মতামত/কলাম প্রকাশনার সময়: শুক্রবার ৬, সেপ্টেম্বর ২০২৪

রবিউল আউয়াল ও মহানবীর শুভাগমন

Share on:

রবিউল আউয়াল হিজরি সনের তৃতীয় মাস। এ ‍মাসের গুরুত্ব ও মর্যাদা অপরিসীম। এই মাসে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দুনিয়ার বুকে শুভাগমন ঘটে। স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যাকে লক্ষ্য করে পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন– সমগ্র জগৎবাসীর জন্য আপনাকে রহমত করেই প্রেরণ করেছি। ওই আয়াত প্রমাণ করছে, রাসুলে আকরাম (সা.) গোটা সৃষ্টিজগতের জন্য রহমত।


মহান আল্লাহর রুবুবিয়্যাত তথা মালিকানা যে পর্যন্ত বিস্তৃত, বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুয়ত সে পর্যন্ত ব্যাপৃত। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, হে নবী (সা.)! আমি আপনাকে পাঠিয়েছি বিশ্বজগতের জন্য শান্তি ও রহমতস্বরূপ। (সুরা আম্বিয়া, আয়াত:১০৭)

একজন মানুষ মৃত্যু পর্যন্ত রাসুলুল্লাহর (সা.) জীবন থেকে শিক্ষা নিতে পারে। এ কারণে রাসুলের আদর্শের কথা, তাঁর শিক্ষার আলোচনা সারাবছর হয়। তবে রবিউল আউয়ালে মুসলিম জাতির ভিন্ন একটি আবেগ ও ভালোবাসা রয়েছে।

পবিত্র রবিউল আউয়াল মাস স্মরণ করিয়ে দেয় রাসুলুল্লাহর (সা.) প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার কথা। এ মাসে রাসুলুল্লাহর (সা.) শুভাগমন ঘিরে ঘটে যাওয়া বিস্ময়কর মুজিজা, তাঁর অলৌকিক জীবনাদর্শ সবই মুসলিম জাতির অন্তরে ঢেউয়ের মতো দুলতে থাকে।

পবিত্র রবিউল আউয়াল মাস ইবাদতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ মাসের বিশেষ আমলগুলোর মধ্যে অন্যতম সুন্নত রোজা মাসজুড়ে প্রিয় নবীর (সা.) নিয়মিত আমল। প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা পালন করা, আইয়ামে বিজের রোজা অর্থাৎ চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ নফল রোজা পালন করা। রোজা রাখার পাশাপাশি এ মাসজুড়ে নফল নামাজ বেশি বেশি আদায় করা। বিশেষ করে তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশ্ত-দোহা, জাওয়াল, আওয়াবিন, তাহিয়াতুল মসজিদ, দুখুলুল মসজিদ ইত্যাদি নামাজের ব্যাপারে যত্নবান হওয়া খুবই জরুরি। আর সবসময় প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠানো। সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত এ মাসজুড়ে নিজেদের ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত রাখা।

মাহে রবিউল আউয়ালকে কেন্দ্র করে আরও বহু ঐতিহাসিক, গুরুত্বপূর্ণ ও স্মরণীয় ঘটনা রয়েছে, যা মাহে রবিউল আউয়ালের মর্যাদা ও গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দেয়।

আল্লাহতায়ালা বলেছেন, হে আমার হাবিব মুহাম্মদ (সা.), আমি আপনাকে যদি সৃষ্টি না করতাম তাহলে এই পৃথিবী সৃষ্টি করতাম না।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) হিজরতের উদ্দেশে রওনা করেছিলেন ১ রবিউল আউয়াল। তিনি মদিনায় পৌঁছেন ১২ রবিউল আউয়াল। প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মসজিদে কুবা নির্মাণ করেন ১৬ রবিউল আউয়াল।

রবিউল আউয়াল মাসের আগমন ঘটে নবীপ্রেমের প্রতীক ও নিদর্শন হিসেবে। যার হৃদয়ে নবীপ্রেম ও নবীর ভালোবাসা থাকবে, রবিউল আউয়াল তার অন্তরে আবেগ, উচ্ছ্বাস আর স্পন্দন সৃষ্টি করবে। উৎসাহিত করবে মহানবীর (সা.) আদর্শ ও সুন্নতের প্রতি। আল্লাহই তো ঘোষণা করেছেন, নিশ্চয়ই রাসুল (সা.)-এর মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ।

হাদিসে বর্ণিত, রাসুলে আকরাম (সা.) এরশাদ করেন, তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত ইমানদার হবে না, যে পর্যন্ত না আমি তার কাছে নিজের পিতা-মাতা, সন্তান এবং অন্যান্য মানবকুলের চেয়ে বেশি প্রিয় হবো।

অতএব, আমাদের উচিত হবে রাসুলে আকরাম (সা.)-এর আগমনের এ মাসকে কেন্দ্র করে তাঁর ভালোবাসায় আমাদের সিক্ত হওয়া এবং তাঁর মহান আদর্শ ও সুন্নতকে আঁকড়ে ধরে ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তিলাভের জন্য সচেষ্ট হওয়া। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই তৌফিক দান করুন।

দৈনিক সমকাল