সমঝোতাই সংকট উত্তরণের একমাত্র পথ
Share on:
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট চলমান পরিস্থিতিকে একটি রাজনৈতিক সংকট বলে মনে করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। মঙ্গলবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-আলোচনার মাধ্যমে চলমান সংকট সমাধানের পথ খুঁজে বের করা উচিত বলে তারা মনে করছেন। তারা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে বল প্রয়োগ করলে উলটো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট চলমান পরিস্থিতিকে একটি রাজনৈতিক সংকট বলে মনে করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। মঙ্গলবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-আলোচনার মাধ্যমে চলমান সংকট সমাধানের পথ খুঁজে বের করা উচিত বলে তারা মনে করছেন। তারা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে বল প্রয়োগ করলে উলটো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সরকারের উচিত, আন্দোলনে যারা আহত ও নিহত হয়েছেন, তাদের প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
বলার অপেক্ষা রাখে না, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি দেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। তাই আলোচনার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসে ফিরিয়ে নেওয়াই হবে সংকট উত্তরণের প্রথম পদক্ষেপ। বিদ্যমান পরিস্থিতিকে শান্ত করার প্রতি মনোযোগী না হয়ে তা প্রতিহত করার পন্থা অবলম্বন করলে মানুষের জানমালের ক্ষতি হওয়া ছাড়াও অর্থনীতিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা কারও জন্যই মঙ্গলজনক হবে না। ভুলে গেলে চলবে না, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে জনমনে দেখা দেওয়া অসন্তোষ সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। দেখা দিতে পারে মত ও দর্শনগত বিভাজন। অতীতে বিভিন্ন কারণে আন্দোলন-সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে দেশে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সেসময় দেশজুড়ে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে যে ব্যাপক ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় সম্পদহানি হয়েছিল, এর নেতিবাচক প্রভাব অর্থনীতিতে পড়েছিল। করোনা অতিমারি পরিস্থিতি মোকাবিলার মধ্যেই শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক সংকটের সৃষ্টি হয়, এর প্রভাব দেশের অর্থনীতিতেও পড়েছে, যার জের এখনো কাটানো সম্ভব হয়নি। কাজেই সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে সহিংসতার পথ পরিহারে উদ্যোগী হওয়ার বিকল্প নেই।
চলতি মাসে ছাত্রসমাজের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোও নিজেদের স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। অন্তত ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের একাধিক সদস্যের পরস্পরবিরোধী এমন মন্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। যদিও দেশে গত কয়েকদিনের সহিংস পরিস্থিতির পেছনে কারা জড়িত ছিল, সে ব্যাপারে গঠিত একাধিক কমিটি তাদের তদন্তের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কাজেই প্রতিবেদন জমাদানের আগে কোনো পক্ষকে সরাসরি দায়ী করলে তাতে তদন্ত কার্যক্রমকে প্রভাবিত করার আশঙ্কা থেকেই যায়। উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটাব্যবস্থা নিয়ে ছাত্রসমাজের যে দাবি ছিল, উচ্চ আদালতের বিচক্ষণ রায়ের মাধ্যমে তা পূরণ হয়েছে। তবে আন্দোলনকারীদের একাংশের কিছু দাবি এখনো রয়ে গেছে, যা আলোচনার মাধ্যমেই পূরণ করা সম্ভব। দমন নয়, সমঝোতার মাধ্যমেই বিদ্যমান পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদেরও উসকানিমূলক বক্তব্যের পথ পরিহার করা যুক্তিযুক্ত বলে মনে করি আমরা। নিজস্ব স্বার্থ হাসিল নয়, বরং দেশ ও জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করে রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধপরায়ণতার পথ পরিহার করে সহনশীল মনোভাবের পরিচয় দিলে আর্থসামাজিক উন্নয়ন আরও বেগবান হবে। বাস্তবতা অনুধাবন করে সব পক্ষ আলোচনার ভিত্তিতে সমঝোতার পথে অগ্রসর হবে, এটাই প্রত্যাশা।