সম্পাদকীয় প্রকাশনার সময়: শুক্রবার ১৯, জানুয়ারী ২০২৪

হজের প্যাকেজমূল্য সহনীয় করা দরকার

Share on:

মনে রাখতে হবে, হজ কোনো বাণিজ্যিক পণ্য বা সেবা নয়, হজ হলো মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। অথচ আকাশচুম্বী প্যাকেজমূল্যের কারণে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে হজ। এ অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না।


চলতি মৌসুমে নিবন্ধনের সময় তিন দফা বাড়ানোর পরও সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রী নিবন্ধনে তেমন সাড়া মেলেনি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩ হাজার ১৩৪ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩০ হাজার ২ জন; মোট ৩৩ হাজার ১৩৬ জন। অথচ বাংলাদেশ থেকে লক্ষাধিক মানুষ হজ পালন করেন প্রতিবছর। চলতি বছর ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন এদেশ থেকে। অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে এবার যতসংখ্যক মানুষের হজ পালন করার সুযোগ রয়েছে, তার চার ভাগের এক ভাগের কিছু বেশি নিবন্ধন হয়েছে এ পর্যন্ত। ধারণা করা যায়, হজ প্যাকেজের উচ্চমূল্যই হজযাত্রী নিবন্ধনে ভাটা পড়ার মূল কারণ। উল্লেখ্য, চলতি বছরের জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার দুটি প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বনিম্ন প্যাকেজের মূল্য ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা। আর বিশেষ প্যাকেজের মূল্য ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা। অপরদিকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দুটি প্যাকেজের মূল্য যথাক্রমে ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা এবং ৮ লাখ ২৮ হাজার ৮১৮ টাকা। যদিও গতবারের চেয়ে এ বছর সর্বনিম্ন প্যাকেজের মূল্য ১ লাখ ৪ হাজার ১৬০ টাকা কমানো হয়েছে, তবুও বর্তমান হজ প্যাকেজের মূল্যকে অনেক বেশি মনে করছেন হজে যেতে আগ্রহীরা। জানা যায়, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোয় হজের খরচ তুলনামূলক অনেক কম।

প্রশ্ন উঠেছে, দেশে হজ প্যাকেজের মূল্য কেন এতটা বেড়ে গেল? এক্ষেত্রে বিমানভাড়া বৃদ্ধি একটি কারণ অবশ্যই। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সর্বত্রই বিমানভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে হজযাত্রীদের সৌদি আরবে বাড়িভাড়াও। এসব ক্ষেত্রে আমাদের পক্ষ থেকে হয়তো বেশি কিছু করণীয় নেই। তবে মানুষসৃষ্ট কিছু কারণও হজ প্যাকেজের মূল্য বৃদ্ধির পেছনে কাজ করছে। অভিযোগ আছে, হজকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে নানা সিন্ডিকেট। এসব সিন্ডিকেটের কাছে হজযাত্রীরা একরকম জিম্মি। হজ নিয়ে বাণিজ্য করার জন্য গড়ে উঠেছে হজকেন্দ্রিক মার্কেটিং অফিসার, কমিশন বাণিজ্য, এজেন্সির সিন্ডিকেট এবং হজযাত্রী পরিবহণ সিন্ডিকেট। সৌদি আরবে বাসাভাড়াকেন্দ্রিক প্রতারণা, কখনো কখনো হজযাত্রীদের জমা দেওয়া টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়াসহ নানা অবৈধ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে হজ এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে। এ পরিপ্রেক্ষিতে হজসংশ্লিষ্টদের কার্যক্রমে সরকারের নজরদারি ও হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করি আমরা।

মনে রাখতে হবে, হজ কোনো বাণিজ্যিক পণ্য বা সেবা নয়, হজ হলো মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। অথচ আকাশচুম্বী প্যাকেজমূল্যের কারণে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে হজ। এ অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না। প্রতিবেশী দেশগুলো কম খরচে হজ পালনের ব্যবস্থা করতে পারলে আমরা কেন তা পারব না? দেশে হজ প্যাকেজের মূল্য কমিয়ে সহনীয় করা দরকার। কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে এদিকে দৃষ্টি দেবে, এটাই কাম্য।

সূত্র: দৈনিক যুগান্তর

তারিখ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৪