের জীবন আরো বেশি অনিশ্চিত। আত্মসমর্পণ করে জামিন নেবেন এমন ভাবা যায় না। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে দেখা গেছে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের জন্য জেল নিয়তি হয়েছে। এদিকে মুক্ত জীবনের স্বাদও তাদের নেই। পরিবারের সুখ দুঃখে সাথে থাকবেন তাও হচ্ছে না। স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসানের মা জানান, শতাধিক মামলা মাথায় নিয়ে ফেরারি তিনি। চারটি মামলায় ইতোমধ্যে আট বছরের সাজা হয়েছে। ১১ বছরে বাড়ি যেতে পারেননি। মা ও এক বোনের সংসারে তার বাবা নেই। বর্তমান সরকার ২০১৪ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর তিনি আর পরিবারে নিশ্চিন্ত হয়ে ফেরতে পারেননি। বয়স ৪০ পেরিয়ে গেলেও বিয়ে করার কথা চিন্তাও করতে পারেননি। এ অবস্থায় মা ও বোনেরা পরিবারের এই সদস্যকে নিয়ে সবসময় আতঙ্কে থাকেন। যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি মামুন হাসানের বিরুদ্ধে তিনশ’র বেশি মামলা। পাঁচটি মামলায় তার ১৩ বছরের সাজা হয়ে গেছে। রাজনৈতিক কারণে মানুষেরা কতটা পীড়নের শিকার হচ্ছেন তার পরিবারের কাহিনীটি তার দৃষ্টান্ত। তাকে বাসায় না পেয়ে একবার ভাবি বোন ও দুই ভাতিজিকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। বাসার মেঝের টাইলস, বাথরুমের কমোড ভেঙে ফেলা হয়, কাপড়চোপড় কেটে তছনছ করে ফেলা হয়। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ ধরনের হিংস্রতা এবার বহু জায়গায় ছড়াতে দেখা গেছে। রাজনৈতিক বিরোধের কারণে এ ধরনের নির্মম পীড়ন গণতান্ত্রিক বিশ্বে বিরল বলতে হবে। বিভিন্ন দেশে বিশেষ পরিস্থিতিতে, সাধারণ যুদ্ধ বিগ্রহ ও জরুরি অবস্থায় সাময়িক এমনটা হতে দেখা যায়। আমাদের দেশে দীর্ঘ সময় ধরে এমনটা চলতে পারছে।
সরকার নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে গেছে। বিরোধীদের পক্ষ থেকে আন্দোলনের কর্মসূচি নেই। এই অবস্থায় বিরোধীদের ওপর দমন পীড়নের প্রয়োজনীয়তা নেই। সাধারণ জীবনযাপনে বাধা দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। আমরা মনে করি, এ ধরনের হিংসাত্মক নীতি থেকে সরকারের সরে আসা উচিত।
সূত্র: দৈনিক নয়াদিগন্ত