সমাজব্যবস্থায় তরুণ সমাজের দায়িত্ব এবং আগামীর বাংলাদেশ
Share on:
একটি নগর অনেকটা মানবজীবনের মতোই সচল। নগরকেও মানবজীবনের মতো প্রতিনিয়ত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে উন্নত হতে হয়। ‘উন্নত’ অর্থ অনেক কিছুই হতে পারে।
তবে নগর উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত থাকে অর্থ, জ্ঞান ও বিজ্ঞানের চর্চায় অগ্রগতি; পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও মান বিবেচনায় রেখে নগরের ভৌত ও সংস্কৃতিগত শ্রীবৃদ্ধি এবং সর্বোপরি সব উৎপাদন, শক্তি ও সম্পদের পরিকল্পিত ও সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারা।
বাংলাদেশকে ছোট ও বড় নগরের সমন্বয় বললেও বোধ হয় এখন আর অত্যুক্তি হবে না। এই অপরিকল্পিত নগর ও আচরণের কিছু বৈশিষ্ট৵ ও কার্যকলাপ খুঁজে পাওয়া যায় যেমন: সুরম্য অবকাঠামো নির্মাণ, যত্রতত্র অপরিকল্পিত স্থাপনা, খাওয়াদাওয়া, পার্টি আয়োজন ইত্যাদি। বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত নগর থেকে শিক্ষা নেওয়ার প্রবণতা বাংলাদেশে কিছুটা থাকলেও সচেতনতা চর্চার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মতো করে সেগুলোকে ঢেলে সাজাবার সক্ষমতা আমরা এখনো অর্জন করতে পারিনি।
নগর যদি ধ্বংস হয়ে না যায়, তাহলে তা কখনো স্থির থাকে না। চলমান একটি নগর দুটির কোনো একটি পথে যেতে পারে—উন্নতি অথবা অবনতি। উন্নতির পথে অব্যাহত ধারা বজায় রাখতে হলে সেই নগরে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীকেও উন্নতির সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে হয়। উপযুক্ত শিক্ষা, সচেতনতা ও সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এই খাপ খাইয়ে নেওয়া একসময় ভিন্ন সংস্কৃতিতেও পরিণত হয়।
বাংলাদেশের জন্য এ মুহূর্তে জরুরি উন্নত নগরকে দর্শনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করা এবং সেভাবেই প্রতিটি নগরের স্বপ্নকে নতুনভাবে বিনির্মাণ করা। দরকার হবে স্থানভিত্তিক (স্থানিক) স্বপ্ন দেখা এবং সে অনুসারে পরিকল্পনা তৈরি, সেসব পরিকল্পনা সমন্বয়, ও সেই পরিকল্পনা ধীরে ধীরে বাস্তবায়িত করা। এসব পরিকল্পনার দর্শনে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সুরক্ষার দিকটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মৌলিক সেবা, উৎপাদনব্যবস্থা এবং ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
দ্রুত ও অপরিকল্পিতভাবে বেড়ে ওঠার অসুস্থ প্রতিযোগিতায় আমাদের নগরগুলো ব্যস্ত। সেই অসুস্থ প্রতিযোগিতা অচিরেই বন্ধ করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে আগামীর নগরবাসী আজকের তরুণদের জন্য সুস্থ সম্ভাবনাময় নগরব্যবস্থা।
আর এ জন্য প্রয়োজন হবে সচেতনতা চর্চা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে প্রজন্মের সঙ্গে প্রজন্মের, বিভিন্ন স্তরের মানুষের সেতুবন্ধ গড়ে তোলা। এই সেতুবন্ধ রচনার জন্য বিভিন্ন প্রজন্মের স্বপ্ন, অভিজ্ঞতা, সমস্যা, সমাধান ও পরিকল্পনার কথা শুনতে হবে, আলোচনা করতে হবে। তবে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে জেনারেশন আলফা, জেনারেশন জেড এবং জেনারেশন ওয়াই বা মিলেনিয়ালদের মতামতকে। তারাই ভবিষ্যতের প্রকৃত নগরবাসী হবে।
২০২৪-এর বিশ্ব বসতি দিবসের প্রতিপাদ্য ‘তরুণদের সম্পৃক্ত করি, উন্নত নগর গড়ি’কে সামনে রেখে এভাবেই মানসম্মত নগর গড়ে তোলার লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করতে হবে। অবশ্য সব গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনকে এতে সম্পৃক্ত করার প্রক্রিয়া অবশ্যই নির্দলীয় হতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রকৃত সচেতনতাচর্চায় (ডেলিবারেটিভ প্র্যাকটিস) অভিজ্ঞতা ও আগ্রহ যাদের আছে, তাদেরই নেতৃত্ব দানের সুযোগ করে দিতে হবে।
গণ–আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আসা পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশে অনেক ধরনের সংস্কারের আলোচনা ও প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই সংস্কারের অ্যাজেন্ডাতে গুরুত্ব দিয়ে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন উন্নত আর ও তরুণদের নিয়ে জাতীয় প্রচারাভিযানকে।
এ কথা সত্যি যে আমাদের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্থায়িত্বশীল কিংবা টেকসই নগর–পরিকল্পনা, নগর–অবকাঠামো ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। নগরের প্রতে৵ক নাগরিক যাতে নিজেদের ‘গ্লোবাল সিটিজেন’-এর চেতনা এবং দায়িত্ববোধ ধারণ করতে পারেন, তার জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
সময় এসেছে নগরসহ পুরো বাংলাদেশকেই নতুন করে ঢেলে সাজাবার। আজ দেশকে নতুন করে সাজাবার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান ও মন্ত্রণালয়ের এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যোগ্য মানুষদের এসব ক্ষেত্রে সামনে নিয়ে আসা ও দায়িত্ব দেওয়াটা জরুরি। প্রক্রিয়াটি এমনভাবে তৈরি করতে হবে যে এর মধ্য দিয়েই আগামীর নেতৃত্ব বের হয়ে আসতে পারে। যারা হবে প্রকৃত অর্থেই জনসেবক ও জনগণের নেতা।
দ্রুত ও অপরিকল্পিতভাবে বেড়ে ওঠার অসুস্থ প্রতিযোগিতায় আমাদের নগরগুলো ব্যস্ত। সেই অসুস্থ প্রতিযোগিতা অচিরেই বন্ধ করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে আগামীর নগরবাসী আজকের তরুণদের জন্য সুস্থ সম্ভাবনাময় নগরব্যবস্থা।