মুমিনের বিরুদ্ধে করা চক্রান্ত স্বয়ং আল্লাহ প্রতিহত করেন
Share on:
শান্তি ও মুক্তির একমাত্র সহজ সরল সঠিক ও নিশ্চিত পথ হলো ইসলাম। এই সফলতা লাভের জন্য অপরিহার্য গুণাবলি বা শর্তসমূহ হলো বিশ্বাস, সৎকর্ম, সত্য–সদুপদেশ অনুসরণ, ধৈর্যের পরামর্শ প্রদান ও অনুশীলন।
আল্লাহ তাআলা কোরআন মজিদে বলেন, ‘সময়ের শপথ! মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে; তবে তারা ছাড়া, যারা ইমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে এবং একজন অন্যজনকে হক কথার ও সবর করার উপদেশ দিয়েছে।’ (সুরা-১০৩ আসর, আয়াত: ১, ২ ও ৩)
সত্য, সুন্দর, ন্যায় ও কল্যাণের পথে বাধা ও ইবলিশি চক্রান্ত চিরন্তন; সত্যের সঙ্গে মিথ্যার দ্বন্দ্ব চিরকালীন। শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। মানুষের শান্তিতে ইবলিশ শয়তান সব সময় অশান্তিতে ভোগে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় শয়তান মানুষের জন্য প্রকাশ্য দুশমন।’ (সুরা-১২ ইউসুফ, আয়াত: ৫; সুরা-১৭ ইসরা, আয়াত: ৫৩; সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ২২)
‘আর তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কোরো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৬৮ ও ২০৮; সুরা-৬ আনআম, আয়াত: ১৪২)।
শয়তান মানুষকে বিপথগামী ও লক্ষ্যভ্রষ্ট করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তে লিপ্ত হয়। মানুষ যদি তার ইমানি শক্তিতে বলীয়ান থাকে, তবে আল্লাহ সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেন। পবিত্র কোরআনের ঘোষণা, ‘আর তারা চক্রান্ত করে, আল্লাহ তাদের চক্রান্ত প্রতিহত করেন; আর আল্লাহ সর্বোত্তম পরিকল্পনাকারী।’ (সুরা-৩ আলে–ইমরান, আয়াত: ৫০ ও ৫৪; সুরা-১৪ ইবরাহিম, আয়াত: ৪০)
‘নিশ্চয় তারা ভীষণ ষড়যন্ত্র করে, আর আমিও তা প্রতিহতে সূক্ষ্ম কৌশল অবলম্বন করি। অতএব অবিশ্বাসীদের অবকাশ দাও, তাদের অবকাশ দাও সামান্য সময়ের জন্য।’ (সুরা-৮৬ তরিক, আয়াত: ১৫-১৭)
কোরআন মজিদে সফলতার সুসংবাদ রয়েছে তাদের জন্য ‘যারা ইমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে’।
ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য যে দুটি গুণ অপরিহার্য, তার প্রথমটি হলো ইমান এবং দ্বিতীয়টি হলো সৎকাজ। সৎকাজ ছাড়া শুধু ইমান মানুষকে ক্ষতির হাত থেকে সম্পূর্ণ রক্ষা করতে পারে না। সঠিক পথে অবিচল থাকার জন্য অন্যতম গুণাবলি হলো সদুপদেশ ও ধৈর্য; তথা সহিষ্ণুতা ও সহনশীলতা।
যারা ইমান আনে ও সৎকাজ করে, তাদের পরস্পরকে হক কথা বলার ও হক কাজ তথা ন্যায় কর্ম করার এবং ধৈর্যের পথ অবলম্বন করার উপদেশ দিতে হবে।
এর অর্থ হচ্ছে প্রথমত, ইমানদার ও সৎকর্মশীলদের আলাদা ব্যক্তিসত্তা হিসেবে অবস্থান না করে সম্মিলিত একটি বিশ্বাসী গোষ্ঠী তথা ঐক্যবদ্ধ সমাজদেহ হিসেবে সামাজিক সত্তা গঠন করা। দ্বিতীয়ত, এই সুন্দর সমাজব্যবস্থা যাতে বিনষ্ট না হয়, সে জন্য সমাজের প্রত্যেক নাগরিকের সচেতন থাকা। এ জন্যই সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তি একে অন্যকে হক পথ অবলম্বন ও সবর করার উপদেশ দেবেন। এটা তাদের সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। জাতীয় পর্যায়ে কাফির, মুনাফেক, তাগুত এবং জিন শয়তান ও মানুষ শয়তানের অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর রজ্জু আল–কোরআনকে সম্মিলিতভাবে দৃঢ়রূপে ধারণ করো, আর তোমরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (সুরা-৩ আলে–ইমরান, আয়াত: ১০৩)
‘তোমরা দ্বীন কায়েমে বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (সুরা-৪২ শুরা, আয়াত: ১৩)
‘নিশ্চয় আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন, যারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে সিসাঢালা সুদৃঢ় প্রাচীরের মতো সারিবদ্ধভাবে।’ (সুরা-৬১ ছফ, আয়াত: ৪)
ঐক্যের জন্য চাই ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা, মতামত নেওয়া ও মাশওয়ারা বা পরামর্শ গ্রহণ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা সব বিষয়ে পরামর্শ করো; অতঃপর যখন দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করবে, তখন আল্লাহর ওপর ভরসা করবে; আল্লাহ (তাঁর ওপর) নির্ভরকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা-৩ আলে–ইমরান, আয়াত: ১৫৯)