পোশাক রপ্তানি কমেছে ইউরোপে
Share on:
রপ্তানিকারকরা বলেন, বিভিন্ন কারণে ইইউর ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে। ২০২২ সালে তাদের আমদানি অনেক ভালো করেছিল, সেসময়ের স্টক থেকে গিয়েছিল। আসলে বাংলাদেশ থেকে শুধু নয়, গার্মেন্টসের যারা বড় এক্সপোর্টার, চায়না বলেন, ভিয়েতনাম বলেন- সবার নেগেটিভ গ্রোথ। এটা শুধু যে বাংলাদেশের তা নয়।
চলতি অর্থবছরের গত ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ১.২৪ শতাংশ কমেছে। পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যের ভিত্তিতে সংগঠনটি বলছে, গত জুলাই-ডিসেম্বরে বাংলাদেশ থেকে ইইউ’র বাজারে ১১৩৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এই পরিমাণ ছিল ১১৫০ কোটি ডলার।
রপ্তানিকারকরা বলেন, বিভিন্ন কারণে ইইউর ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে। ২০২২ সালে তাদের আমদানি অনেক ভালো করেছিল, সেসময়ের স্টক থেকে গিয়েছিল। আসলে বাংলাদেশ থেকে শুধু নয়, গার্মেন্টসের যারা বড় এক্সপোর্টার, চায়না বলেন, ভিয়েতনাম বলেন- সবার নেগেটিভ গ্রোথ। এটা শুধু যে বাংলাদেশের তা নয়।
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে তৈরি পোশাক থেকে। আর এসব তৈরি পোশাকের ৪০ শতাংশ যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ দেশে। ইপিবির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথমার্ধে স্পেনে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬.৫৬ শতাংশ, ফ্রান্সে ২.১৫ শতাংশ, নেদারল্যান্ডসে ৯.১১ শতাংশ এবং পোল্যান্ডে ১৯.১৪ শতাংশ। অন্যদিকে জার্মানিতে ১৭.০৫ শতাংশ, ইতালিতে ৩.৮৯ শতাংশ এবং বেলজিয়ামে ৪.৮৮ শতাংশ কমেছে।
বাংলাদেশের জন্য বৃহত্তম বাজার জার্মানিতে রপ্তানি হ্রাসকে ইউরোপে প্রবৃদ্ধি কমার মূল কারণ হিসেবে দেখছেন বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল।
গত ছয় মাসে জার্মানিতে ২৮৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যেখানে আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৩৪৫ কোটি ডলার। চলতি বছরের প্রথমার্ধে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ৫.৬৯ শতাংশ কমে নেমেছে ৪০৩ কোটি ডলারে, যেখানে আগের বছরে একই সময়ে এই পরিমাণ ছিল প্রায় ৪২৮ কোটি ডলার।
ওদিকে উত্তর আমেরিকার দেশ কানাডায় পোশাক রপ্তানি কমেছে ৪.১৬ শতাংশ।
সবশেষ ছয় মাসে সেখানে রপ্তানি হয়েছে ৭৪ কোটি ডলারের পণ্য, যেখানে আগের বছর এই পরিমাণ ছিল ৭৭ কোটি ডলার। একই সময়ে যুক্তরাজ্যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩.২৪ শতাংশ, সেখানে ২৭১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। আগের বছর এ সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ২৩৯ কোটি ডলার।
এদিকে ইউরোপের বাজারে খারাপ করলেও আশার আলো দেখিয়েছে অপ্রচলিত বাজার। এ বাজারে পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ১২.২৮ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪৫৪ কোটি ডলার, যেখানে আগের বছর প্রথমার্ধে এর পরিমাণ ছিল ৪০৪ কোটি ডলার। এর মধ্যে জাপানে ৯.৯৮ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ায় ২৪.৬৭ শতাংশ এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৯.০৬ শতাংশ বেড়েছে রপ্তানি। তবে ভারতে রপ্তানি কমেছে ১৭.২৭ শতাংশ। এ বিষয়ে মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, অপ্রচলিত বাজার এবং সেখানে আমাদের নতুন প্রোডাক্টে ফোকাস করায় আমরা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। তবে খারাপের মধ্যেও অন্য দেশের তুলনায় আমরা ভালো করেছি।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, অস্ট্রেলিয়াসহ অপ্রচলিত বাজারগুলোতে আমরা ভালো করেছি। ওভারল যেটা আমাদের হয়েছে, আমি বলবো যে খারাপের মধ্যে ভালো। এই কারণে যে, ডিমান্ডই কম ছিল, ইমপোর্টই কম হয়েছে; সেই হিসেবে বাংলাদেশ ভালো করেছে। তবে সার্বিকভাবে বছরের প্রথমার্ধে পোশাক রপ্তানিতে ১.৭২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখেছে বাংলাদেশ। গত ছয় মাসে প্রায় ৪৫৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যেখানে আগের বছর এর পরিমাণ ছিল ৪০৪ কোটি টাকা। সামনের দিনে আরও প্রবৃদ্ধির আশা দেখছেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক। তিনি বলেন, নির্বাচনের একটা প্রভাব ছিল, সেটা শেষ হয়েছে। তাছাড়া নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া ইইউতে খুচরা বিক্রি বেড়েছে। ফলে ক্রেতাদের হাতে থেকে যাওয়া স্টক কমেছে। পোশাক শিল্পের স্বার্থে গ্যাস সংকট নিরসনের পাশাপাশি কাস্টমস ও বন্ড সেবা সহজীকীকরণের দাবি জানিয়েছেন তিনি।