হাওর এলাকার ‘বাঁধ কাটা’ দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কঠোর হোন
Share on:
হাওর এলাকার ফসল রক্ষা বাঁধের বিষয়টি আলোচনায় থাকে সারা বছর। বিশেষ করে ধান কাটার মৌসুমে উদ্বেগ দেখা যায় এই বাঁধ নিয়ে। কারণ, বাঁধের কাজ যেমন ঠিক সময়ে শেষ হয় না, আবার অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে তা যথাযথভাবে শেষও হয় না। বাঁধ দেওয়ার পরও থাকে আরেক আশঙ্কা।
মাছ শিকারের জন্য দুর্বৃত্তদের দ্বারা আক্রান্ত হয় সেই বাঁধ। যেমনটি দেখা যাচ্ছে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায়। সেখানে অন্তত ছয়টি বাঁধের ১০টি স্থানে দুর্বৃত্তরা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। এর ফলে কৃষকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, উপজেলার চন্দ্র সোনার থাল, ধানকুনিয়া, জয়ধনা, সোনামড়ল, রুই বিল, গুরমা ও কাইলানী—সাতটি হাওর সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধীন। দেখা যাচ্ছে, রুই বিল হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের ৮৯, ৯০ ও ৯১ নম্বর প্রকল্পের পাঁচটি এবং চন্দ্র সোনার থাল হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের ৭৫, ৭৬ ও ৭৭ নম্বরের প্রকল্পে পাঁচটি স্থানে মাছ শিকারের উদ্দেশে সপ্তাহখানেক আগে রাতের আঁধারে ১০ থেকে ১২ ফুট করে জায়গা কেটে দেয় দুর্বৃত্তরা। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে বাঁধগুলোর কাটা স্থানে নিষিদ্ধ ভিম জাল পেতে মাছ শিকার করা হচ্ছে। এতে বাঁধের কাটা স্থানগুলো দিন দিন বড় হচ্ছে।
হাওরে এমন ঘটনা নতুন নয়। প্রতিবছরই মাছ শিকারের জন্য বাঁধ কেটে দেওয়া হয়। এ কাজটা আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই করতেন। এবার রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হওয়ায় স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এই কাজ করছেন বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন। এ অভিযোগ সত্যি হয়ে থাকলে বিষয়টি খুবই হতাশাজনক। আমরা বিএনপির ঊর্ধ্বতন নেতাদের প্রতি এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তাঁরা তৃণমূল পর্যায়ে নানা অভিযোগে ইতিমধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছেন। আশা করছি, এখানেও ব্যত্যয় ঘটবে না।
ফসল রক্ষা বাঁধ কাটায় বোরো মৌসুমে জমিতে পানি সেচ দেওয়ায় সমস্যা হবে। এর ফলে কৃষকেরা চরম ভোগান্তিতে পড়বেন। ফসল উৎপাদনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বলছেন, প্রশাসন কঠোর না হলে এই বাঁধ কাটা কখনো বন্ধ হবে না। বিএনপির স্থানীয় নেতারা বলছেন, বিএনপির কেউ যদি এ কাজে জড়িত থাকেন, তাঁদের আইনের আওতায় উচিত। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন বলেন, ফসল রক্ষা বাঁধ কেটে মাছ শিকার করার কাজে নিয়োজিতরা যত প্রভাবশালীই হোক না কেন, তাঁদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।
সবাই যখন আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন এবং প্রশাসনও তা দৃঢ়ভাবে বলছে, আমরা আশা করব এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।