মিয়ানমার জান্তা এবার রাশিয়ার ভাগনারের সাহায্য নিচ্ছে?
Share on:
মিয়ানমারের জান্তা কি যুদ্ধের শক্তি বাড়াতে রুশ রাষ্ট্রলালিত ভাড়াটে সেনাগোষ্ঠী ভাগনার গ্রুপের সাহায্য নিচ্ছে? ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতা দখলের পর থেকে মিয়ানমার জান্তা বহু সশস্ত্র বিরোধী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।
ওয়ান গাইড নামে একটি চীনা ভাষার ওয়েবসাইটে বলা হচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে সন্দেহ করা হচ্ছে, জান্তা ভাগনারের মতো একটি গোষ্ঠীর কাছ থেকে সহায়তা চাইবে।
ভাগনার ভাড়াটেরা মিয়ানমারে ‘প্রশিক্ষক’ বা ‘নিরাপত্তারক্ষী’ হিসেবে আসতে পারে। তারা সুদান, মালি ও মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের মতো আফ্রিকার দেশগুলোতে এভাবেই কাজ করে। এভাবে তারা সংশ্লিষ্ট দেশে রাশিয়ার বিনিয়োগ পাহারা দেয় এবং বিভিন্ন স্বৈরশাসকের উপদেষ্টা ও সামরিক প্রশিক্ষক হিসেবেও কাজ করে।
এই ওয়েবসাইটের সঙ্গে গোপন কোনো চীনা স্বার্থ জড়িত কিনা, তা নির্ধারণ করা অসম্ভব। তবে এর ৬১তম বুলেটিন যা বলেছে তা চীনের সরকারি নীতির প্রতিফলন বলে বলা যায়। সেখানে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে চীনারাই একমাত্র খেলোয়াড়ের ভূমিকা রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তারা অন্য কোনো বাইরের শক্তির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায় না, এমনকি বেইজিংয়ের মিত্র হিসেবে বিবেচিত রাশিয়াও নয়। বুলেটিন দাবি করছে, ভাগনার গ্রুপ মিয়ানমারে হস্তক্ষেপ করার জন্য ‘প্রস্তুত’।
তবে জান্তা ভাগনার গ্রুপের সাহায্য নিলেও উত্তর শান রাজ্য ও অন্যান্য সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে অত্যন্ত জটিল পরিস্থিতিতে তারা কী ভূমিকা পালন করবে বা করতে পারে, তা স্পষ্ট নয়।
২০২২ সালে ক্রেমলিনের অর্থায়নে প্রিগোজিন ও ভাগনার গ্রুপ ইউক্রেনে রাশিয়ান আক্রমণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। হাজার হাজার ভাড়াটে সেনা ইউক্রেন হামলায় যুক্ত হয়েছিল, কিন্তু মস্কো থেকে আশানুরূপ সমর্থন না পাওয়ায় প্রিগোজিন দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে চলে যান এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে। ২০২৩ সালের জুনে প্রিগোজিন ও তার লোকজন বিদ্রোহ করে এবং মস্কোর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। পুতিন প্রথমে ভাগনারের এ অবস্থানকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে নিন্দা করেছিলেন, যদিও এক পর্যায়ে তিনি একটি মীমাংসায় গিয়েছিলেন। কদিনের মধ্যেই মস্কোর বাইরে তাদের ব্যবসায়িক একটি জেট বিমান বিধ্বস্ত হলে প্রিগোজিনসহ আরও ৯ জন লোক মারা যান। সেই সময় ব্যাপক হারে এটা প্রচারিত হয় যে, বিমানটিতে বোমার কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।
ওই ঘটনার আগেই ভাগনার গ্রুপ সিরিয়া, বেশ কয়েকটি আফ্রিকান রাষ্ট্র ও রাশিয়া থেকে ভেনেজুয়েলায় ছড়িয়ে পড়ে। ইউক্রেনসহ এসব দেশে ভাগনার গ্রুপ তার বর্বরতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য কুখ্যাত হয়ে ওঠে। দ্য ইকোনমিস্ট ৩১ আগস্ট ২০২৩ তারিখের এক প্রতিবেদনে লিখেছে, ‘বেসামরিক লোকদের বিরুদ্ধে ভাগনারের সহিংসতা একদিকে ঘন ঘন ঘটছে, আবার এর ধরনও ভয়াবহ।’ তাদের বিরুদ্ধে অপহরণ, যৌন সহিংসতা ও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। যদি বা যখনই ভাগনার গ্রুপ মিয়ানমারে জড়িত হয়, তখন বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই যে তাদের ভাড়াটেরা ভিন্ন আচরণ করবে। প্রিগোজিনের মতো তাদের মধ্যে অনেকেই দাগি আসামি।
কিন্তু নেপিদোর সামরিক উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা ‘সন্ত্রাসবাদ’-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রাশিয়ার সমর্থন চেয়ে আগুন নিয়ে খেলতে যাচ্ছেন। আগস্ট মাসে রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা স্পুটনিকে এক সাক্ষাৎকারে ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির প্রধান খিন ই স্পষ্টভাবে তা স্বীকার করেছেন। তাছাড়া মিন অং হ্লাইং উত্তরের যুদ্ধে পরোক্ষ ‘বিদেশি হস্তক্ষেপ’ নিয়েও বিলাপ করেছিলেন।
আগস্টে জান্তা-সমর্থিত তথাকথিত ‘জাতীয়তাবাদীদের’ও ইয়াঙ্গুন শহরের কেন্দ্রস্থলে বেইজিং-বিরোধী বিক্ষোভ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তাই এটা আশ্চর্যের কিছু নয় যে, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই আগস্টে নেপিদোতেও পরিদর্শনে গিয়ে মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে দেখা করার সময় তাঁর কথায় পরিবর্তন আনেননি। ইয়াঙ্গুনে চীনা দূতাবাসের একটি প্রেস রিলিজ অনুসারে, ওয়াং বলেছেন যে ‘দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষতি বা চীনকে কলঙ্কিত করে এমন মন্তব্য বেইজিং গ্রহণ করবে না। … চীন চীন-মিয়ানমার সম্পর্কের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিকারী বা চীনকে কলঙ্কিত করে এমন যে কোনো মন্তব্যের বিরোধিতা করে।’
মিয়ানমারের জেনারেলরা রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করে চীনের ওপর তাদের নির্ভরতা কমানোর প্রচেষ্টা থামাবেন, এমন সম্ভাবনা কম। তবে তারা চীনকে শত্রুজ্ঞান করারও সামর্থ্য রাখে না। চীনই একমাত্র দেশ, যেটি গৃহযুদ্ধের সব পক্ষসহ মিয়ানমারে উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তার করে। ওয়ান গাইডের ৬১তম বুলেটিনে প্রদত্ত তথ্য যাচাই করা অসম্ভব। এমনকি যদি এটি ভুল তথ্য বলে প্রমাণিত হয়, তথাপি এটি এই সত্যের একটি অনুস্মারক হিসেবে কাজ করে যে, চীনারা মিয়ানমারকে তাদের মাঠ বলে বিবেচনা করে, অন্য কোনো শক্তির অনুপ্রবেশ সেখানে তারা সহ্য করবে না।