কেবল সুদহার বৃদ্ধিভিত্তিক মুদ্রানীতি অর্থনীতির জন্য আত্মঘাতী
Share on:
মুদ্রানীতির সাথে রাজস্বনীতির সমন্বয় থাকতে হবে। একদিকে বেসরকারি খাতের উৎপাদন কাজের ঋণ নিতে নিরুৎসাহিত করে, বিনিয়োগ কমিয়ে উৎপাদন কমানো হয়। অন্যদিকে, সরকার নিজে মোটা অঙ্কের ঋণ গ্রহণ করে অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় করে।
ড. মো: মিজানুর রহমান
দেশের বর্তমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য সঙ্কোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন মুদ্রানীতিতে সুদহার আরো একদফা বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে। সর্বশেষ গত নভেম্বরে নীতি সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ করা হয়েছিল। এবার বিশেষ রেপো সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে, বর্তমানে তা ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। সুদহারের নি¤œসীমা রিভার্স রোপো সুদহার বিদ্যমান ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে। নীতি সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা ও নি¤œসীমার মধ্যে ব্যবধান ২০০ শতাংশ পয়েন্ট থেকে কমিয়ে ১৫০ শতাংশ পয়েন্টে নামিয়ে আনা হয়েছে। যুক্তি হলো- নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণের সুদহার বাড়বে, ফলে ঋণের চাহিদা কমে যায়। এর মধ্য দিয়ে অর্থনীতিতে অর্থের প্রবাহ কমে গেলে মূল্যস্ফীতি কমবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হচ্ছে নীতি সুদহার বাড়ানো বা কমানো; সেই হাতিয়ার ব্যবহার করেছে এবারের মুদ্রানীতিতে। গত জুন মাসে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে সুদহারের সীমা তুলে দেয়া হয়েছিল। নতুন এই মুদ্রানীতির সুদহার বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতির হার বছর শেষে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ডিসেম্বর শেষে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ।
ঘোষিত মুদ্রানীতিতে ২০২৪ সালের জুন মাসে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশ ও সরকারি খাতে লক্ষ্যমাত্রা ২৭ দশমিক ৮ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ২ শতাংশ; সরকারি খাতে ছিল ১৮ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, চাহিদাজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ প্রশমন, বিনিময় হারের চাপ নিয়ন্ত্রণ, সরকারের কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় অর্থের সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাতে ঋণ সরবরাহ নিশ্চিত করার বিষয়ে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে মুদ্রানীতিতে।
মুদ্রানীতিতে একই সাথে ডলারের বিনিময় মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ‘ক্রলিং পেগ’ নামে নতুন একটি পদ্ধতি ব্যবহারের চিন্তা করা হচ্ছে। ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতিতে একটি মুদ্রার বিনিময় হারকে একটি সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সীমার মধ্যে ওঠানামা করার অনুমতি দেয়া হয়। ফলে একবারেই খুব বেশি বাড়তে পারবে না, আবার কমতেও পারবে না। গত দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশে ডলার সঙ্কট চলছে। এতে ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। তবে নতুন পদ্ধতিতে ডলারের বিনিময় হার কত হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। এ ছাড়া খেলাপি ঋণ আদায়ে বেসরকারি উদ্যোগে ‘সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি’ গঠনের ঘোষণাও দেয়া হয়েছে।
নতুন মুদ্রানীতির প্রভাব
নতুন মুদ্রানীতির ফলে ব্যাংক ঋণ নেয়া আগের চেয়ে ব্যয়বহুল হবে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক হিসেবেই দেখছেন। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদহার বৃদ্ধি একটি উপায় মাত্র; তবে কেবল এর মাধ্যমেই যে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে বলে মনে হয় না; বড়জোর আংশিক ভূমিকা পালন করতে পারে। সুতরাং অন্য নিয়ামকগুলোর প্রতিও দৃষ্টি দিতে হবে। অন্যদিকে বেসরকারি খাতকে ঋণ নিতে নিরুৎসাহিত করে সরকার মোটা অঙ্কের ঋণ গ্রহণ করে মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব হবে না। এ ছাড়া বিদেশী মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতির ব্যবহার করে খুব একটা লাভ হবে বলে মনে হয় না। ডলারের মূল্য নির্ধারণ করে দেয়ার চেয়ে বরং মার্কেট ওপেন করে দেয়াই ভালো। বাজার উন্মুক্ত করে দিয়ে সেটি ভালোমতো মনিটরিং করা প্রয়োজন। একই সাথে, দেশের ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে কী ধরনের ম্যাকানিজম ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটি জনসম্মুখে প্রকাশ করা উচিত। এমনকি টার্গেট নির্ধারণ করে তার অর্জনও জানানো উচিত।
দেশের বর্তমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গত এক বছরে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আইএমএফের ঋণের শর্তানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম মুদ্রানীতিতে নীতি সুদহারের করিডোর প্রথা চালু, সুদহারের সীমা প্রত্যাহার, ডলারের একক দাম, রিজার্ভের প্রকৃত হিসাবায়নসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি রোধে মুদ্রা সরবরাহনির্ভর নীতি থেকে সরে এসে সুদহার লক্ষ্য করে মুদ্রানীতি প্রণয়ন শুরুর ঘোষণা দেয়া হয়। এত পদক্ষেপের পরও বাজারে এর কমই প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আশরাফ আহমেদ অবশ্য মনে করেন, নতুন মুদ্রানীতি দেশের আর্থিক খাতকে পুনরুজ্জীবিত ও প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বাজায় রাখতে সহায়তা করবে; রিজার্ভ স্থিতিশীল ও মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখতে সহায়তা করবে; মুদ্রা বিনিময়হার ব্যবস্থা নিশ্চিতকল্পে মুদ্রানীতিতে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনতে ইতিবাচক হবে। তার মতে, সর্বশেষ ঘোষিত মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ‘স্মার্ট’-এর ওপর ভিত্তি করে ঋণের সুদহার নির্ধারণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল, যা খুব বেশি কার্যকর হয়নি। তবে এবারের মুদ্রানীতি অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, যথাযথ আর্থিক ঋণকৌশল গ্রহণের মাধ্যমে বেসরকারি খাতে অধিক হারে ঋণপ্রবাহ নিশ্চিতকল্পে বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোগ গ্রহণ করবে। সরকারি খাতে ঋণ হ্রাসের পাশাপাশি বেসরকারি খাতে ঋণ বৃদ্ধিকল্পে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষতা বৃদ্ধি, সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রতাসাধন এবং অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ওপর তিনি জোরারোপ করেন।
দেশে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে তারল্য বৃদ্ধিকল্পে ‘এক্সপোর্টার রিটেনশন কোটা (ইআরকিউ)’ হার আগের চেয়ে অনেক নামিয়ে আনা হয়েছে। এ ছাড়া পেমেন্টের ক্ষেত্রে রেগুলেটরি ক্যাপিটালের ৪০ শতাংশ অফশোর ব্যাংকিং অপারেশন্স থেকে ধারের সুযোগ দিয়েছে ঘোষিত নীতিতে। এর ফলে, বৈদেশিক মুদ্রার পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে।
সুদ বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ কতটা সফল
মূলত উন্নত অর্থনীতির দেশে জনগণ শতভাগ কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়, সেসব দেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার নীতি কার্যকর হয়। উন্নত অর্থনীতির দেশে ভোক্তার চাহিদা থাকে ঊর্ধ্বমুখী, ফলে সুদের হার বাড়ানোর উদ্দেশ্য হয় ভোগ কমিয়ে আনা। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ তেমন সম্ভব হয় না। সুদের হার বৃদ্ধি করলে ভোগের চাহিদা হয়তো কিছুটা সীমিত হয় তবে এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগও কমে যায়। বিনিয়োগ কমে গেলে কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে, ফলে দেশে বেকারত্ব বাড়ে। মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) আশানুরূপ হারে বৃদ্ধি পায় না। সরকার নিজেই জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ থেকে নামিয়ে আগামী জুনে সাড়ে ৬ শতাংশের টার্গেট নিয়েছে। ফলে দেশের বেসরকারি খাত নিরুৎসাহিত বোধ করবে এবং বিনিয়োগ সীমিত হয়ে আসবে। বিনিয়োগ কমে গেলে আমাদের সরবরাহে ভাটা পড়বে। এভাবে যদি সরবরাহ কমতে থাকে তাহলে এমনিতেই মূল্যস্ফীতি বাড়বে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পূর্ণ এমপ্লয়েড অর্থনীতিনির্ভর নয়, এখানকার অর্থনীতি শক্তিশালী করতে বিনিয়োগের ওপর জোর দিতে হবে। সুতরাং বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সুদের হার না বাড়িয়ে বরং কমিয়ে রাখা উচিত। কারণ সুদের হার বৃদ্ধি করলে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে; পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। এভাবে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলে তো মূল্যস্ফীতিটা থেকেই যাচ্ছে।
বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির মূল কারণ চলতি লেনদেনে ঘাটতি। লেনদেনে ঘাটতি চলতে থাকলে রিজার্ভ কমে যাবে; টাকার মান কমে যাবে; আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। সুতরাং রিজার্ভ বাড়িয়ে টাকার মান ধরে রাখতে পারলে আমদানি ব্যয় কমবে। এর জন্য প্রয়োজন রেমিট্যান্স প্রবাহ ঠিক রাখা। রেমিট্যান্স কমার কারণ বাংলাদেশীরা কম উপার্জন করছে তা নয়; বরং বাংলাদেশীরা আগের চেয়ে বেশি উপার্জন করছে। কিন্তু ডলার বিদেশে আয় করে বিদেশেই রেখে দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া দুর্নীতি, ঘুষ, ব্যাংক লুট এবং আন্ডার-ওভার-ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার হচ্ছে। সুদের হার না বাড়িয়ে রেমিট্যান্স দেশে আনার ব্যবস্থা এবং দেশের অর্থ বিদেশে পাচার বন্ধ করতে হবে।
বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির আরেকটি কারণ অভ্যন্তরীণ বাজার ঠিকমতো কাজ করছে না। বাজারে প্রতিযোগিতা এবং স্বচ্ছতা নেই। এখানে সিন্ডিকেট হয়ে যায়। কৃত্রিমভাবে দাম বাড়িয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। এটি সরকারকে ট্যাকেল করতে হবে। সুদের হার বৃদ্ধি করে এ ধরনের মূল্যস্ফীতি রোধ করা যায় না। এমনকি বিনিময় হার যদি স্থিতিশীলও হয়, তার পরও মূল্যস্ফীতি কমানো যাবে না, যতক্ষণ না সিন্ডিকেট বন্ধ করা যায়। এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা কমিশন, ভোক্তা অধিদফতরকে কার্যকরী করতে হবে। সরকারকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। বড় কিছু শিল্পগোষ্ঠীর হাতে চলে গেছে বাজার। এর প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত না করতে না পারায় ক্ষণে ক্ষণে কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে কোনো পণ্যের দাম বেড়ে যায়, অথচ সরবরাহ স্বাভাবিক। পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ ও আলুর সিজনেও অস্বাভাবিকভাবে দাম বেড়ে যায়।
দেশের রফতানি বাড়ছে, রেমিট্যান্স বাড়ছে, বৈদেশিক ঋণ যেখান থেকে চাইছি পাচ্ছি। তার পরও আন্তর্জাতিক তিনটি রেটিং কোম্পানি ঋণমানকে ‘ডি গ্রেড’ দিয়েছে। এখন এলসি খুলতে ক্যাশ ফরেন এক্সচেঞ্জ দরকার হয়। লোন দিতে থার্ড পার্টি গ্যারেন্টার হতে হয় এবং সুদের হার বেশি চায় তারা। এগুলো আমাদের বুঝতে হবে। ফলে দ্রুত খারাপ হয়ে যাচ্ছে অর্থনীতি যার ভুক্তভোগী মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত; যাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা দুরূহ ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে।
ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এই টাকা ব্যাংকে ঢুকলে এমনিতে তারল্য সঙ্কট কমে যেত এবং বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে যেত; সুদের হার বাড়াতে হতো না। ২০২২ সালের জুনে ব্যাংকগুলোর কাছে অতিরিক্ত তারল্য ছিল ২২ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের জুনে অতিরিক্ত তারল্য কমে দাঁড়ায় ১১ হাজার ৬৩০ কোটি টাকায়।
সর্বোপরি, মুদ্রানীতির সাথে রাজস্বনীতির সমন্বয় থাকতে হবে। একদিকে বেসরকারি খাতের উৎপাদন কাজের ঋণ নিতে নিরুৎসাহিত করে, বিনিয়োগ কমিয়ে উৎপাদন কমানো হয়। অন্যদিকে, সরকার নিজে মোটা অঙ্কের ঋণ গ্রহণ করে অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় করে। ফলে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ কমে না; মূল্যস্ফীতিও কমে না। দেশের অর্থনৈতিক বৈষম্যও মুদ্রাস্ফীতি ঘটায়, কারণ পণ্যের দাম যতই হোক না কেন, টাকাওয়ালাদের সমস্যা হয় না; বরং সমস্যা হয় মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তদের। এমনকি বেসরকারি ঋণপ্রবাহ কমালেও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ঋণ পেতে বেশি সমস্যা হয়। ফলে তাদের উৎপাদন কমে গিয়ে মুদ্রাস্ফীতি আরো বাড়ায়। সুতরাং কেবল সুদহার বাড়িয়ে নয়; বরং সার্বিক ব্যবস্থা নিয়ে মুদ্রাস্ফীতি কমাতে হবে; অন্যথায় দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতি আরো সঙ্কটে আবর্তিত হবে।