সম্পাদকীয় প্রকাশনার সময়: বুধবার ১৪, অগাস্ট ২০২৪

বাংলাদেশের জনবিপ্লবের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধে উদ্যোগ নিন

Share on:

ছাত্র-জনতার সফল বিপ্লব এবং দেশ ছেড়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে চলে যাওয়ার পর থেকেই দেশে ও বিদেশের মিডিয়ায় বাংলাদেশ আলোচনার শিরোনামে উঠে এসেছে। এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক ছিল।


অবাধ তথ্য প্রবাহ ও মিডিয়ার এ যুগে এ ধরনের আলোচনা থেকে কাউকে নিবৃত রাখার সুযোগও নেই। কিন্তু আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বিশেষ করে প্রতিবেশি দেশগুলোর মিডিয়ায় আমরা শুরু থেকেই বাংলাদেশের জনবিপ্লবের বিরুদ্ধে একটি অপপ্রচার লক্ষ্য করছি।

এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে, আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো এখন বিভাজিত এবং প্রতিটি মিডিয়াই তার চিন্তাধারার আলোকে নিউজ পরিবেশন করছে। তবে কিছু কিছু মিডিয়া নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য বাংলাদেশের বিদ্যমান বাস্তবতা সম্পর্কে অসত্য সংবাদ প্রচার করছে। প্রতিবেশি দেশের কিছু মিডিয়া সারাদিন বিগত সরকারের অর্থনৈতিক সফলতা প্রচার করছে, ছাত্রদেরকে সহিংসতার দায়ে অভিযুক্ত করছে, বিপ্লবের প্রথম দিনের জনগণের উচ্ছ্বাস এবং তাৎক্ষণিক কিছু কর্মকান্ডের ফুটেজ বারবার দেখিয়ে বিশ্ববাসীকে বাংলাদেশের ব্যাপারে একটি নেতিবাচক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করছে।

প্রতিবেশি দেশের এই মিডিয়াগুলো পদত্যাগকৃত প্রধানমন্ত্রীর ছেলের সাক্ষাৎকার প্রচার করছে। তার বরাত দিয়ে বাংলাদেশকে ভবিষ্যৎ পাকিস্তান, সিরিয়া বা আফগানিস্তানের সাথে তুলনা করছে। এই মিডিয়াগুলো তাদের আয়োজনগুলোতে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার কোনো প্রতিনিধিকে ডাকছে না। ফলে, বাংলাদেশ সম্পর্কে আলোচনা ও উপস্থাপন একপেশে হচ্ছে। এসব আয়োজনে বাংলাদেশে যৎসামান্য সংখ্যালঘু সম্পদের ওপর হামলাকে ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো যেভাবে এ ধরনের সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, কিংবা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বারবার যেভাবে জনগণকে সংযত থাকার অনুরোধ করছেন কিংবা বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও আন্দোলনকারী ছাত্ররা- সবাই মিলে যেভাবে সংখ্যালঘু উপাসনালয়গুলো পাহাড়া দিচ্ছেন, সড়কে শৃংখলা ফিরিয়ে আনার কাজ করছেন, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো পরিষ্কার করার কাজ করছেন- এই মিডিয়াগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই ইতিবাচক তথ্যগুলো এড়িয়ে যাচ্ছে।

দেশ বিরোধী এ ধরনের প্রচারণার বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অবস্থান নেওয়া উচিত। বাংলাদেশে কী হয়েছে, ১৬ বছর দেশ কীভাবে চলেছে কিংবা জনগণের শেখ হাসিনা সরকারের ওপর এতটা ক্ষোভের কারণ কী, কিংবা বর্তমানে কী ঘটছে, অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীরা মিলে কীভাবে সমন্বয় করে আগামী দিনের দেশ নির্মাণের জন্য একসাথে কাজ করছে, সাধারণ মানুষেরা কীভাবে হাসিমুখে রাত জেগে নিজেদের এলাকাগুলোকে দুবৃত্তদের হাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে- এগুলো নিয়ে অবিলম্বে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ডেকে একটি ব্রিফিং করা উচিত। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা বাংলাদেশে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদেরকে ডেকে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। এটি অত্যন্ত সময়োচিত পদক্ষেপ। তবে, সরকারের তরফ থেকে একজন মুখপাত্রের বিদেশি গণমাধ্যমগুলোর সাথেও কথা বলা উচিত। একইসাথে, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার যে সকল প্রতিনিধিরা আছেন তাদেরকে ডেকেও বাংলাদেশ সম্পর্কে সত্যনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারের তাগিদ দেওয়া প্রয়োজন।

যেখানে সংশ্লিষ্ট সকল মহল দিনরাত পরিশ্রম করে সাম্প্রতিক জনবিপ্লবের একটি উত্তম পরিণতি দেওয়ার চেষ্টা করছেন, জনগণের প্রত্যাশা পূরণের জন্য নিরলসভাবে কাজ করছেন, সেখানে বিদেশি কিছু মিডিয়ার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার যেন আমাদের অর্জনগুলোকে নস্যাৎ করে না দেয়- তা নিশ্চিতে এখনই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

দৈনিক সংগ্রাম