সম্পাদকীয় প্রকাশনার সময়: রবিবার ১১, অগাস্ট ২০২৪

সকলের হৃদয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন

Share on:

ছাত্র-জনতার ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানকে অনেকে বিপ্লব হিসেবে অভিহিত করেছেন। বিপ্লবের অনেক উপাদানই এই অভ্যুত্থানে আছে। তবে ছাত্র-জনতা সুযোগ থাকার পরও কোনো বিপ্লবী সরকার গঠন করেননি।


তারা মধ্যপন্থা অবলম্বন করেছেন। ফলে স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট গঠিত হয়েছে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। শপথ গ্রহণের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেছেন, বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবও দিয়েছেন। এতে যে বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়েছে তা হলোÑতারা নতুন এক বাংলাদেশ গড়তে চান, তৈরি করতে চান নতুন এক রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। যেখানে স্বৈরতন্ত্র আর কখনো ফিরে আসতে পারবে না, মানুষের জীবনে নিরাপত্তা এবং সমাজে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে; যেখানে গণতন্ত্র, সাম্য ও মানবাধিকার থাকবে। এই লক্ষ্যগুলো সামনে রেখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ করে যাবে বলে তারা জানান। এছাড়া বর্তমান সময়ে জননিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলেও তারা উল্লেখ করেন। এসব বিষয়ের সাথে দেশের মানুষের স্বপ্ন জড়িত রয়েছে। তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাফল্য কামনা করেন।

দেশের মানুষ উপলব্ধি করেছে যে, স্বৈরাচারী শাসক দুঃশাসনের কারণে শুধু নিজেদেরই বিপদে ফেলে না, বিপদে ফেলে সমগ্র দেশবাসীকেও। অভ্যুত্থানের কারণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো দেশ ছেড়ে পালালেন, কিন্তু সাথে সাথে ভেঙে পড়লো তার সাজানো প্রশাসন এবং দলীয় ব্যবস্থাপনাও। দেশে সুশাসন থাকলে তিনি পালিয়ে গেলেও সবকিছু ঠিকঠাক মতো চলতে পারতো। কিন্তু তেমনটি তো হওয়ার নয়। কারণ স্বৈরশাসক একদিকে যেমন দলীয় শাসন প্রতিষ্ঠিত করেন, অপরদিকে সব কাঠামোকে নিজের বশীভূত রাখতে সচেষ্ট থাকেন। এমন বাস্তবতায় তার চারদিকে জড়ো হন চাটুকাররা। এরা ব্যস্ত থাকেন দুর্নীতি ও লুন্ঠনের কর্মকান্ডে। চাটুকার পরিবেষ্টিত অবস্থায় স্বৈরশাসক যে শুধু জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন তা নয়, জনগণের ভাষা বুঝতেও তারা অক্ষম হয়ে পড়েন। এমন অবস্থায় স্বৈরাচারের পতন অনিবার্য হয়ে ওঠে। যা আমরা লক্ষ্য করেছি শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে।

ছাত্র-জনতার ত্যাগ-তিতিক্ষা ও দৃঢ় অবস্থানের ফলে সংঘটিত হয়েছে এক ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান। জাতি এক গণতান্ত্রিক ও মানবিক সমাজ গঠনের অপূর্ব সুযোগ পেয়েছে। প্রথম স্বাধীনতার পর আমরা লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছি। হিংসা-বিদ্বেষ, বিভক্তি, দুর্নীতি এবং স্বৈরশাসন ছিল জাতির লক্ষ্য অর্জনের পথে বাধা। এখন দ্বিতীয় স্বাধীনতার পর শুধু স্বৈশাসকের সমালোচনা ও আনন্দ মিছিলে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, কর্তব্য পালনেও এগিয়ে আসতে হবে। এই কর্তব্য শুধু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপার বর্তায়নি; অন্যান্য রাজনৈতিক দল এবং জনগণের ওপরও বর্তায় যৌক্তিক দায়িত্ব। বিষয়টি উপলব্ধি করলেই মঙ্গল।

দৈনিক সংগ্রাম