লক্ষ্মীপুরে এখনো লাখো মানুষ পানিবন্দী, অবৈধ বাঁধ অপসারণে উদ্যোগ নিন
Share on:
দেশের পূর্বাঞ্চলের বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার বড় কারণ পানি দ্রুত নামতে না পারা। সব খাল দখল হয়ে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বন্যা শেষ হয়ে গেলেও লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে এখনো পানি নামছে না। নামলেও খুব ধীরগতিতে।
ফলে বন্যাকবলিত এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। লক্ষ্মীপুর জেলায় এখনো এক লাখ মানুষ পানিবন্দী। জেলাটির ছোট-বড় শতাধিক খালে প্রায় আড়াই হাজার অবৈধ বাঁধ রয়েছে। সেসব বাঁধের কারণে বন্যার পানি আটকে আছে। এখন এসব বাঁধ অপসারণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
প্রথম আলো জানাচ্ছে, স্মরণকালের এ বন্যায় লক্ষ্মীপুর জেলার ৯০ ভাগ এলাকাই পানিতে তলিয়ে যায়। প্রায় ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। তবে তা এখন কমে দাঁড়িয়েছে এক লাখে। তাঁদের কেউ কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে থাকলেও বেশির ভাগ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে যাননি। চরম দুঃখ-কষ্ট নিয়ে বসবাস করছেন এ জেলার পাঁচটি উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকার বাসিন্দারা। এখনো পানি না নামায় তাঁরা ঘরে ফিরতে পারছেন না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুসারে লক্ষ্মীপুরে ছোট-বড় প্রায় ১১০টি খাল রয়েছে। এসব খালে অবৈধভাবে প্রায় আড়াই হাজার বাঁধ তৈরি করে মাছ চাষ করছেন প্রভাবশালীরা। এ কারণে ডাকাতিয়া, ভুলুয়া নদী ও রহমতখালী, বিরোন্দ্র খালসহ অনেক খালের পানিনিষ্কাশন বন্ধ হয়ে গেছে। এসব নদী বা খাল মেঘনা নদীতে গিয়ে মিশেছে। কিন্তু দখলের কারণে খালগুলো সংকুচিত হয়ে গেছে। জেলা ও উপজেলা শহরের বর্জ্য ফেলার কারণেও অনেকগুলোর খালের দখল ও দূষণ ত্বরান্বিত হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খানের বক্তব্য—ভুলুয়া, রহমতখালী নদীসহ খালগুলো দখলে সংকুচিত হয়ে গেছে। এ কারণে পানি নামতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। কোনো কোনো নদী ও খালে অপরিকল্পিতভাবে দেওয়া হয়েছে বাঁধ। এ কারণে দুই সপ্তাহ ধরে মানুষ এখনো পানিবন্দী। এ অবস্থায় খাল খনন ও দখলমুক্ত জরুরি।
দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলার খালগুলোর অবস্থা করুণ। ফলে বর্ষা মৌসুমে এখন জলাবদ্ধতার মুখে পড়তে হচ্ছে মফস্সল শহরগুলোতেও। লক্ষ্মীপুরের পরিস্থিতিতে আমরা এখন বন্যা–পরবর্তী জলাবদ্ধতাই দেখতে পাচ্ছি। এখন এ থেকে রেহাই পেতে দ্রুত খালগুলো পুনরুদ্ধার করতে হবে। বিশেষ করে খালগুলোতে যে অবৈধ বাঁধ আছে, সেগুলো অপসারণ করার কোনো বিকল্প নেই।
আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসন এ ব্যাপারে দ্রুত তৎপর হবে। এবারের বন্যার করুণ অভিজ্ঞতা থেকে লক্ষ্মীপুরের স্থানীয় বাসিন্দাদেরও এ বোধোদয় হবে, খালগুলোর সুরক্ষার দায়িত্ব তাদেরও। তাঁরা এ ব্যাপারে সচেতন হবেন এবং স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও তাঁরা সহায়তা করবেন।