সম্পাদকীয় প্রকাশনার সময়: শনিবার ২০, জানুয়ারী ২০২৪

ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমানোর ব্যবস্থা নিতে হবে

Share on:

ভূ-উপরিস্থ জলাধারে ময়লা-আবর্জনা ও রাসায়নিক ক্ষতিকর পদার্থ ফেলা বন্ধের মাধ্যমে দূষণ রোধ করে এর পানি পানযোগ্য করে তুলতে হবে।


জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে নলকূপের পানি দূষিত হয়ে পড়ায় দেশের কয়েক কোটি মানুষ ক্যানসারের ঝুঁকিতে পড়বেন। বিজ্ঞান জার্নাল পিএলওএস ওয়ানের এক গবেষণা নিবন্ধে এ তথ্য উঠে এসেছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তাপমাত্রা বাড়ার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, অপ্রত্যাশিত বন্যা এবং তীব্র বৈরী আবহাওয়ার কারণে দেশের সুপেয় পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। এর ফলে ইতোমধ্যেই ঝুঁকিতে থাকা দেশের জনস্বাস্থ্য সমস্যা আরও জোরালো হবে। গবেষণা বলছে, মানুষ যখন ভূপৃষ্ঠের পানি পান করতো, তখন কোনো সমস্যা হতো না; কিন্তু নলকূপের পানি ব্যবহার করায় গুরুতর জনস্বাস্থ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ক্রমাগত আর্সেনিক গ্রহণের ফলে শরীরের ভেতরে তা জমা হতে থাকে। ফুসফুসসহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে জমা আর্সেনিকের এ বিষ এক সময় ক্যানসারের সূত্রপাত ঘটায়। গবেষণা বলছে, দেশের প্রায় ৭.৮ কোটি মানুষ আর্সেনিকের সংস্পর্শে এসেছে। আর কমপক্ষে ৯ লাখ মানুষ ফুসফুস ও মূত্রাশয় ক্যানসারে মারা যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এ পরিস্থিতি আরও প্রকট আকার ধারণ করছে। যেহেতু জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তন হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যাবে না, তাই দূরবর্তী ভবিষ্যৎ পর্যন্ত মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব চলতেই থাকবে।

দেশে ১৯৭০-এর দশকে পানিতে প্রথম আর্সেনিকের উপস্থিতি মেলে। আর ১৯৯৩ সালে নলকূপের পানিতে দীর্ঘস্থায়ী আর্সেনিক বিষক্রিয়ার খবর পাওয়া যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে ‘একটি জনপদের ইতিহাসে বৃহত্তম গণ বিষক্রিয়ার’ ঘটনা বলে উল্লেখ করে। এর আগেও বাংলাদেশের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকসহ একাধিক সংস্থা বেশকিছু উদ্বেগজনক পূর্বাভাস দিয়েছিল। বেশ কয়েক বছর আগে নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের পানীয় জলকে আর্সেনিকমুক্ত করার জন্য মৌলিক ও জরুরি পদক্ষেপগুলো নেওয়া হচ্ছে না। এ অবস্থায় সহায়তার জন্য অধিক কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি দেশে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়াতে নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিতে হবে। আর্সেনিকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। ভূ-উপরিস্থ জলাধারে ময়লা-আবর্জনা ও রাসায়নিক ক্ষতিকর পদার্থ ফেলা বন্ধের মাধ্যমে দূষণ রোধ করে এর পানি পানযোগ্য করে তুলতে হবে।

সূত্র: দৈনিক যুগান্তর