সম্পাদকীয় প্রকাশনার সময়: মঙ্গলবার ১৩, অগাস্ট ২০২৪

স্বৈরাশাসক পালালেই ‘অন্ধকার’ কেটে যায় না

Share on:

মানবিক ও গণতান্ত্রিক সমাজ মানুষের কাম্য। কারণ, এমন সমাজে মানুষের মৌলিক অধিকার পূর্ণ হতে পারে। ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, মতবাদ নির্বিশেষে সব নাগরিক স্বাধীনভাবে জীবন-যাপন করতে পারে।


সংখ্যালঘু বা দুর্বল হওয়ার কারণে কারো নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় না। কোনো রাষ্ট্রে এর বিপরীত কিছু ঘটলে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। রাষ্ট্র ও সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়। আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দিত হতে হয়। কান্ডজ্ঞানসম্পন্ন কোনো সরকার রাষ্ট্রকে এমন অবস্থায় নিতে চায় না।

তবে সব সরকারের চরিত্র এক রকম হয় না। যেমন, স্বৈরাচারী সরকার নিজের শাসনকে প্রলম্বিত করতে মানবিক ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে বিসর্জন দিতে মোটেও কুণ্ঠিত হয় না। এমনকি জনতার রক্তে জনপদকে রঞ্জিত করতেও তাদের বিবেকে বাধে না। যেমনটি আমরা বাংলাদেশে লক্ষ্য করেছি স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার শাসনামলে।

স্বৈরশাসকরা সবসময় রাষ্ট্রের বাহিনী ও দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে দমন করতে চায় দেশের নাগরিকদের। কিন্তু এসবের চাইতেও যে আরো একটি বড় শক্তি আছে, তা ভুলে যায় স্বৈরশাসক। আর সেই শক্তি হলো ‘ছাত্র-জনতার শক্তি।’ এই শক্তির কাছেই এবার বাংলাদেশে পরাজিত হতে হয়েছে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারকে।

স্বৈরাচারী সরকার দেশ ছেড়ে পালালেই দেশের সংকট কেটে যায় না। বরং নতুন সংকট সৃষ্টি হয়, ভেঙ্গে পড়ে দেশের প্রশাসনিক কাঠামো। পালিয়ে বেড়ায় মন্ত্রী বাহাদুরসহ প্রশাসনের হর্তাকর্তারা। হত্যা, লুন্ঠন ও দুর্নীতির সাথে জড়িতরা প্রকাশ্যে আসবে কেমন করে? এমন এক বাস্তবতায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নতুন করে সবকিছু গড়তে হচ্ছে। যে পুলিশ দেশে শান্তি-শৃংখলা রক্ষা করবে, দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করবে, তাদেরই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। স্বৈরাচারী সরকারের কিছু পুলিশ কর্তার কারণে দেশের পুলিশ বাহিনী এক বিশেষ পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গেছে। অবশ্য ক্রমেই সেই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে। থানাগুলো আবার কাজ করতে শুরু করেছে।

গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন সরকার গঠনে একটা যৌক্তিক সময় লাগে, সরকারের কার্যক্রম শুরু করতে আরও কিছু সময় লাগে। এই সময়টার সুযোগ নিয়েছে কিছু দুর্বৃত্তসহ পরাজিত কুশীলবরা, সাথে যোগ দিয়েছে বাইরের দোসররাও। দুর্বুত্তরা জাতির এই সংকটজনক মুহূর্তে ডাকাতি ও লুন্ঠনের কাজ করছে, এ কাজে রাজনৈতিক ইন্ধনের বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। দেশের কোনো কোনো জায়গায় সংখ্যালঘু ও দুর্বলদের ওপর হামলার ঘটনা লক্ষ্য করা গেছে।

পাশাপাশি তাদের রক্ষায় দেশের নাগরিক ও ধর্মীয় নেতাদের এগিয়ে আসার প্রশংসনীয় উদ্যোগও লক্ষ্য করা গেছে। আশা করি দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিষয়গুলো লক্ষ্য করেছেন। এরপরও আমাদের প্রতিবেশি ভারতের কিছু উগ্র রাজনৈতিক নেতা ও তাদের তাঁবেদার মিডিয়া বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলার তান্ডব চলছে বলে প্রোপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য তাদের এই প্রচারণা যে মিথ্যা তা বিবিসির প্রতিবেদনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আর পরিস্থিতিও ক্রমেই স্বাভাবিক হয়ে আসছে। এমন অবস্থায় সংখ্যালঘুদের নেতারা বিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবী করেছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তো তাদের সাথেই আছে, আশা করি দাবীও পূরণ হবে।

দৈনিক সংগ্রাম