মুখ থুবড়ে পড়া শিক্ষাব্যবস্থাকে দ্রুতই স্বাভাবিক ট্র্যাকে তুলতে হবে
Share on:
বিগত ১৫ বছরে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নিম্নস্তরে চাপিয়ে দিয়েছে পাবলিক পরীক্ষা এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের শিক্ষার্থীদেরকে ঠেলে দিয়েছে চাঁদাবাজি আর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে।
এখন সরকারের পতনের পর আমাদের শিক্ষাকে সর্বোচ্চ জোর দিয়ে ভাবতে হবে। মুখ থুবড়ে পড়া এই শিক্ষাব্যবস্থাকে দ্রুতই স্বাভাবিক ট্র্যাকে উঠাতে হবে। এরপর তার উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে।
শিক্ষার সর্বনাশ করা হয়েছে চতুর্মুখী। দুর্নীতি, দলীয়করণ, নিয়োগ বাণিজ্য, ফাইল বাণিজ্য ইত্যাদির সাথে সাথে নতুন শিক্ষাক্রম, জিপিএ ৫ এর সয়লাব, প্রশ্নপত্র ফাঁস ইত্যাদি সব ধরনের ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয়েছে আমাদের শিক্ষাকে ধ্বংস করার জন্য। গত আওয়ামী লীগ সরকারের পরপর তিনজন শিক্ষামন্ত্রী এই ধ্বংসের পথে নেতৃত্ব দিয়েছেন। শিক্ষা ক্ষেত্রে তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা, প্রজ্ঞা ইত্যাদি কিছুই ছিল না। পরপর তিনজন এমন ব্যক্তিদের শিক্ষামন্ত্রী পদে নিয়োগের বিষয়ে মনে করা হয় এ দেশের বেশির ভাগ মানুষের মূল্যবোধের বিপরীত ধারার একটি শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্যই তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। তাদের দু’জন তো একসময় সরাসরি এ দেশের বেশির ভাগ মানুষের আদর্শের বিরোধী ভাবধারার দর্শনের রাজনীতিতে বিশ^াসী ছিলেন। অন্য জন তো নিজেই প্রকাশ করেছেন, তিনি ‘ইসকন’-এর আদর্শে বিশ্বাসী। এ জন্যই কারিকুলামে দেখা গেছে, এ দেশের বেশির ভাগ মানুষের আদর্শের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এমন বিষয়বস্তু এবং দর্শন প্রবেশ করানোর একটি সূক্ষ্ম প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়েছে। তা ছাড়া একজন ব্যক্তি, একটি পরিবারকে প্রতিষ্ঠিত করার এবং পাশর্^বর্তী একটি দেশের ব্যাপারে শিশুদের মধ্যে সহনশীলতা সৃষ্টির অপচেষ্টা ও তাদের কৃষ্টি-সংস্কৃতি প্রতিফলিত করার প্রয়াস পরিলক্ষিত হয়েছে।
শিক্ষা বিভাগে দুর্নীতি হয়ে উঠেছিল সর্বগ্রাসী। এর নীরব সাক্ষী অনেকেই। বিভিন্ন দাফতরিক কাজে শিক্ষা বিভাগের বিভিন্ন দফতরে ঘুষ ছাড়া কোনো ফাইল ছাড় করানো ছিল খুবই দুরূহ। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্য ছিল ভয়াবহ। এমনকি গ্রামের কোনো বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী বা পিয়ন নিয়োগের জন্যও এমপিকে দিতে হতো কয়েক লাখ টাকা ঘুষ! আর নগরীর বিদ্যালয়গুলোতে নিয়োগের জন্য স্থানীয় শিক্ষা অফিস থেকে শুরু হতো এই বাণিজ্য। দুঃখজনক হলো- চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগের বেলায়ও মাফ ছিল না। এর ব্যতিক্রম চিত্রও রয়েছে, যেখানে কোনো ঘুষ বা ‘স্পিড মানি’র প্রয়োজনই হয়নি। অবশ্যই এই বিভাগে অত্যন্ত সৎ কর্মকর্তারাও আছেন, তবে সংখ্যায় কম অথবা অসৎদের দৌরাত্ম্যে তারা থাকতেন ম্রিয়মাণ হয়ে। আমরা নিশ্চয়ই একজন শিক্ষামন্ত্রীর কথা জানি যিনি একটি বিশ^বিদ্যালয় স্থাপন করতে গিয়ে ব্যাপক জমি বাণিজ্যের সাথে জড়িয়ে পড়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। শিক্ষা বিভাগের দুর্নীতির অভিযোগ সব সময়ই ছিল। তবে বিগত ১৫ বছর এই দুর্নীতির কোনো সীমা পরিসীমা ছিল না যা অতীতের সব রেকর্ডকেই ছাড়িয়ে গেছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী প্রাথমিক এবং নিম্নমাধ্যমিক পর্যায়ে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে পাবলিক পরীক্ষা চালু করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে- এই দু’টি পর্যায়ে পাবলিক পরীক্ষা চালুর কোনো প্রয়োজনই ছিল না; বরং তা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এই কোচিং সেন্টার থেকে ওই কোচিং সেন্টারে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে! আর অবস্থাশালী পরিবারের শিক্ষার্থীর বাসায় একজনের পর একজন করে প্রাইভেট টিউটরের কাছে জিপিএ ৫ পাওয়ার প্রচেষ্টা চলেছে। এই বয়সে পরীক্ষার চাপে শিক্ষার্থী তো বটেই, অভিভাবকরাও গলদঘর্ম হয়ে পড়েছেন। এসব পাবলিক পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে কোচিং বাণিজ্যের বিশাল বিস্তৃতি ঘটেছে। তবে সবচেয়ে ক্ষতিকর যেটি হয়েছে তা হলো- ‘জিপিএ ৫’ ইস্যু। এই জিপিএ ৫ এর সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশবাসীকে শিক্ষার অভূতপূর্ব মেকি উন্নয়ন দেখানোর এক জোর প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হয়েছে। শিক্ষকদের নির্দেশনাই দেয়া হয়েছিল পাবলিক পরীক্ষার খাতা কাটার সময় যত বেশি সম্ভব নম্বর দিয়ে দিতে হবে। কোনো কিছু লিখা থাকলেই নম্বর দিতে হবে। ফলে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় দেখা গেছে, উত্তীর্ণের হার ছিল অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। এতে এই সময়ের শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের অত্যন্ত করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে।
এরপর এলেন পরবর্তী শিক্ষামন্ত্রী। তিনি মোটামুটি শিক্ষার ধ্বংসের ষোলকলা পূরণের পথটি সুগম করে দিয়েছেন। করোনাকালের শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় তিনি অত্যন্ত অপরিপক্বতা, অদূরদর্শিতা ও দুর্বলতার স্বাক্ষর রেখেছেন। করোনা মহামারীর কঠিনতম আঘাতের ঢেউ চলে গেলে দেশের সব ধরনের প্রতিষ্ঠান এবং অফিস-আদালত চালু হয়ে গেলেও তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ রেখেছেন অপরিকল্পিতভাবে। কিছু দিন চালু করেছিলেন শিক্ষার্থীদের ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ নামে একটি প্রহসনের শিক্ষা ধারা। এভাবে কোনো ধরনের হোমওয়ার্ক, বিশেষজ্ঞ মতামত বা সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ছাড়াই পার করেছেন করোনাকালের শিক্ষা। করোনা চলে যাওয়ার পর শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পূরণের কোনো প্রকার পদক্ষেপই তিনি নিতে পারেননি। ন্যূনতম একটি সার্ভের মাধ্যমে শিখন ঘাটতির পরিমাপটুকুও তিনি করাননি। শিখনে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছিল তা পুরোপুরি পূরণ কখনো সম্ভব ছিল না। কিন্তু কিছুটা পূরণের ন্যূনতম পদক্ষেপেও নিতে দেখা যায়নি সরকারকে। অনেক বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন ধরনের মতামতও দিয়েছিলেন শিখন ঘাটতি পূরণে করণীয় সম্পর্কে। কিন্তু সেদিকে কোনো দৃষ্টিপাতই করা হয়নি।
এ সময় শিক্ষাব্যবস্থায় সবচেয়ে বড় আঘাত ছিল নতুন শিক্ষাক্রম চালুর প্রচেষ্টা। কোনো ধরনের পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই একটি অতি-বাস্তবমুখী শিক্ষাক্রম চালুর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। যেন কৃষকের গায়ে টাই-স্যুট পরিয়ে দেয়া। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক সমাজ, বিশেষজ্ঞ ও সুধীসমাজে আলোচনা-সমালোচনার সুযোগ না দিয়েই এই কারিকুলাম জোর করে চাপিয়ে দেয়া হয়। করোনার ধ্বংসযজ্ঞ থেকে মাথা তোলার আগেই ২০২২ সালে দেশের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলট প্রজেক্ট চালু করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে চালু করা হয় এই পদ্ধতি। তার আগে তাড়াহুড়ো করে কিছু শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুলভাবে এ সমস্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অনেকেই বুঝে উঠতে পারছিলেন না কিভাবে কী করবেন। আবারো তাড়াহুড়ো করে অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে ২০২৪ সালে চালু হয় নতুন কারিকুলাম। কিন্তু শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের সমস্যার সাথে যোগ হয় শ্রেণিকক্ষের অবকাঠামোগত সমস্যা, শিক্ষাসামগ্রীর অপ্রতুলতা, কারিকুলামকে সহায়তাসহ অন্যান্য লজিস্টিক সাপোর্টের অভাব এবং অভিভাবকদের কারিকুলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা। ইত্যাকার নানাবিধ সমস্যার কারণে খুবই কঠিন একটি বাস্তবতার মধ্য দিয়ে চলতে থাকে শিক্ষাক্রম। সবচেয়ে কঠিন সমস্যায় পড়তে হয় মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে। বছরের ছয় মাস পার করেও সুনির্দিষ্ট কোনো পরিপূর্ণ মূল্যায়ন পদ্ধতি প্রণয়ন করতে ব্যর্থ হয়। যেটুকু পদ্ধতি চালু হয়েছিল তা দিয়ে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা ছিল যতটা অবাস্তব ঠিক ততটা জটিল।
নতুন কারিকুলামে শিখন পদ্ধতিতে বিজ্ঞানসম্মত কিছু আধুনিক উপাদান রয়েছে। কিন্তু এতে শুধু ‘অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান ও দক্ষতা’ অর্জনের শিখন পদ্ধতির প্রতি জোর দেয়া হয়েছে। অথচ অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জনের বড় উপাদান ‘মেধা ও জ্ঞান’ বিকাশের সুযোগ শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল একেবারেই অপ্রতুল। ফলে ছাত্ররা বই পড়া এক প্রকার ছেড়েই দিয়েছিল। আর পরীক্ষার সর্বজনীন পদ্ধতি না থাকায় প্রতিটি শিক্ষার্থীর মেধা আলাদাভাবে যাচাইয়ের সুযোগ একেবারেই তিরোহিত হয়ে পড়েছিল। ফলে সমাজে সবার মধ্যে দেখা দিয়েছিল উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা। কারণ শিক্ষার্থীদের স্মরণশক্তিতে ইতিহাস, ভূগোল, পৌরনীতি এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের মৌলিক তত্ত্ব, তথ্য ও সূত্রগুলো প্রবেশের পথ রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। আবার শহর-নগরের বিদ্যালয়গুলোতে নতুন কারিকুলামে কিছু কিছু শ্রেণিকার্যক্রম হলেও মফস্বলের অবস্থা ছিল অত্যন্ত করুণ! সেখানে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ছিটেফোঁটাও ছিল না। ফলে এই নতুন ব্যবস্থাটির জন্য গত দেড় বছরে সংঘটিত ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে জাতিকে অনেক বেগ পেতে হবে। কারিকুলামের আরো একটি মারাত্মক বিপর্যয়কর দিক ছিল পাঠ্যসূচিতে। প্রথমেই জাতি দেখেছে বিশেষ কয়েকজন তথাকথিত মুখচেনা বিশেষজ্ঞজন দিয়ে পাঠ্যসূচি রচনা করার ফলে কী পরিমাণ ভূল-ভ্রান্তি যুক্ত ছিল। বিভিন্ন উৎস থেকে চৌর্যবৃত্তির মাধ্যমে গুগলের দ্বারা বঙ্গানুবাদ করে ভুলে ভরা পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করা হয়েছিল। ব্যাপক সমালোচনার পর সেগুলো সংশোধনের চেষ্টা চালানো হয়।
তাছাড়া সুকৌশলে দেশের মানুষের মূল্যবোধ ও সংস্কৃতিবিরোধী উপাদান দিয়ে ভরপুর করে রাখা হয়েছিল। এমনকি আশ্চর্যজনকভাবে ইসলাম ধর্মের বইয়ের মোড়কে অন্য ধর্মের উপাস্যদের ছবিও দেয়া হয়েছিল। সর্বস্তরেই একটি তাড়াহুড়ো করে এই শিক্ষাক্রম চাপিয়ে দেয়ার প্রবল প্রবণতা দেখা যাচ্ছিল। এই কারিকুলামের বিরুদ্ধে কোনো সমালোচনা দূরে থাক, কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল না। কোনো কোনো শিক্ষক সামান্য প্রশ্ন তোলার পরদিন তাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে বদলির আদেশ দেখতে পান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদগ্ধ শিক্ষকরা এই পাঠ্যক্রম নিয়ে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু সরকারি নির্দেশে সেটি অনুষ্ঠিত হতে দেয়া হয়নি। অন্যদিকে, তৃতীয় লিঙ্গের বিষয়ে উসকানিমূলক পাঠ এবং বয়ঃসন্ধিকালের স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে ছেলে-মেয়েদের খোলামেলা আলোচনা উত্থাপন করে শ্রেণিকক্ষে একটি অনাকাক্সিক্ষত বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছিল। ফলে শিখনকালীন সময়ে শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্র-ছাত্রী সবার জন্য একটি অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছিল শ্রেণিকক্ষে। ফলে সাধারণভাবে জাতি এই শিক্ষাব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।
৫ আগস্ট বিপ্লব শুরুর পর আমাদেরকে শিক্ষায় অগ্রাধিকার দিয়ে বিপ্লবকে সফলতার দিকে নিয়ে যেতে হবে। এই বিপ্লবের জন্য অগণিত শিশু এবং তরুণ শিক্ষার্থী বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে রাজপথের কালো পিচের ওপর। বিভিন্ন পেশার অসংখ্য মানুষ জীবন দিয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। কাজেই এই বিপ্লবকে সফল করতে হলে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ভাবধারায় নতুন করে সাজাতে হবে।
বছরের যে কয়টি মাস সময় আছে সেই মাসগুলোতে চলমান পাঠ্যসূচিতেই অতীতের পরীক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে মূল্যায়ন সম্পন্ন করা যেতে পারে। এর মধ্যে নতুন করে আগের কারিকুলামের আদলে পাঠ্যসূচি তৈরি করতে হবে। সে জন্য যথেষ্ট সময় দরকার। কাজেই আগামী বছরের কারিকুলামকে সংক্ষিপ্ত করে এপ্রিল থেকে শিক্ষাবর্ষ শুরু করা যেতে পারে। ততদিনে নতুন করে পাঠ্যসূচি সাজিয়ে ছাপানো সম্ভব হতে পারে। আর বর্তমান বছরের চলমান পাঠ্যসূচিকে সংক্ষিপ্ত করে বার্ষিক পরীক্ষার মাধ্যমে সবাইকে উত্তীর্ণ করতে হবে। এরপর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাস শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পূরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। সে জন্য ২০২১ সালের পাঠ্যসূচি থেকে মৌলিক বিষয়গুলোর পাঠদান করা দরকার। এভাবে ২০২৪ ও ২০২৫ সালের পাঠ্যক্রম সুনিশ্চিত করে ২০২৬ সাল থেকে অনুসরণের জন্য নতুনভাবে একটি সর্বজনীন শিক্ষা কারিকুলামের কাজে হাত দেয়া যেতে পারে। এ লক্ষ্যে অতি দ্রুত দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করা অত্যন্ত জরুরি। এই কমিশন দেশের মানুষের মূল্যবোধ, সংস্কৃতি ও বিশ্বাসের আলোকে একটি মানানসই শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নে কাজ শুরু করতে পারেন।