মতামত/কলাম প্রকাশনার সময়: শনিবার ৭, সেপ্টেম্বর ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক কেমন হবে?

Share on:

বিশ্বের সব দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্কটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। আর ভূরাজনৈতিক সব ক’টি অঞ্চলের মধ্যে বিদায়ী বাইডেন প্রশাসন ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়েই বাজি ধরেছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে পরবর্তী প্রশাসন দায়িত্ব বুঝে নেবে।


তাই প্রেসিডেন্ট হিসেবে এই শেষ কয়েক মাস তাঁর উত্তরাধিকারী গড়ে তোলার সময়। এ কারণে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সাম্প্রতিক চীন সফর এবং এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিংকেনের এশিয়া সফর এখানে গুরুত্বপূর্ণ। সফরগুলো মার্কিন-চীন সম্পর্কের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বার্তা দেয় এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের উত্থান ঠেকাতে বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা দলের শেষ পর্যন্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার সাক্ষ্য বহন করে।

ইউরোপ ও পশ্চিম এশিয়ায় ক্রমবর্ধমান যুদ্ধ আমেরিকান সম্পদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। এ সত্ত্বেও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের উত্থান আমেরিকার বৈশ্বিক প্রাধান্যের বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। মার্কিন একাধিক সরকারি সংস্থা এটি স্পষ্ট করেছে। এ প্রেক্ষাপটেই আলোচ্য সফরগুলো হচ্ছে; ব্লিংকেনের ছয়টি দেশ সফর তো আছেই। ওয়াশিংটন ও বেইজিং তাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে আছে। এটিকে ‘গণতন্ত্র বনাম স্বৈরাচার’-এর মধ্যে একটি প্রতিযোগিতা হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে। উভয় পক্ষই একে অন্যকে ইন্দো-প্যাসিফিকের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিপন্ন করার জন্য অভিযুক্ত করছে। ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান উভয় দলের মনোনীত প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরা বৈদেশিক নীতির ব্যাপারে চীনকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখেন। যদিও তারা একে অপরের বিরুদ্ধে এ বিষয়ে একটি শক্তিশালী মার্কিন নীতি গ্রহণে ব্যর্থতার অভিযোগ তোলেন। খবরে প্রকাশ, সুলিভান চীনা কর্মকর্তাদের বলেছেন, বাইডেন দলের একজন হিসেবে কমলা হ্যারিস প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সহযোগিতার নীতিই চালিয়ে যেতে পারেন; মুখোমুখি সংঘাতের যে কোনো আশঙ্কা তিনি আটকে দেবেন।

তাইওয়ান বাণিজ্য, প্রযুক্তি দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকগুলোতে প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। ট্রাম্প থেকে বাইডেন প্রশাসন পর্যন্ত সবাই অন্যায় কারবারের জন্য চীনকে অভিযুক্ত করেছে। যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছে এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ বলে চীনা উচ্চ প্রযুক্তির পণ্য ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সামরিক, বাণিজ্যিক উভয় ক্ষেত্রে কার্যকারিতা রয়েছে এমন দ্বৈত ব্যবহারোপযোগী প্রযুক্তিগুলো নিরাপত্তা ও ব্যবসার সংযোগ আরও জটিল করে তোলে। এ ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার আহ্বান একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।

অনাকাঙ্ক্ষিত সংঘর্ষ ও ভুল বোঝাবুঝি ঠেকাতে দু্ই দেশের সামরিক ব্যক্তিদের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বেইজিংয়ে সুলিভান এক প্রেস কনফারেন্সে বলেছেন, দুই দেশের ‘সামরিক ব্যক্তিদের মধ্যে শক্তিশালী যোগাযোগ’ বাইডেনের উত্তরসূরির ক্ষেত্রেও কার্যকর হবে। তিনি বলেন, ‘বাস্তবে এ আলোচনার একটি খুব ইতিবাচক ফল হলো, সংঘাতপূর্ণ এলাকাগুলোর কমান্ডারদের মধ্যে, যেমন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের কমান্ডার ও পিপলস লিবারেশন আর্মি-পিএলএর দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ডারের মধ্যে কথোপকথন হবে।’

চীন সরকারের কাছে তাইওয়ান এমর একটি বিষয় যেখানে আপস চলে না। তাই মার্কিন-চীন সম্পর্ক চর্চায়ও এটিকে ‘প্রথম অনতিক্রম্য রেড লাইন’ হিসেবে বিবেচনা করে চীন। সুলিভানের সঙ্গে তাঁর সাম্প্রতিক বৈঠকের সময় চীনের কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের সহসভাপতি জেনারেল ঝাং ইউক্সিয়া তাইওয়ানকে গোপন সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করেছেন, যা চীনের ‘পুনর্মিলন’ মিশনের বিরুদ্ধে যায়। সুলিভান তাঁর প্রতিক্রিয়ায় তাইওয়ান প্রণালিতে নৌ চলাচলের স্বাধীনতা ও শান্তি বজায় রাখতে আরও জোরালো অবস্থান নেবে বলে ঘোষণা দেন।

এ ছাড়া দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের আঞ্চলিক সীমা লঙ্ঘন এবং ফিলিপাইনের মতো দেশগুলোর বিরুদ্ধে আগ্রাসী কৌশল মতবিরোধের ক্ষেত্র বিস্তৃত করে রেখেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুলিভান ও মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন মিত্র ও অংশীদারদের আশ্বস্ত করতে গত মাসে ওয়াশিংটন পোস্টে যৌথ উপসম্পাদকীয় লিখেছিলেন। এতে দাবি করেন, বাইডেনের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলটি পুরোনো ‘হাব অ্যান্ড স্পোক’ জোটকে নতুন করে সমন্বিত অংশীদারিত্ব ও আন্তঃসংযুক্ত নেটওয়ার্কের একটি নতুন মডেলে উন্নীত করেছে।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের উত্তাপের মধ্যে কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পদক্ষেপগুলো নিশানা করবেন। পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কে সবচেয়ে ভালোভাবে বেইজিংকে মোকাবিলা করতে পারবেন, তা নিয়ে বিতর্ক করবেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখনও স্থিতিশীল নয়। তবুও ব্লিংকেনের এশিয়া সফর ও সুলিভানের চীন সফরের লক্ষ্য ছিল আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতি ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে কৌশলগত বিষয়গুলোর ধারাবাহিকতা যেন নিশ্চিত থাকে।

দৈনিক সমকাল