আবারও অখন্ড ভারতের কথকতা
Share on:
গুরুত্ব দিলে অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনের প্রাক্কালে একজন মুখ্যমন্ত্রী আবার ‘অখন্ড ভারত’ প্রসঙ্গ এভাবে টেনে আনতে পারতেন না। অখন্ড ভারত প্রসঙ্গে আরএসএস এবং বিজেপি নেতারা যে ধারণা পোষণ করেন, তাতে তো প্রতিবেশী দেশগুলোর আর কোনো অস্তিত্বই থাকে না। বিষয়টি ভারতের নতুন সংসদ ভবনের ম্যুরালেও স্থান পেয়েছে।
২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধন হওয়ার কথা। গুরুত্বপূর্ণ এমন একটি উদ্বোধনের প্রাক্কালে নতুন করে ‘অখন্ড ভারত’ প্রসঙ্গ টেনে আনলো ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। বিজেপি শাসিত রাজ্য মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব শনিবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, অযোধ্যায় মন্দির প্রতিষ্ঠা অখন্ড ভারত গড়ে তোলার পথে এক গুরত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। উল্লেখ্য যে, সোমবার বিপুল আয়োজনে অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। একই দিনে ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’ হবে ‘রামলালা’র (বালক রামচন্দ্র) বিগ্রহে। সেই উপলক্ষে রাজ্যে রাজ্যে বিজেপি নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। মধ্যপ্রদেশের বৈরাগড় এলাকায় তেমনই এক অনুষ্ঠানে শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব ‘অখন্ড ভারত’ গড়ার প্রসঙ্গ টেনে বললেন, ‘ঈশ্বরের ইচ্ছাতেই রামমন্দির তৈরি হয়েছে। তার ইচ্ছাতেই এটা হবে অখন্ড ভারত গড়ে তোলা এক বিরাট পদক্ষেপ।’
মোহন যাদব বলেন, অখন্ড ভারতের ব্যাপ্তি পাকিস্তানের সিন্ধু ও পাঞ্জাবে গিয়ে শেষ হবে না, শেষ হবে আফগানিস্তানে। উল্লেখ্য যে, ‘অখন্ড ভারত’ ধারণা রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ বা আরএসএস-এর মূল মতাদর্শের অন্তর্ভুক্ত বিষয়। সেই ধারণায় একদা ভারতবর্ষে ব্যপ্তি ছিল পশ্চিমে আফগানিস্তান থেকে পূর্বে মিয়ানমার, উত্তরে তিব্বত থেকে দক্ষিণের শ্রীলংকা পর্যন্ত। অর্থাৎ মোহন যাদবের ধারণা মতো অখন্ড ভারত কোনোদিন প্রতিষ্ঠিত হলে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, তিব্বত, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও শ্রীলংকা। ‘অখন্ড ভারত’ ধারণাটির একটি রূপ ভারতের নতুন সংসদ ভবনেও দেয়া হয়েছে। ২০২৩ সালের ২৮ মে দিল্লিতে নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে স্থান পেয়েছে অখন্ড ভারতের একটি ম্যুরাল বা মানচিত্র। এর ছবি দিয়ে সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশি সে সময় টুইট করে লিখেছিলেন, ‘সংকল্প স্পষ্ট : অখন্ড ভারত’। অর্থাৎ অখন্ড ভারত প্রতিষ্ঠাই তাদের সংকল্প।
এ নিয়ে সে সময় কথা বলেছিলেন নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বাবুরাম ভট্টরাই। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এই মানচিত্র নেপালসহ ভারতের অন্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রে অহেতুক ও ক্ষতিকর বিতর্কের জন্ম দিতে পারে। বিভিন্ন প্রতিবেশীর সঙ্গে ভারতের বিশ্বাসের যে ঘাটতি রয়েছে, তা বাড়িয়ে দেওয়ার মতো উপাদান এই মানচিত্রে রয়েছে। বিষিয়ে তুলতে পারে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কও। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ভারতের বর্তমান শাসকগোষ্ঠী বাবুরাম ভট্টরাইয়ের বিবৃতিকে তেমন গুরুত্ব দেননি। গুরুত্ব দিলে অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনের প্রাক্কালে একজন মুখ্যমন্ত্রী আবার ‘অখন্ড ভারত’ প্রসঙ্গ এভাবে টেনে আনতে পারতেন না। অখন্ড ভারত প্রসঙ্গে আরএসএস এবং বিজেপি নেতারা যে ধারণা পোষণ করেন, তাতে তো প্রতিবেশী দেশগুলোর আর কোনো অস্তিত্বই থাকে না। বিষয়টি ভারতের নতুন সংসদ ভবনের ম্যুরালেও স্থান পেয়েছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর মর্যাদা হানিকর ও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্নকারী এমন একটি বক্তব্য ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কন্ঠে বারবার উচ্চারিত হয় কোন কান্ডজ্ঞানে? এ ব্যাপারে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা প্রয়োজন। আর প্রতিবেশী দেশগুলোর সার্বভৌমত্ব-মর্যাদায় আঘাত হানার পরও তারা চুপ থাকছেন কেমন করে?
সূত্র: দৈনিক সংগ্রাম