প্রাণ রক্ষার নামে প্রাণহানি বন্ধ হউক
Share on:
আমরা দেখিতে চাহিব, প্রাণ রক্ষার নামে প্রাণঘাতী চিকিৎসা বাণিজ্য অবিলম্বে বন্ধ হইয়াছে। স্বীকার্য, দেশে এখন বেসরকারি পর্যায়েও যথেষ্ট উন্নতমানের চিকিৎসা সম্ভব হইতেছে।
খতনার ন্যায় প্রায় ঝুঁকিহীন অস্ত্রোপচার করিতে গিয়া যখন শিশুর প্রাণহানি ঘটে; রাজধানীর বাড্ডায় ‘ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল’ নামক সনদবিহীন চিকিৎসালয়ে অন্যান্য চিকিৎসা ও সেবার নামে কী ঘটে, উহা সহজেই অনুমেয়। মর্মান্তিক এই প্রাণহানি লইয়া সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড়ের পর কথিত হাসপাতালটির ‘স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম’ গত রবিবার বন্ধ করিবার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিকট এই প্রশ্নও সংগত– এতদিন তাহারা কোথায় ছিলেন? ‘রোগী মরিয়া যাইবার পর ডাক্তার আসিবার’ প্রবাদটির সার্থক রূপায়ণ ব্যতীত এই পদক্ষেপের এখন আর কী তাৎপর্য থাকিতে পারে? খ্যাতনামা একটি বেসরকারি হাসপাতালের নাম লইয়া অনিয়ম ও অপচিকিৎসার এই আয়োজন এতদিন কীভাবে চলিতে পারিল– ইহার জবাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে দিতেই হইবে। অতীতেও আমরা দেখিয়াছি, কোনো হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা বা অবহেলায় মৃত্যুর ঘটনা জনসমক্ষে আসিলেই কেবল তদারককারী এই সংস্থা পরিদর্শনে যায় এবং সনদ না থাকিবার ভাঙ্গা রেকর্ড বাজাইয়া চলে।
এই সংক্রান্ত প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য উদ্ধৃত করিয়া বলা হইয়াছে, দেশে বর্তমানে ১৫ সহস্রাধিক বৈধ বা নিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংক রহিয়াছে। কিন্তু মূল উদ্বেগের বিষয় হইতেছে, অবৈধ হাসপাতালের সংখ্যা কর্তৃপক্ষেরও অজানা। অবশ্য ২০২২ সালে দেশব্যাপী দুই দফা অভিযানের পর স্পষ্ট হইয়াছিল– বৈধর তুলনায় অবৈধ হাসপাতালের সংখ্যা অধিক। ঐ সময় আড়াই সহস্রাধিক অবৈধ বা অনিবন্ধিত হাসপাতাল বন্ধ করা হইলেও প্রকৃতপক্ষে আরও অনেক যে বহাল তবিয়তেই রহিয়াছে, খোদ রাজধানীতে আলোচ্য হাসপাতালটির অবস্থান উহার প্রমাণ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অন্যতম পরিচালক নিবন্ধনের বাহিরে থাকা হাসপাতালগুলির ‘তথ্য পাইলে ব্যবস্থা’ লইবার যেই আশ্বাস দিয়াছেন, উহা বিপজ্জনক বটে। বিদ্যমান ব্যবস্থামতে, সনদ কিংবা নিবন্ধনবিহীন চিকিৎসালয় কিংবা চিকিৎসক চিহ্নিত করিতে কি চিকিৎসাপ্রার্থীর প্রাণ বাজি রাখিতে হইবে?
আমরা দেখিতে চাহিব, প্রাণ রক্ষার নামে প্রাণঘাতী চিকিৎসা বাণিজ্য অবিলম্বে বন্ধ হইয়াছে। স্বীকার্য, দেশে এখন বেসরকারি পর্যায়েও যথেষ্ট উন্নতমানের চিকিৎসা সম্ভব হইতেছে। হাতের নিকটেই মিলিতেছে আধুনিক প্রযুক্তি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ। সরকারি হাসপাতালগুলিতে সাধারণ নাগরিকের জন্য চিকিৎসার সীমিত সুযোগ, চিকিৎসক ও সেবিকাদের দায়িত্বশীলতা লইয়া অসন্তোষের কারণেও বিপুলসংখ্যক চিকিৎসাপ্রার্থী বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলির উপর আস্থা রাখে। কিন্তু তথায়ও যদি সনদবিহীন চিকিৎসালয় কিংবা চিকিৎসকের প্রাদুর্ভাব ঘটে, নাগরিকগণ যাইবে কোথায়? ভুয়া চিকিৎসক ও চিকিৎসালয় সমূলে উচ্ছেদ করিতে না পারিলে আরও বিপর্যয়ের জন্য অপেক্ষা করিতে হইবে। ইহা বুঝিতে বিশেষজ্ঞ হইবার প্রয়োজন নাই যে, সনদবিহীন চিকিৎসা বাণিজ্যের সহিত কেবল প্রভাবশালী চক্র নহে, খোদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেরও অসাধু কর্মকর্তাগণ জড়িত। ফলে সরিষার মধ্যকার ভূত তাড়াইতে না পারিলে উহা দিয়া অবৈধ চিকিৎসা ব্যবস্থার ভূত বিতাড়ন সম্ভব হইবে না। সরকারের নূতন মেয়াদে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বনামধন্য চিকিৎসকেরও এই চিত্র অজানা থাকিবার কথা নহে। আলোচ্য অঘটন লইয়া তাঁহার সংবেদনশীল বক্তব্যও প্রশংসিত হইয়াছে। এখন সনদবিহীন ও অবৈধ চিকিৎসালয়গুলির ক্ষেত্রে তিনি কী বিধান করেন, আমরা সেইদিকে দৃষ্টি রাখিব।
সূত্র: দৈনিক সমকাল
তারিখ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৪