মতামত/কলাম প্রকাশনার সময়: মঙ্গলবার ২৪, সেপ্টেম্বর ২০২৪

শান্তিচুক্তিতে পুতিনকে লাভবান হতে দেয়া যাবে না

Share on:

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত দুবার অভিযান চালিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব অস্বীকার করেছেন। সৌভাগ্যবশত, ইউক্রেনের জনগণের সাহসিকতা দেশটিকে এখনো দখল হওয়া থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।


আড়াই বছর ধরে ইউক্রেনের বাসিন্দারা কঠোরভাবে মাতৃভূমিকে রক্ষা করে এসেছে। এখন এটি স্পষ্ট যে তাঁরা কখনোই রাশিয়ার কাছে আত্মসমর্পণ করবেন না। তবে তাঁদের দৃঢ় প্রতিরোধ সত্ত্বেও পুতিনের নির্মম আগ্রাসন এখনো চলছে।

যদি ইউক্রেনের মিত্ররা যথার্থ দৃঢ়তা দেখাতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এই সংঘাত বছরের পর বছর ধরে চলতে পারে। আর সেটি হলে ইউরোপের স্থিতিশীলতা বিপন্ন হয়ে পড়বে। উদ্বেগের কথা হলো, সামরিক দিক থেকে ক্রমবর্ধমানভাবে শক্তিশালী হতে থাকা রাশিয়া কেবল ইউক্রেনকে নয়, পুরো বিশ্বকেই হুমকির মুখে ফেলেছে। সেই আলোকে দেখলে বলা যায়, এই যুদ্ধ শিগগির শেষ না হলে তা বিপর্যয়কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

রাশিয়ার যুদ্ধ ইতিমধ্যে বিশ্বকে ঝাঁকুনি দিয়েছে। জ্বালানি ও খাদ্যদ্রব্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে। এ যুদ্ধ পারমাণবিক নিরাপত্তাকেও ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক নীতিগুলো লঙ্ঘনের মাধ্যমে রাশিয়া বৈশ্বিক শৃঙ্খলাকেও অস্থিতিশীল করে তুলেছে। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্রদের যত দ্রুত সম্ভব পুতিনকে বোঝাতে হবে যে যুদ্ধ সমাপ্তির শর্ত তিনি একতরফাভাবে ঠিক করলে, তা গ্রহণযোগ্য হবে না। আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক নীতির ভিত্তিতে একটি শান্তি চুক্তির ব্যাপারে বৈশ্বিক সমর্থন গড়ে তুলে, ইউক্রেন যুদ্ধে নিজেদের অবস্থান আরও জোরালো করে, ইউক্রেনকে দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়ে এবং ন্যাটোতে ইউক্রেনকে নেওয়ার একটি স্পষ্ট পথ নির্ধারণ করে ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্ররা পুতিনকে বোঝানোর কাজটি করতে পারে।

এখন একদিকে পুতিন যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করছেন; অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি টেকসই শান্তির জন্য চেষ্টা করছেন। জেলেনস্কি ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার পূর্ণ প্রত্যাহার, পারমাণবিক নিরাপত্তা জোরদারকরণ এবং সংঘাতের পরিবেশ মোকাবিলার আহ্বানসংবলিত ১০ দফার একটি শান্তি ফর্মুলা সামনে এনেছেন। ফর্মুলাটির প্রতি সমর্থন আদায়ে এই গ্রীষ্মে তিনি সুইজারল্যান্ডে ৯০টির বেশি দেশের প্রতিনিধিদের একত্র করেছিলেন।

এখন একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য বৈশ্বিক চাপ দরকার হবে। তবে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে শক্তিশালী নিরাপত্তার নিশ্চয়তাও প্রয়োজন। রাশিয়া যেহেতু চুক্তি ভঙ্গ ও ব্যাপক যুদ্ধাপরাধের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আইন ও মৌলিক মানবাধিকারের প্রতি বারবার অবজ্ঞা প্রদর্শন করেছে, সেহেতু শান্তির জন্য শুধু পুতিনের প্রতিশ্রুতির ওপর ভরসা করা যায় না। আদতে যুদ্ধের ফল কী হবে এবং শান্তিচুক্তির শর্ত কী হবে, তা ইউক্রেনের আত্মরক্ষার ক্ষমতা কতটুকু আছে, তার ওপর নির্ভর করবে।

এ মুহূর্তে যুদ্ধে ইউক্রেনের অবস্থানকে জোরালো করার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। রাশিয়ার মিসাইল ও ড্রোন ইউক্রেনের সীমানায় ঢুকে বিভিন্ন স্থানে বেসামরিক মানুষ হত্যা করছে। ইউক্রেনের ভেতর যেসব হামলা হচ্ছে, তার বেশির ভাগ রাশিয়ার ভূখণ্ড থেকে পরিচালিত হচ্ছে। এ কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের দূরপাল্লার অস্ত্র ব্যবহারের পূর্ণ অধিকার রয়েছে। এগুলো ব্যবহার করে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা এবং রাশিয়ায় ঢুকে আক্রমণ প্রতিহত করার অধিকারও তাদের রয়েছে।

এখন ইউক্রেনের সক্ষমতাকে সীমিত করার মানে হলো, তাদের একটি হাত পিছমোড়া করে বেঁধে তাঁদের লড়াই করতে বলা। ইউক্রেনীয় বাহিনী ধারাবাহিকভাবে দেখিয়েছে, তারা পশ্চিমাদের সরবরাহ করা অস্ত্রগুলো কতটা কার্যকর ও দায়িত্বশীলভাবে ব্যবহার করতে পারে। এ কারণে ইউক্রেনকে দেওয়া অস্ত্র কখন ও কীভাবে ব্যবহার করা হবে, সে বিষয়ে পশ্চিমা মিত্ররা যে বাধ্যবাধকতা ঠিক করে দিয়েছিল, তা তুলে নেওয়ার সময় এসেছে।

আসন্ন মাসগুলোয় ইউক্রেনের প্রতি দেওয়া প্রতিশ্রুতি কতটা পূরণ হচ্ছে, সেটা ঠিকঠাকভাবে তুলে ধরাই আমাদের বড় কাজ হবে। পুতিনকে শান্তিচুক্তিতে লাভবান হওয়া থেকে বিরত রাখতে শুধু ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তাই যথেষ্ট হবে না। ইউক্রেনের মিত্রদের তাদের সমর্থন বাড়িয়ে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে দেশের ভেতরই প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং ক্ষতিগ্রস্ত সামরিক সরঞ্জামগুলো মেরামত করার জন্য বেসামরিক ঠিকাদার বা বিশেষায়িত সামরিক দল মোতায়েন করার মতো আরও পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রথম আলো