৫৭ প্রবাসী বাংলাদেশীর শাস্তি মওকুফ, সুখবর এভাবেই আসতে থাকুক
Share on:
বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে স্পর্শকাতর একটি সেক্টর হলো প্রবাসী বাংলাদেশীগণ। এই মানুষগুলো অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেশে রেমিটেন্স প্রেরণ করেন, যার ওপর ভিত্তি করে দেশের অর্থনীতি গতি পায়। আবার প্রতিটি পরিবারে দু একজন মানুষ বিদেশে থাকার কারণে প্রবাসী মানুষগুলোর সাথে এ দেশের মানুষগুলোর ভাগ্যও অনেকাংশে জড়িত।
প্রবাসী মানুষগুলোর হাসি কান্না তাই গোটা জাতিকেই স্পর্শ করে। গত জুলাই-আগষ্ট মাসে বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলনে যখন বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ রাজপথে নেমে এসেছিল, তখন তাদের সাথে আমাদের প্রবাসী ভাইয়েরাও একাত্মতা প্রকাশ করেছিলেন।
সংযুক্ত আরব আমীরাতেও ৫৭ জন বাংলাদেশী ছিলেন যারা হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে সেখানে মিছিল করেছিলেন। যেহেতু আরব আমীরাতে প্রকাশ্যে এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের সুযোগ নেই, তাই স্থানীয় আদালত মিছিলে অংশ নেওয়ার অভিযোগে ৫৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড প্রদান করেন। এদের মধ্যে ৩ জনকে যাবজ্জীবন, ৫৩ জনকে ১০ বছর এবং অপর একজনকে ১১ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়। এ ঘটনাটি ঘটেছিল শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে আসীন থাকা অবস্থায়। শেখ হাসিনা প্রবাসী এই মানুষগুলোর শাস্তি মওকুফ করানো তো দূরের কথা, তাদেরকে নিয়ে বরং টিপ্পনি কেটেছিলেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনুস এ বিষয়ে আরব আমীরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সাথেও কথা বলেছিলেন। অবশেষে জানা গেছে, শুধুমাত্র ড. ইউনূসের প্রতি সম্মান জানিয়ে আরব আমিরাতের সরকার এই ৫৭ প্রবাসী বাংলাদেশীর দেওয়া শাস্তি মওকুফ করে দিয়েছেন। এ বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য খুবই স্বস্তিদায়ক একটি ঘটনা। বাংলাদেশের মানুষ অনেকদিন ধরেই এ ধরনের একটি খবরের জন্য অপেক্ষা করছিল। এ ঘটনায় দুটো বিষয় প্রমাণিত হয়। একটি হলো, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আন্তরিক তৎপরতা এবং দ্বিতীয় বিষয়টি হলো, ড. ইউনূসের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা এবং তার প্রতি আমিরাতের শাসকের সম্মান। সরকারের শীর্ষ যদি বিশ^জুড়ে ইতিবাচকভাবে স্বীকৃত ও গ্রহণযোগ্য কোনো ব্যক্তিত্ব থাকেন, তাহলেই কেবল এ ধরনের সুফল পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বা বিসিবির পদ থেকে দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে থাকা প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপনের পদত্যাগ ও নবাগত প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদের দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম যে সুখবরটি এলো, তাহলো, পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানকে হারিয়ে বাংলাদেশ টেস্ট সিরিজ জিতে নিয়েছে। পাকিস্তানের মাটিতে এটিই বাংলাদেশের প্রথম কোনো সিরিজ জয়ের ঘটনা। ক্রীড়া উপদেষ্টা তার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘তারা ক্রীড়াঙ্গনকে রাজনীতিকরণ ও দুর্নীতি থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করছেন।’ এমনটা হলে, ক্রীড়াক্ষেত্রে আরো অনেক সাফল্য ধরা দেবে। আমরাও এ আশায় বুক বাঁধতে চাই।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন বৃটিশ আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী টবি ক্যাডম্যান। এখানে উল্লেখ্য যে, কয়েক বছর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার জন্য টবি ক্যাডমান একাধিকবার বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করলেও তাকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। আর এবার তিনি দেশে এসে এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাতের সুযোগ পেয়েছেন। অন্যায়ের পরিসমাপ্তি হয় ন্যায়বিচার ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। এ ঘটনা তারই প্রমাণ বহন করে।
জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টা টবি ক্যাডমানের আইনী পরামর্শ গ্রহণ করেন। বিশেষ করে, ট্রাইব্যুনালে যদি গণহত্যার বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু করতে হয়, তাহলে কোন পথে এগুলে বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে সে বিষয়ে তাদের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়। তাছাড়া বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার কৌশল নিয়েও এ বৈঠকে আলোচনা হয়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণহত্যা ও অর্থপাচার ইস্যুতে কড়া পদক্ষেপ নিতে চাইছে। এ দুটো কাজই অত্যন্ত জরুরি এবং আমরা এসব প্রক্রিয়ায় বর্তমান সরকারের সর্বাঙ্গীন সফলতা কামনা করি।