মতামত/কলাম প্রকাশনার সময়: সোমবার ৯, সেপ্টেম্বর ২০২৪

মণিপুরে যুদ্ধাবস্থা, বাংলাদেশের পরিস্থিতিও অস্থিতিশীল

Share on:

বর্তমানে মণিপুর রাজ্য মেইতি ও কুকি অঞ্চলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। দুই অঞ্চলের মধ্যে সন্দেহ ও শত্রুতা বিভাজন রেখাও টেনে দিয়েছে। সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো বেসামরিক এলাকায় রকেটচালিত গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে। গত কয়েক মাসে এ অঞ্চলে যে ধরনের উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল, তার তীব্রতা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে অনেক গুণ।


সন্দেহভাজন কুকি চরমপন্থিরা রোববার কুকি-সংখ্যাগরিষ্ঠ কাংপোকপি জেলার সীমান্তবর্তী পশ্চিম ইম্ফল জেলার মেইতি গ্রামে বোমা হামলা করেছে। এতে অন্তত একজন মহিলা নিহত এবং আহত হয় কয়েকজন। মঙ্গলবারও জেলার অন্য একটি এলাকায় একই ধরনের বোমা ফেলা হয়। সেখানে বন্দুকযুদ্ধেরও খবর পাওয়া গেছে।

ড্রোন ও রকেটচালিত গ্রেনেডের ব্যবহার রাজ্যটিতে বিবাদের মাত্রা ভয়াবহভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে অকুস্থলটি যুদ্ধক্ষেত্রে রূপ নিয়েছে, বলা চলে। এদিকে প্রতিবেশী মিয়ানমারে চলছে উত্তপ্ত পরিস্থিতি, যেখানে বিদ্রোহী ও জান্তার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চলছে।

বাংলাদেশের পরিস্থিতিও অস্থিতিশীল।

মণিপুর পুলিশের মতে, ঘটনাগুলোর পেছনে প্রযুক্তিগত দক্ষতাসহ প্রশিক্ষিত কর্মীদের হাত রয়েছে। যুদ্ধ পরিস্থিতি ছড়িয়ে পড়লে এতে সংঘাতের নতুন একটি পর্বের সৃষ্টি হবে, যা নিয়ন্ত্রণ করা আরও কঠিন হয়ে পড়বে।

গত সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং বলেছিলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে রাজ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনা হবে। এ সময় তিনি এও বলেছিলেন, তিনি রাজ্যের সর্বস্তরের মানুষের নেতা। রাষ্ট্র ও এর জনগণকে রক্ষার দায়িত্বও তাঁর কাজ। কিন্তু আলোচ্য ঘটনাবলি এটাই তুলে ধরছে, তিনি জনগণের জানমাল রক্ষা করতে অক্ষম। অথচ ১৬ মাস ধরে তিনি এখানে অবস্থান করছেন। অর্থাৎ গত বছরের ৩ মে সহিংসতা শুরুর পর থেকে তিনি এই রাজ্যে ছিলেন।

কিছু এলাকায় সহিংসতার ঘটনা দেখা যাচ্ছে, যা অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। অথচ এরই মধ্যে বিজেপির একটি অংশ দাবি করেছে, রাজ্য থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহার করে রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করতে হবে। এমনটা হলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াতে পারে, তা ভালোভাবে অনুমান করা যায়।

কারণ, মুখ্যমন্ত্রী পক্ষপাতদুষ্ট এবং স্বয়ং তিনি সমস্যার সঙ্গে জড়িত বলেও ভাবা হয়। অভিযোগ রয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী নিজেই দ্বন্দ্ব শুরুর দায় স্বীকার করেছিলেন।

মুখ্যমন্ত্রী নিযুক্ত দূতদের মাধ্যমে একটি সংলাপ চলার কথা বলা হচ্ছে। এতে এক ধরনের অগ্রগতি হয়েছে বলেও দাবি করা হচ্ছে। তবে অব্যাহত সংঘর্ষ ও কিছু জায়গায় সহিংসতা বৃদ্ধির কারণে শান্তি ও স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার দাবিগুলো ভুল বলেই মনে হচ্ছে। রাজ্যটি মেইতি ও কুকি অঞ্চলে বিভক্ত। দু্টি জনগোষ্ঠীর মধ্যে গভীর সন্দেহ ও শত্রুতা ছড়িয়ে পড়ায় তাদের বিভাজন রেখাটিও চিহ্নিত হয়ে গেছে। এখানকার ক্যাম্পগুলোতে ৬০ হাজারের বেশি ভিটেমাটিহীন মানুষ বসবাস করছে। এসব বাস্তুচ্যুত মানুষ ও অন্যদের জীবন এখানে আদৌ স্বাভাবিক নয়।

অস্ত্রাগার থেকে লুট হওয়া প্রায় ৫ হাজার আগ্নেয়াস্ত্র এখনও বেহাত। কেন্দ্রীয় সরকার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এমন আচরণ করছে যেন রাজ্য বলে কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই। বিশেষত

যখন রাজ্য ও এর জনগণ ক্রমাগত সংঘর্ষ ও বিশৃঙ্খলার গভীরে চলে যাচ্ছে তখনও তারা এ ধরনের আচরণ করছে।

দৈনিক সমকাল