সম্পাদকীয় প্রকাশনার সময়: মঙ্গলবার ২০, অগাস্ট ২০২৪

‘লেজুড়বৃত্তিমুক্ত সংস্কৃতি অঙ্গন চাই’

Share on:

‘লেজুড়বৃত্তিমুক্ত সংস্কৃতি অঙ্গন চাই’, শিরোনামটি দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতো। ১৭ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি বন্ধ।


৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন থেকেই দেশের প্রধান এই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ফটকে তালা। একাডেমির উত্তর দিকে জাতীয় নাট্যশালার ফটকের সামনে মুক্ত ও গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক পরিবেশ নির্মাণের দাবিতে সমাবেশ করেছেন সংস্কৃতিকর্মীরা। শুক্রবার বিকেলের এই সমাবেশ থেকে অবিলম্বে ঢাকাসহ দেশের সকল শিল্পকলা একাডেমি খুলে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

সমাবেশটি শুরু হয়েছিল জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে। এরপর ছাত্রদের গণআন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সমাবেশে নাটক, নৃত্য, সঙ্গীত, আবৃত্তিসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের মূলত তরুণ ও মধ্যম সারির সংস্কৃতি কর্মীরাই ছিলেন উপস্থিত। স্বনামখ্যাত প্রবীণ ও অগ্রগণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের দেখা যায়নি সমাবেশে। তাদের অনুপস্থিতির কারণে তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনা লক্ষ্য করা গেছে সেখানে। প্রথাগতভাবে কোনো সভাপতি ছিলেন না সমাবেশে। ফটকের সামনের সড়কে সারি দিয়ে চেয়ার পাতা ছিল। সঞ্চালক বক্তার নাম ঘোষণা করলে তিনি শ্রোতার আসন থেকে উঠে গিয়ে বক্তব্য পেশ করেছেন। সমাবেশটির পরিবেশ এবং উচ্চারণ থেকে কিছু বিষয় উপলব্ধি করা যায়। যেমন, যে কোনো সমাবেশে একজন সভাপতি থাকেন এবং প্রবীণ ও অগ্রগণ্য ব্যক্তিই এই আসন অলঙ্কৃত করে থাকেন। কিন্তু এই সমাবেশে কোনো সভাপতিই রাখা হয়নি। তাহলে কি তরুণ সাংস্কৃতিক কর্মীদের সাথে স্বানামখ্যাত প্রবীণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের কোনো দ্বন্দ্ব চলছে? প্রসঙ্গত এখানে স্টাবলিশমেন্ট এবং এন্টিÑস্টাবলিশমেন্টের বিষয়টি চলে আসে। স্বাধীন সাংস্কৃতিক কর্মীরা তো সমাজের অন্যায় ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়ে যায়, অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরে। ফলে স্টাব্লিশমেন্ট তথা সরকারের সাথে স্বাধীন সংস্কৃতি কর্মীদের সম্পর্ক তেমন ভালো থাকে না। বিপরীতে যেসব স্বনামধন্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সরকার থেকে সুবিধা পেতে চান, তারা হয়ে পড়েন নতজানু। তারা সরকারের অন্যায়-অবিচার, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে মুখ খুলেন না। ফলে জালেম সরকারের দোসর হিসেবে তথাকথিত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরাও মানুষের কাছে গণশত্রু হিসেবে বিবেচিত হন। সাংস্কৃতিক সমাবেশে গণআন্দোলনে শহীদ ছাত্র-জনতার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। ফলে উপলব্ধি করা যায়, তারা দরবারি সংস্কৃতিকসেবীদের সাথে যুক্ত থাকতে চান না।

তরুণ সংস্কৃতিক কর্মীরা লেজুড়বৃত্তিমুক্ত গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক পরিবশে নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। এই দাবিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর বিপরীতে রয়েছে সরকারি ঘরানার দরবারি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের প্রতাপ। আরও রয়েছে ভিনদেশী রাজনৈতিক তত্ত্বের আরোপিত সাংস্কৃতিক বলয় নির্মাণের প্রচেষ্টা, যার সাথে বাংলাদেশের গণমানুষের আকাক্সক্ষার কোনো সম্পর্ক নেই। আসলে দরবারি কিংবা আরোপিত সংস্কৃতির বদলে আমাদের প্রতিষ্ঠা করতে হবে জনগণের সংস্কৃতি। এমন কাজে প্রয়োজন হবে জনগণের বোধ-বিশ^াস ও আশা-আকাক্সক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া। এখানে ব্যক্তিগত বোধ ও তত্ত্বের আগ্রাসন চালানো হলে কখনো গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির পরিবেশ তৈরি হবে না।