সকল পর্যায়ে সংস্কার ও দুর্নীতির মূলোৎপাটন করার ঘোষণা প্রধান উপদেষ্টার
Share on:
যে কোনো দেশের নীতি বাস্তবায়নে সচিবরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায়ও তাঁদের রয়েছে মহাকর্তব্য। আর বাংলাদেশের এখন যে অবস্থা, অর্থাৎ স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পলায়নের পর দেশে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতে সংস্কার শব্দটিই বেশি শোনা যাচ্ছে।
এক্ষেত্রেও সচিবদের পালন করতে হবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বিষয়টি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বেশ ভালো করে জানেন বলেই সরকারের সব পর্যায়ে সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করতে সচিবদের নির্দেশ দিয়েছেন। শুধু সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ নয়, তা বাস্তবায়নে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাওয়ার বার্তাও দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করার কথাও বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। বর্তমান সময়ে দেশের মানুষেরও আকাঙ্খা সর্বক্ষেত্রে সংস্কার এবং দুর্নীতির মূলোৎপাটন। এদিক থেকে বলা যায়, ড. ইউনূস গণআকাঙ্খারই প্রতিধ্বনি করেছেন।
গত ৪ সেপ্টেম্বর সচিবদের এক বৈঠকে এসব নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা। উল্লেখ্য যে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এই সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর এটিই প্রথম সচিব সভা। এর আগে নিজের অধীন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা।
উল্লেখ্য যে, সচিবসভা অনুষ্ঠিত হয় সব সচিবের উপস্থিতিতে। প্রধান উপদেষ্টা সচিবদের উদ্দেশে বলেন, সৃষ্টিশীল ও নাগরিক-বান্ধব মানসিকতা নিয়ে প্রতিটি মন্ত্রণালয় বিভাগ স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার কর্মসূচির কর্মপরিকল্পনা দাখিল করবে, যা নিয়মিত মূল্যায়ন ও পরিবীক্ষণ করা হবে। এই সংস্কার কর্মসূচি প্রণয়নে প্রয়োজন অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা ও মতামত গ্রহণ করতে হবে। সচিবদের উদ্দেশে ড. ইউনূস বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়তে গৎবাঁধা চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। চিন্তার সংস্কার করে সৃজনশীল উপায়ে জনস্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সরকারি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
দুর্নীতি প্রতিহত করার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দুর্নীতির মূলোৎপাটন করে সেবা সহজ করার মাধ্যমে জনগণের সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে। সরকারি অর্থের সবোত্তম ব্যাবহার নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া সরকারি কেনাকাটায় যথার্থ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করার কথাও বলেন তিনি। ড. ইউনূস আরও বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা বৈষম্যহীন মানবিক দেশ গড়ার যে প্রত্যয়, যে ভয়হীন চিত্ত উপহার দিয়েছেন, তার ওপর দাঁড়িয়ে বিবেক ও ন্যায়বোধে উজ্জীবিত হয়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে সততা, নিষ্ঠা ও জবাবহিহি নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সৃষ্ট নতুন বাংলাদেশ নিয়ে বিশ^ব্যাপী যে আগ্রহ ও ইতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে, দেশের স্বার্থে তা সর্বোত্তম উপায়ে কাজে লাগাতে হবে। আমরা মনে করি, প্রথম সচিব সভায় বর্তমান সময়ের করণীয় সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা যা বলেছেন তা যথেষ্ট। সচিব পদবীর নাগরিকদের তা ভালোভাবে বোঝারও কথা। তবে ভালো ফল পাওয়ার জন্য দেশপ্রেম ও নৈতিকমানের বিষয়টিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।