মধ্যপ্রাচ্য এখন পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে
Share on:
ইরানের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি ২২ আগস্ট জাপানের কিয়োদো নিউজ এজেন্সিকে এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এতে তিনি প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের অধীনে ইরানের বৈদেশিক নীতির অগ্রাধিকার নিয়ে আলাপ করেছেন।
এ সময় ইরানের অর্থনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা অপসারণ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে বাণিজ্য স্বাভাবিক করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের কথাও উঠে আসে। আরাঘচি বলেছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওয়াশিংটনের সঙ্গে উত্তেজনা নিরসন এবং ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের চেষ্টা করবে। তিনি ‘আন্তরিক ও মনোযোগী হয়ে সময় বেঁধে দিয়ে আলোচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন।’ পরে তিনি এও বলেছেন, সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি দুটি লক্ষ্যের ওপর জোর দিয়েছেন। ‘প্রথম মিশনটি হলো নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নেওয়া, যা পুরো সরকারের অনুসরণ করা উচিত। আমাদের প্রথম লক্ষ্য হলো নিষেধাজ্ঞাগুলো এবং জনগণের ওপর সেগুলোর প্রভাব অকার্যকর করা।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের অগ্রাধিকার আমাদের প্রতিবেশী। আমাদের দ্বিতীয় অগ্রাধিকার আফ্রিকা ও পূর্ব এশিয়ায় কূটনীতির ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করা। তৃতীয়ত, কঠিন পরিস্থিতিতে যেসব দেশ ইরানের পাশে দাঁড়িয়েছিল, তাদের প্রাধান্য দেওয়া। ২৭ আগস্ট ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক অনুষ্ঠানে পেজেশকিয়ান আরও জোর দিয়ে বলেন, নিষেধাজ্ঞাগুলো তোলার উপায় খুঁজে বের করা তাঁর সরকারের অগ্রাধিকার। দিনটির প্রথমভাগে পেজেশকিয়ান ও তাঁর মন্ত্রিসভার সহকর্মীদের বরণ করা হয়। এ সময় খামেনি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন করে আলোচনার প্রতি সম্মতির ইঙ্গিত দেন।
এগুলো অবশ্য প্রাথমিক পর্যায়ের পদক্ষেপ। যখন একটি বড় জাহাজ গতিপথ পরিবর্তন করে, তখন জাহাজটিকে একটা বড় অর্ধবৃত্তাকারে ঘুরতে হয়, যা দর্শকদের কাছে খুব কমই দৃশ্যমান। নিঃসন্দেহে ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে ইরান তার দীর্ঘ ও কঠিন যাত্রায় একটি ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে।
মূল বিষয়টি হলো প্রতিরোধের জোট ইরানের পররাষ্ট্রনীতির অগ্রাধিকারের শীর্ষে নেই। আমরা তেহরানের কাছ থেকে শুনছি, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পেতে ইরান এক নম্বর অগ্রাধিকার হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করতে চায়। অর্থনীতির গতি বাড়াতে ইরানের জন্য এটি অপরিহার্য এবং তার জাতীয় নীতির জন্য তা গুরুত্বপূর্ণ। ইরানের প্রতিবেশীরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। নিশ্চিতভাবে বলা যায়, মধ্যপ্রাচ্য এখন পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে।
আরাঘচি ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ব্রিটিশ পররাষ্ট্র সচিবের পাশাপাশি ইইউর পররাষ্ট্রনীতি-বিষয়ক প্রধানের কাছ থেকে ফোনকল পেয়েছিলেন। তারা আরাঘচির নিয়োগে অভিনন্দন জানান এবং পারমাণবিক বিষয়ে আলোচনার জন্য তারা প্রস্তুত বলে ইঙ্গিত দেন। আলোচনা কীভাবে হবে তা এখনও নির্ধারিত হয়নি। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে, পশ্চিমা শক্তিগুলো– মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ আগের মতো রাশিয়াকে আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করবে না। ইউক্রেন দ্বন্দ্ব একটি ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা, যা পশ্চিম ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্কের ভাঙন ঘটিয়েছে।
সম্ভবত পশ্চিমা শক্তিগুলো চীনকে জড়িত করার বিষয়ে উদার থাকবে। এর কারণ চীন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এবং ইরানের ওপর দেশটির প্রভাব আছে। প্রকৃতপক্ষে বাইডেন প্রশাসন উত্তেজনা কমানোর লক্ষ্যে মার্কিন-চীন ‘প্রতিযোগিতা’ পুনর্মূল্যায়ন করছে। জেসিপিও বা আগেরবার গৃহীত সিদ্ধান্তের পুনর্বহাল তেহরান ও ওয়াশিংটন কেউই চায় না। অর্থাৎ ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করা যাবে না এবং তা নিয়ে আলাপের সুযোগ নেই। তার মানে হলো, আলোচনার একটি নতুন রূপ এবং নতুন কর্মসূচি নিয়ে এগোতে হবে।
এই সার্বিক পটভূমিতে কূটনৈতিক অঙ্গনে ইরানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফের ‘প্রত্যাবর্তন’ একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তিনি নতুন সরকারে কৌশলগত বিষয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত হবেন। হাসান রুহানি প্রশাসনে পরমাণু আলোচক হিসেবে আরাঘচি জারিফের ডেপুটি ছিলেন। দল আবার মূল জায়গায় ফিরে এসেছে। পশ্চিমা কেন্দ্রগুলোতে উভয়ই অত্যন্ত সম্মানিত। অবশ্য নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার ব্যাপারে বাইডেনের সম্মতি নিরাপত্তা ইস্যুতে ইরানের সহযোগিতার ওপর উল্লেখযোগ্যভাবে নির্ভর করবে।