সম্পাদকীয় প্রকাশনার সময়: শুক্রবার ১৯, জানুয়ারী ২০২৪

পাসপোর্টের বৈশ্বিক সূচক

Share on:

এবারের সূচকে বাংলাদেশের ঠিক আগে ৯৬তম অবস্থানে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। আর পরের ৯৮তম অবস্থানে রয়েছে তিনটি দেশ নেপাল, লিবিয়া ও ফিলিস্তিন। এবারের সূচকে ভারতের অবস্থান ৮০তম। ভারতীয় পাসপোর্টধারীরা আগাম ভিসা ছাড়া ৬২টি দেশে ভ্রমণ করতে পারেন। এ বিষয়ে প্রতিবেশী দেশটি বাংলাদেশের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে।


বাংলাদেশী পাসপোর্টের বৈশ্বিক সূচক অতীত যেমন সুখকর ছিল না; এখনো নয় বরং সবসময় অবস্থানটা বেশ তলানীতে। এজন্য আমাদের দেশের সুশাসনের অভাব, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, নাগরিকদের জীবনমান, শিক্ষা, অর্থনীতি, গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিচ্যুতি, অপরাধ প্রবণতা সর্বোপরি রাজনৈতিক অস্থিরতাকে প্রধানত দায়ী করা হয়। প্রত্যেকটি দেশের এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিকদের ভিসামুক্ত ভ্রমণের অনুমতি প্রদান করে। আর বিশ্বের কতটি দেশ সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিকদের ভিসামুক্ত ভ্রমণের অনুমতি দেয় তা বিবেচনায় নিয়েই সে দেশের পাসপোর্টের বৈশ্বিক সূচক নির্ধারিত হয়। আর এক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান মোটেই সুখকর নয়।

উল্লেখিত দিক ও মানদ- বিবেচনায় প্রতিবছরই পাসপোর্টের বৈশি^ক সূচক নির্ধারণ করা হয়। এই সূচকের মাধ্যমেই সে দেশের আর্থ-সামাজিক চিত্র ও নাগরিকদের জীবনমানের বাস্তবচিত্র ফুটে ওঠে। এক্ষেত্রে আমরা বরাবরই পিছিয়ে। অবশ্য এ বছর বাংলাদেশ বিশ্বের শক্তিশালী পাসপোর্টের সূচকে একধাপ এগিয়েছে। কিন্তু এনিয়ে আমাদের আত্মতৃপ্তিতে ভোগার কোন সুযোগ নেই। কারণ, এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এখনও ৯৭তম। গত বছরের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৯৮তম। এবারের তালিকায় বাংলাদেশের সাথে একই অবস্থানে আছে উত্তর কোরিয়াও। যা আমাদের জন্য মোটেই সম্মানের হয়নি।

যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স সম্প্রতি এই সূচক প্রকাশ করেছে। হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের নিজস্ব ওয়েবসাইটে সূচকটি প্রকাশ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো দেশের পাসপোর্ট দিয়ে আগাম ভিসা ছাড়া কিংবা ভিসামুক্ত সুবিধা নিয়ে কতটি দেশে যাওয়া যায়, তার ওপর ভিত্তি করে শক্তিশালী পাসপোর্টের এ সূচক তৈরি করে দ্য হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স। সূচক তৈরিতে আন্তর্জাতিক আকাশ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (আইএটিএ) তথ্য ব্যবহার করা হয়। আর বিষয়টিকে বেশ বাস্তবসম্মতই মনে করা হচ্ছে।

সূচকে প্রকাশ করা তথ্যে বলা হয়েছে, এখন বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী ব্যক্তিরা আগাম ভিসা ছাড়া বিশ্বের ৪২টি দেশে ভ্রমণ করতে পারেন। গত বছর বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী ব্যক্তিরা আগাম ভিসা ছাড়া ৪০টি দেশে ভ্রমণ করতে পারতেন। ফলে এবারের সূচকে বাংলাদেশ একধাপ এগিয়েছে। জানা গেছে, এ বছরের সূচকে সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্ট ছয়টি দেশের। দেশগুলো হলো-ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, সিঙ্গাপুর ও স্পেন। দেশগুলোর পাসপোর্টধারীরা ১৯৪টি দেশে আগাম ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারেন। গত বছরের সূচকে এককভাবে শীর্ষে ছিল সিঙ্গাপুর। এ সূচকে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল জাপান। এবারের সূচকে ফিনল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া ও সুইডেন এই অবস্থানে আছে। এসব দেশের পাসপোর্টধারীরা ১৯৩টি দেশে আগাম ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারেন। শক্তিশালী পাসপোর্টের সূচকে এ বছর সবার নিচে আফগানিস্তানের (১০৪তম) অবস্থান। আফগান পাসপোর্টধারীরা আগাম ভিসা ছাড়া ২৮টি দেশে ভ্রমণ করতে পারেন। সূচকে আফগানিস্তানে ওপরে রয়েছে সিরিয়া (১০৩তম), ইরাক (১০২তম) ও পাকিস্তান (১০১তম)।

এবারের সূচকে বাংলাদেশের ঠিক আগে ৯৬তম অবস্থানে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। আর পরের ৯৮তম অবস্থানে রয়েছে তিনটি দেশ নেপাল, লিবিয়া ও ফিলিস্তিন। এবারের সূচকে ভারতের অবস্থান ৮০তম। ভারতীয় পাসপোর্টধারীরা আগাম ভিসা ছাড়া ৬২টি দেশে ভ্রমণ করতে পারেন। এ বিষয়ে প্রতিবেশী দেশটি বাংলাদেশের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে।

পাসপোর্টের বৈশ্বিক সূচক ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, জাতীয় শিক্ষা ও নাগরিকদের জীবনমান অনেকটা অনুমান করা যায়। তাই এসব ক্ষেত্রে আমাদের দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য সম্ভব সব ধরনের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। স্বাধীনতার অর্ধ্ব শতাব্দী পরও আমাদের এই হতাশাব্যঞ্জক অবস্থা মোটেই কাম্য নয়।

সূত্র: দৈনিক সংগ্রাম