সম্পাদকীয় প্রকাশনার সময়: বুধবার ২৪, জানুয়ারী ২০২৪

মূল্যবৃদ্ধির কারসাজি প্রসঙ্গে

Share on:

পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার যদি জনগণের স্বার্থে ব্যবস্থা নিতে পারতো তাহলে নিয়মিতভাবে পরিস্থিতির অবনতি ঘটতো না। এর ফলে জনগণকে যেমন কষ্টের কবলে পড়তে হতো না, সরকারও তেমনি সহজেই সংকট ও অনিশ্চয়তা কাটিয়ে উঠতে পারতো।


বর্তমান বাংলাদেশে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি এক স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। কোনো কারণ ছাড়াই যখন-তখন এবং কথায় কথায় মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে। বাজারে তৎপর ব্যবসায়ী নামের বিশেষ গোষ্ঠীর ইচ্ছায় ও নির্দেশে চাল, ডাল, চিনি এবং তেলের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর মূল্যও বেড়ে যাচ্ছে সরকারের অজান্তে। ফলে বিপদ বাড়ছে সাধারণ মানুষের। একই সাথে সরকার বিরোধী জনমত আরো প্রবল হয়ে উঠছে। এভাবেই চলছে বেশ কিছুদিন ধরে। 

এমন এক অবস্থার মধ্যে অসৎ ব্যবসায়ীদের সতর্ক করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কারসাজি করে পণ্যের মূল্য বাড়ালে ওই কারসাজির পেছনে যারা জড়িত রয়েছে তাদের খুঁজে বের করা হবে এবং মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে তাদের কারাগারে ঢোকানো হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী  সংসদের এক জরুরি বৈঠকে দেয়া বক্তৃতায় বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে নিজের মনোভাব জানাতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নির্বাচনের পর এখন অযথা একটা ধুম্রজাল সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। সবচেয়ে অবাক লাগে এজন্য যে, কথা নেই বার্তা  নেই, হঠাৎ করে চালের দাম বেড়ে গেলো। একই সঙ্গে অন্য সব জিনিষের দামও বেড়ে গেলো। প্রধানমন্ত্রী জানতে চেয়েছেন, করোনা ভাইরাসের অতিমারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্যসহ কিছু পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি হলেও বাংলাদেশে ডিমের মতো এমন অনেক পণ্যেরও মূল্য বাড়ানো হয়েছেÑযেগুলো দেশের ভেতরেই উৎপাদিত হয়। এসব পণ্যের মূল্য বাড়ানোর পেছনে বিশেষ কারসাজি রয়েছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশেষ গোষ্ঠীর লোকজন পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে ডিম থেকে শুরু করে পেঁয়াজ পর্যন্ত অনেক জিনিসই বস্তায় ভরে বস্তার পর বস্তা ফেলে দিয়েছে, যাতে সংকট সৃষ্টি করে সেসব পণ্যের দাম বাড়ানো যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে একই বিশেষ গোষ্ঠী আবার গোপনে পণ্যের বিপুল মজুতও গড়ে তুলেছে। সেগুলোই তারা যথেচ্ছ দামে পরে বিক্রি করেছে। এখনও ওই বিশেষ গোষ্ঠীর কর্মকান্ড অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সেই সঙ্গে বিশেষ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্যও জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বলার অপেক্ষা রাখে না, ওপরে উল্লেখিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিটি কথা ও তথ্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনস্বার্থের দৃষ্টিকোণ থেকে এগুলোর ব্যাপারে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া দরকার। অন্যদিকে একথাও স্বীকার না করে উপায় থাকে না যে, প্রধানমন্ত্রী তথা তার নেতৃত্বাধীন সরকার চাইলে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এমন অবস্থার সৃষ্টি হতে পারতো না। সে জন্যই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বিভিন্ন উপলক্ষে সরকারের প্রতি সততার সঙ্গে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়ে এসেছেন। কিন্তু সরকার এগিয়েছে নিজেদের ইচ্ছামতো। কথিত ওই বিশেষ গোষ্ঠীর সঙ্গে সরকারের আঁতাতের বিষয়টিও গোপন রাখা সম্ভব হয়নি। সে কারণেই জনগণকে সব সময় গভীর সংকটে দিন পাড়ি দিতে হয়েছে, যে অবস্থার অবসান এখনও হয়নি। 

আমরা মনে করি, পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার যদি জনগণের স্বার্থে ব্যবস্থা নিতে পারতো তাহলে নিয়মিতভাবে পরিস্থিতির অবনতি ঘটতো না। এর ফলে জনগণকে যেমন কষ্টের কবলে পড়তে হতো না, সরকারও তেমনি সহজেই সংকট ও অনিশ্চয়তা কাটিয়ে উঠতে পারতো। আমাদের ধারণা, সময় এখনও একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। সরকার চাইলে এখনও জনগণের জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এজন্য সরকারকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সোমবারের বক্তব্যের আলোকে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীকেও প্রমাণ করতে হবে যে, তিনি শুধু কথার কথা বলেননি। বরং যা কিছু বলেছেন সবই করে দেখানোর ইচ্ছাও তার রয়েছে।

সূত্র: দৈনিক সংগ্রাম