যশোরের দুঃখ ‘ভবদহের জলাবদ্ধতা’ কবে দূর হবে?
Share on:
যশোরের ভবদহ অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা আবারও বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। নদী দিয়ে পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। এ সমস্যায় বছরের পর বছর ধরে ভুগছে ভবদহের মানুষ। কয়েক দশকে বিভিন্ন সরকার এ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে।
বিশেষ করে বিগত সরকারের আমলে কয়েক শ কোটি টাকা খরচও করা হয়েছে একাধিক প্রকল্পে। কিন্তু ভবদহের মানুষের দুঃখ ঘোচেনি। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে কি ভুগতে থাকবে তারা?
যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল। এই এলাকার পানি ওঠানামা করে মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদ-নদী দিয়ে। পলি পড়ে নদ–নদীগুলো নাব্যতা হারিয়েছে। ফলে এসব নদ–নদী দিয়ে এখন ঠিকমতো পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে না। এ কারণে পানি আটকা পড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। বছরের অনেক দিন ধরে এ জলাবদ্ধতা থেকে যায়। তখন গ্রামের পর গ্রাম পানিতে তলিয়ে যায়। বেশির ভাগ ঘরবাড়ি, বাজারঘাট, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট ও মাছের ঘের প্লাবিত হয় এবং পানিবন্দী হয়ে পড়ে হাজার হাজার মানুষ।
ভবদহ অঞ্চলের এ সংকট জিইয়ে থাকার মূল কারণ হচ্ছে প্রাকৃতিক উপায়ে এর সমাধান না খোঁজা। কারণ, সেখানকার সাগরের সঙ্গে নদ–নদীর সংযোগ ও জোয়ার–ভাটার সম্পর্ক। পানিবিশেষজ্ঞদের পরামর্শে একসময় এমন সমাধান খোঁজা হয়েছিল, নেওয়া হয়েছিল প্রকল্পও। কিন্তু স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনে সেই প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়। এরপর যে প্রকল্প নেওয়া হয়, তাতে বিপুল অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই হয়নি, জলাবদ্ধতার সমস্যা ঠিকই থেকে যায়।
ভবদহের মানুষ এ দুঃখ থেকে মুক্তি পেতে সেখানে গড়ে তুলেছে ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি নামের একটি নাগরিক আন্দোলন। এ সংগঠনের পক্ষ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর যশোরের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পানিসম্পদ উপদেষ্টার কাছে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, বিগত সরকারের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী, ঠিকাদার ও ঘেরমালিক সিন্ডিকেটের ষড়যন্ত্রে ভবদহ স্লুইসগেট থেকে ৬০ কিলোমিটার নদী হত্যা করা হয়েছে। সংকট থেকে মুক্তি পেতে তারা টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) বা জোয়ারাধার প্রকল্প চালু এবং উজানে মাথাভাঙ্গা নদীর সঙ্গে ভৈরব নদের পুনঃসংযোগের দাবি জানানো হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার আগে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ভবদহ অঞ্চল পরিদর্শন করেছিলেন। ফলে অঞ্চলটির সংকট নিয়ে তিনি অবগত আছেন। আমরা আশা করব, এবার তিনি ভবদহ অঞ্চলের সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।