সম্পাদকীয় প্রকাশনার সময়: বুধবার ১৮, সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসনের উদ্যোগ নিন

Share on:

বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেসব ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা করেন, তাদের আবাসন সংকট খুবই তীব্র। রীতিমতো অমানবিকভাবে তাদেরকে বসবাস করতে হয়। এ বিষয়গুলো একদিনের নয়। দীর্ঘদিন ধরেই আমরা তাদেরকে অবহেলায় রেখেছি।


বিগত কোনো রাজনৈতিক সরকারই এসব বিষয়ে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপও গ্রহণ করেনি। কিন্তু যেহেতু এবার ছাত্রদের একটি অভ্যুত্থান হয়েছে এবং ছাত্রদের নিয়েই একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে, তাই ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যমান সংকটগুলো আগের চেয়েও গুরুত্ব দিয়ে সুরাহা করা হবে এমনটাই সকলের প্রত্যাশা।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হলগুলোর একদমই যাচ্ছেতাই অবস্থা। হলে সিট বরাদ্দ পাওয়ার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়মই এতদিন ছিল না। প্রথমবর্ষের ছাত্রদের সিট পাওয়ারই কোনো অবকাশ ছিল না। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের কোটায় অনেকেই গণরুমে জায়গা পেতেন। এরকম রুমে যারা থেকেছেন, কিংবা অন্তত যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই রুমগুলোর চিত্র দেখেছেন, তাদের অনুধাবন করার কথা যে, কতটা অমানবিকভাবে এই ছাত্ররা থাকেন।

যেখানে ১০ জন থাকলে ভালো হয়, সেখানে ৪০-৪৫ জন ছাত্রও থাকতে বাধ্য হয়। মাত্র দুদিন আগেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা বিক্ষোভ করেছেন। তাদের দাবি, ঢাবির মোট ছাত্রছাত্রীর প্রায় ৫৫ শতাংশ ছাত্রী হলেও তাদের আবাসনের জন্য মাত্র ৫টি হল রয়েছে। তাই অধিকাংশ ছাত্রীই ক্যাম্পাসের বাইরে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন এবং সেখানে থাকতে গিয়ে তারা নিরাপত্তাহীণতাসহ নানা ধরনের হয়রাণির শিকার হচ্ছেন।

হলগুলোর ক্যান্টিনগুলোতে খাবারের মানও একদম নি¤œমানের। রাজনীতিবীদেরা বছরের পর বছর ছাত্রদেরকেই জাতির ভবিষ্যত, আগামী দিনের কান্ডারি- কিংবা এ ধরনের আরো অনেক বাগাড়ম্বর করে গেলেও কার্যত অপুষ্টিতে ও বিনা আবাসন সুবিধা দিয়েই তারা ছাত্রদেরকে রেখেছিলেন। হলগুলোর ভেতর ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতাদের রুম বরাদ্দ ছিল, টর্চার সেল ছিল। এবারের অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগকে যখন হল থেকে বের করে দেওয়া হয়, তখন এর নেতাদের রুম থেকে নির্যাতনের যেসব অস্ত্র ও যন্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে তা দেখলে শিহরিত হতে হয়। একইসঙ্গে, ছাত্রলীগের নেতাদের রুমগুলো থেকে যেসব জিনিস পাওয়া যায় তা দেখে এও বোঝা যায় যে, রুমগুলোতে নিয়মিত অসামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো। হল সুপার বা হল প্রভোস্ট থাকার পরও দিনের পর দিন এই অন্যায়গুলো হয়ে গিয়েছে- যা নিতান্তই দু:খজনক। এ ধরনের অনাচার আর যেন হলগুলোতে শুরু না হয় আমাদের স্বার্থেই তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

শুধু পাবলিক বিশ^বিদ্যালয় নয়, বিভিন্ন কলেজ বা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটসহ আরো অনেক ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই আবাসিক হল রয়েছে। বাহির থেকে কেউ যদি এসব হলে যায়, তার হয়তো ভেতরে ঢুকতেই ইচ্ছে করবে না। অস্বাভাবিক রকমের নোংরা এবং একদমই জরাজীর্ণ কাঠামোতে এ হলগুলো রয়েছে। অনেকটা ভুতুড়ে বাড়ির মতো। দুর্গন্ধেও ভরপুর থাকে চারিপাশ। অথচ এরকম অনিরাপদ, নোংরা ও স্যাঁতস্যাঁতে একটি জায়গায় আমরা এই ছাত্রদেরকে ফেলে রেখেছি বছরের পর বছর। এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থেকেই শিক্ষা জীবন শেষ করেছে অনেকগুলো প্রজন্ম।

আমরা আশা করবো, এবারের ছাত্রদের পক্ষ থেকে যারা উপদেষ্টা নির্বাচিত হয়েছেন তারা এই বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন। ভুক্তভোগী ছাত্ররা রাষ্ট্রের এত গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে এর আগে যাওয়ার সুযোগ পায়নি। তাই ছাত্র সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে যারা এখন উপদেষ্টা পরিষদে আছেন-বিশ^বিদ্যালয়ের আবাসন সংকটের তরতাজা স্মৃতি নিশ্চয়ই তাদের তাড়া করে ফিরবে। তাই ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সাধারণ ছাত্রদের সাথে আলাপ করে এবং বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের আবাসন কাঠামো উন্নত করা প্রয়োজন। অনতিবিলম্বে, এই খাতে আর্থিক বরাদ্দ বৃদ্ধি করা উচিত। হলগুলোর সংস্কারের পাশাপাশি খাবারের মানও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তবে সংস্কারের এসব প্রক্রিয়াকে ব্যবহার করে কেউ যেন দুর্নীতি করতে না পারে এবং প্রকৃত ছাত্রছাত্রীরাই যাতে এসব উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের সুফল পায়- তা নিশ্চিত করা অপরিহার্য।

দৈনিক সংগ্রাম