রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের হয়রানি থেকে মুক্তি দিন
Share on:
নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে মানুষ দাবি জানাচ্ছে। এই দাবি পথ-প্রান্তর থেকে সামাজিক মাধ্যমে বেশি হচ্ছে।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তন, দুর্নীতি প্রতিরোধ, রাজনৈতিক অধিকারসহ অনেক বিষয়ে দাবি জানানো হচ্ছে। তবে এসবের মধ্যে যেটি বেশি চোখে পড়ছে, তা হচ্ছে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের কথা। এ কথা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর দেশের অর্থনৈতিক ভিত মজবুত রয়েছে। প্রবাসীরা বছরে যে ২০/২২ বিলিয়ন ডলার পাঠান, তার সবই যায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে এবং আমদানি ব্যয় মিটাতে। তবে এ আয়ের পেছনে সরকারের খরচ কিন্তু নেই বললেই চলে। অন্যদিকে রপ্তানি আয় থেকে যে ডলার আসে তার পেছনে খরচ বিপুল। শুধু কাঁচামাল আমদানিতেই বছরে ব্যয় কয়েক বিলিয়ন ডলার। বহুল আলোচিত মুদ্রা পাচারের কথা না হয় না-ই বলা হলো, যেখানে রপ্তানিকারকদের একটা অংশের ভূমিকা চোখে পড়ার মতো।
রেমিট্যান্স ঘাটতি দেশের কর্তাব্যক্তিদের ঘুম কতটা কেড়ে নেয়, তা বিগত সরকারের সময় আমরা দেখেছি। এতৎসত্ত্বেও দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, এই রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের কতভাবে হয়রানি হতে হয়, তা প্রায় সবারই জানা। প্রথমত, বিদেশে যাওয়ার সময় তারা সরকারি সহায়তা পান না বললেই চলে। কাজসহ ভিসা জোগাড় করে রিক্রুটিং এজেন্সি; সেটা বিদেশগামীদের চড়া দামে কিনতে হয়। এ টাকাও জোগাড় করতে হয় নিজের জমি বা ভিটেমাটি বিক্রি করে কিংবা আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর কাছ থেকে ধার করে। আজকাল সেটাও মিলছে না। বিদেশে চাকরি করতে ইচ্ছুক অনেককেই চড়া সুদে মহাজন বা এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিতে হয়।
ছুটিতে বা চাকরি শেষে এসব রেমিট্যান্স যোদ্ধা যখন দেশে ফেরেন তখনও পদে পদে অপমান, হয়রানির শিকার হতে হয় তাদের। বিশেষ করে বিমানবন্দরে বেশি হয়রানি করা হয়। অনেক সময় তাদের ‘কামলা’ বলে কটূক্তি করা হয়। বিভিন্ন সময় তাদের লাগেজ কেটে জিনিসপত্র চুরি করা হয়। বিমানের অযৌক্তিক ভাড়া নিয়ে রয়েছে অনেক সমালোচনা। কেউ কেউ দাবি তুলছেন, এই রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের বিমানবন্দরে ‘ভিআইপি’ মর্যাদা দেওয়া হোক। এদেশে ভিআইপি কারা তা আমরা জানি। ভিআইপিদের আচরণ কেমন তাও আমরা বহুবার দেখেছি। সাধারণ মানুষ তাদের কাছে মানুষ বলে বিবেচিত হয় না অধিকাংশ সময়। তাই দেশের অর্থনীতির চাকা সবসময় সচল রাখেন, সেই প্রবাসীরা ভিআইপি মর্যাদা চান না। তাদের বক্তব্য, রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের ‘ভিআইপি’ মর্যাদার প্রয়োজন নেই। শুধু দেশের জন্য তাদের অবদান স্বীকার করলেই চলবে। এই স্বীকৃতিস্বরূপ কিছু জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ ক্ষেত্রে প্রথমেই আসে বিদেশ যাওয়া সহজীকরণের বিষয়। একই সঙ্গে ব্যয় কমানো গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে দেশের রেমিট্যান্স যোদ্ধার সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। সবাই জানেন, ভারত, নেপালসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধার জন্য বিদেশ যাওয়ার খরচ বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম। মূলত এ ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করেই তারা এটা সম্ভব করেছে। আমাদের দেশে আছে রিক্রুটিং এজেন্সির অতি মুনাফা, দালালের ধান্দা এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ, কমিশন ইত্যাদি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর নতুন সরকার পারে এসব অনিয়ম দূর করতে। এর অংশ হিসেবে এবার বিমানের টিকিটের সিন্ডিকেট ভেঙে দাম কমানো হোক, যাতে প্রবাসীরা খুব সহজে স্বল্প সময় অন্তর পরিবারের সঙ্গে মিলিত হতে পারেন।
মালপত্র চুরি, হয়রানি বন্ধ, প্রবাসে মৃত্যুবরণকারীদের লাশ খুব সহজে ফেরত আনা এবং ইমিগ্রেশন সিস্টেমে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।