মতামত/কলাম প্রকাশনার সময়: বৃহস্পতিবার ২২, অগাস্ট ২০২৪

ব্যাংক খাত উন্নয়নে কর্ণপাত করেনি কেউ

Share on:

বাংলাদেশের ব্যাংকিং তথা আর্থিক খাত যে মহা দুর্যোগের মধ্য দিয়ে অতল খাদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, সে বিষয়ে দেশপ্রেমিক অর্থনীতিবিদ, সচেতন নাগরিক সমাজ এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে ক্রমাগত সতর্কবাণী উচ্চারণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের তাগাদা দিলেও বছরের পর বছর সেদিকে কর্ণপাত করেনি কেউ।


উল্টো একশ্রেণির সুযোগসন্ধানী দুর্নীতিবাজ আমলা, অধঃপতিত রাজনীতিবিদ, ধুরন্ধর ব্যবসায়ী, কতিপয় ব্যাংকমালিক এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বে আসা ব্যবসায়ী মহলের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতা, প্ররোচনা ও ইন্ধনে এই গুরুত্বপূর্ণ খাতটিকে ধ্বংস করার মহাযজ্ঞে কোনো বাধা তো দেওয়াই হয়নি বরং মদদ দেওয়া হয়েছে।

সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় এবং প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ব্যাংক দখল ও লুণ্ঠন, অর্থ পাচার এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের নামে সীমাহীন দুর্নীতি একটা প্রতিকারহীন রেওয়াজে পরিণত হয়েছিল। ফলে দেশে যে ধরনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করছিল, সেটি ছিল তাত্ত্বিক পরিভাষায় যথার্থ অর্থেই ক্রোনি অর্থনীতি বা ক্রোনি পুঁজিবাদ।

বাংলা অভিধানে ক্রোনি শব্দটির সাদামাটা অর্থ ‘অন্তরঙ্গ বন্ধু’ উল্লেখ করা হলেও ইংরেজি অভিধানে যা বলা হয়েছে সেটি এ রকম: কোনো বন্ধু বা ব্যক্তি, যে ক্ষমতার সুযোগ নিয়ে বিশেষ কারও স্বার্থে অসাধু লেনদেন বা অন্যায় সুবিধা দেওয়া বা নেওয়ার উদ্দেশ্যে কাজ করে। সেই সংজ্ঞায় এই ধরনের অর্থনীতিকে সাঙাতদের অর্থনীতি বলা যায়। এটি এমন একটা অবস্থা, যেখানে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাধরদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে প্রতিযোগিতাহীন বাজার এবং অন্যান্য উপায়ে অপরিমেয় মুনাফা লুটে নিতে সক্ষম হয়।

এই পরিবেশে যে মুনাফা অর্জিত হয় সেটি কোনো প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসা থেকে নয় বরং ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী গোষ্ঠী কিংবা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে। আমাদের দেশে সাঙাতদের অর্থনীতির এই উপসর্গ একেবারে নতুন না হলেও তার উপস্থিতি প্রকট হয়ে উঠছিল বিগত কয়েক দশক ধরে।

এ কথা স্বীকার্য, সাঙাতদের অর্থনীতির এই কদর্য চেহারা সত্ত্বেও এটি কোথাও, বিশেষ করে এশিয়ার কিছু দেশে দৃশ্যমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটিয়েছে। অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন দেখিয়েছেন, ১৯৯৬ থেকে পরবর্তী ১৫ বছরের মধ্যে সাঙাতদের অর্থনীতি বিরাজমান এশিয়ার নির্দিষ্ট কিছু দেশের মাথাপিছু গড় জিডিপি আফ্রিকার সমমানের দেশগুলোর তুলনায় আট গুণ বেড়েছে।

ভিয়েতনামের উদাহরণ উল্লেখ করে তিনি দেখিয়েছেন যে ১৯৮৬ সালের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের পর দেশটি দ্রুততম সময়ে দরিদ্র থেকে নিম্নমধ্যবিত্ত আয়ের দেশে পরিণত হয়েছিল। সাঙাতদের অর্থনীতির মধ্যেই ২০০২ থেকে পরবর্তী ১৬ বছরে ভিয়েতনামের দারিদ্র্যমুক্ত মানুষের সংখ্যা ছিল সাড়ে চার কোটি। দারিদ্র্যের হার ৭০ শতাংশ থেকে কমে ৬ শতাংশের নিচে নেমে যায়, মাথাপিছু জিডিপি বেড়েছিল আড়াই গুণ।

যা-ই হোক, এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক অবস্থা এবং প্রবৃদ্ধির সহাবস্থানের একটা বিশ্বাসযোগ্য কারণ হিসেবে ড. জাহিদ উল্লেখ করেছেন যে সরকারি নিয়মনীতি যখন বিনিয়োগ তথা প্রবৃদ্ধির অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়, তখন দুর্নীতির মাধ্যমে সেসব বাধা অতিক্রম করা সম্ভব হলে প্রবৃদ্ধির গতি বাড়তে পারে। উৎকোচ কিংবা অশুভ আঁতাতের মাধ্যমে লুণ্ঠিত রাষ্ট্রীয় সম্পদকে যদি দক্ষভাবে বিনিয়োগ করা যায়, তাহলে প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত হয়।

এ পর্যায়ে তিনি দুর্নীতি ও প্রবৃদ্ধির মধ্যকার অবাঞ্ছিত অথচ সরাসরি সম্পর্ক বিষয়ে বিভিন্ন গবেষণার বরাত দিয়ে উল্লেখ করেন যে সামান্য মাত্রার দুর্নীতি কিছু দুরারোহ সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। অবশ্য ইয়েল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর মেইসির ভিন্নমতে ডেনমার্ক সুইজারল্যান্ডের মতো সবচেয়ে কম দুর্নীতিসম্পন্ন ১০টি দেশে মাথাপিছু গড় জিডিপি ৪০ হাজার ডলার, অথচ সুদান ধরনের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত ১০টি দেশে তার পরিমাণ ৫ হাজার ডলারের কাছাকাছি।

প্রসঙ্গত, ১৯৬০ ও ৭০-এর দশকে উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা দুর্নীতিকে উন্নয়নের বাধা হিসেবে গণ্য না করে বরং সহযোগী বলে মনে করা শুরু করেন। রোমানিয়ার রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এলিনা মুনজিউ এবং বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তা টিল হার্টম্যান তাঁদের যৌথ প্রকাশনা করাপশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট: অ্যা রিএপ্রেইজাল (২০১৯) গ্রন্থে বিভিন্ন মতের উদ্ধৃতি দিয়ে লেখেন, ‘যেসব দেশের সরকার এবং আমলাতন্ত্র অর্থনৈতিক কার্যক্রমের অগ্রগতি সাধন করতে অনাগ্রহী কিংবা অক্ষম, সেসব দেশের ক্ষেত্রে দুর্নীতি অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য উপকারী হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে আমলাতন্ত্রের সহায়তা পাওয়ার জন্য দুর্নীতিকে ব্যবহার করে।’

১৯৮৪ থেকে ২০১৬ সালের উপাত্ত নিয়ে পরিচালিত এক গবেষণাপত্রের ভূমিকায় সর্বানী সাহা ও কুনাল সেনও একই মত পোষণ করে লেখেন, অগণতান্ত্রিক তথা স্বৈরশাসিত দেশগুলোতে উন্নয়ন ও দুর্নীতি পরস্পরের সহযোগী। তবে ওপরের একাধিক গবেষণাপ্রসূত বক্তব্যকে কোনোক্রমেই দুর্নীতির পক্ষাবলম্বন বলে ধারণা করা যাবে না। তাঁরা উন্নয়নশীল দেশগুলোর বাস্তবতা তুলে ধরেছেন মাত্র।

ভিয়েতনাম কিংবা অন্যান্য এশীয় দেশের সাঙাতদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির আলোকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করার অবকাশ নেই। সীমিত মাত্রার দুর্নীতি কিংবা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের মধ্যে লুণ্ঠিত সম্পদের দক্ষ ব্যবহারের শর্তগুলো আমাদের ঋণ খেলাপের সংস্কৃতি, ব্যাংক দখল ও লুট এবং বিদেশে অর্থ পাচারে নজিরবিহীন প্রবণতার মধ্যে কোনোভাবেই পূরণ হয় না।

ভিয়েতনাম কিংবা অন্যান্য এশীয় দেশের সাঙাতদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির আলোকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করার অবকাশ নেই। সীমিত মাত্রার দুর্নীতি কিংবা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের মধ্যে লুণ্ঠিত সম্পদের দক্ষ ব্যবহারের শর্তগুলো আমাদের ঋণ খেলাপের সংস্কৃতি, ব্যাংক দখল ও লুট এবং বিদেশে অর্থ পাচারে নজিরবিহীন প্রবণতার মধ্যে কোনোভাবেই পূরণ হয় না।

বাংলাদেশে সাঙাতদের অর্থনীতির সুস্পষ্ট অস্তিত্ব এবং তার প্রভাব সম্পর্কে বহু আগেই সতর্ক করেছিলেন অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেছিলেন যে নির্দিষ্ট মেয়াদের পর কোনো সরকারের শাসনকাল শেষে নতুন সরকারের আমলে আসে নতুন সাঙাতরা। কিন্তু যদি এমন অবস্থা দাঁড়ায় যে একই শাসকের ধারাবাহিকতা মেয়াদের পর মেয়াদ ধরে চলে, তাহলে এই সাঙাতরা হয়ে ওঠে উত্তরোত্তর একচ্ছত্র বা একচেটিয়া (এবং অপ্রতিরোধ্যও)।

ঠিক এই অবস্থাই চলছিল বাংলাদেশে। দেশের বাইরে অর্থ পাচার নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দেশের অর্থমন্ত্রী যদি প্রশ্নকর্তাকেই অর্থ পাচারকারীদের তালিকা সরবরাহ করতে বলেন, সেটি কি সাঙাতদের অর্থনীতির পর্যাপ্ত দৃষ্টান্ত নয়? কিংবা ঋণখেলাপিদের ক্রমাগত অন্যায্য সুবিধা দেওয়ার জন্য মন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রণোদনামূলক অবিশ্বাস্য নীতিসমূহ কি এই অশুভ চক্রের সাঙাতদের চিহ্নিত করার জন্য যথেষ্ট নয়?

প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য বর্তমান ঋণ খেলাপের প্রবণতাকে ব্যবসা কৌশলের (বিজনেস মডেল) একটা অংশ বলে যথার্থভাবেই আখ্যায়িত করেছিলেন প্রফেসর রেহমান সোবহান। প্রমাণ হিসেবে দেশের বিদ্যমান অসম নীতির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, একজন ঋণ নিলেও সুদ (ক্ষেত্রবিশেষে ফেরতও) দিতে হয় না, আর অন্যজন ঋণ নিয়ে সুদ দিচ্ছে এমন অবস্থায় খেলাটা সমানে সমানে হয় না।

তাঁর এই মন্তব্যের প্রমাণ হিসেবে ২০০৮ সালের ২২ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ বিভিন্ন চাতুরী বিন্যাস এবং রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যের কারণে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার বেশি। কিন্তু তার সঙ্গে অপ্রদর্শিত, পুনঃ তফসিলের দাওয়াই দিয়ে লুকিয়ে রাখা, আদালতের আদেশে স্থগিত এবং অবলোপন করা খেলাপি ঋণ ধরলে এই অঙ্ক চার লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যদি খেলাপিতোষণ বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে এই হার যেখানে গিয়ে দাঁড়াবে, সেটা ভয়াবহ।

তাত্ত্বিকভাবে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বাড়লেও সাঙাতদের অর্থনীতি এবং দুর্নীতির বিষফল হিসেবে ভয়াবহ হয়েছে ধনী-দরিদ্রের মধ্যকার বৈষম্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালের শেষে দেশের ব্যাংকগুলোতে এক কোটি টাকার ওপর আমানত আছে, এমন হিসাবধারীর সংখ্যা ১ লাখ ১৩ হাজার, ২০০০ সালে যার সংখ্যা ছিল সাড়ে তিন হাজারের কম। এই হিসাবে দেখা গেছে এক কোটি টাকা এবং তদূর্ধ্ব আমানতকারীদের হাতে দেশের মোট ব্যাংক আমানতের ৪৩ শতাংশ পুঞ্জীভূত।

২০২৩ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকের জরিপে দেখা গেছে মূল্যস্ফীতির কারণে মাংস খাওয়া কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে ৯৬ শতাংশ পরিবার। দেশে দামি বিলাসবহুল গাড়ির সংখ্যা দিয়েও একশ্রেণির মানুষের হাতে সম্পদের পুঞ্জীভবনের মাত্রা বোঝা যায়। বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী কেবল ২০২২ সালেই দেশে ১০ হাজারের বেশি দামি এসইউভি (জিপ) ধরনের গাড়ির নিবন্ধন হয়েছে, আগের বছরে এই সংখ্যা ছিল সাড়ে সাত হাজার।

অন্য হিসাবে ২০১১ সালের পর থেকে দেশে এ ধরনের দামি গাড়ি বিক্রি হয়েছে ৫৭ হাজারের ওপর। খুব মোটাদাগের এই হিসাবে অনুমান করে নেওয়া যায়, একশ্রেণির মানুষের হাতে কী পরিমাণ সম্পদ সঞ্চিত হয়েছে। ২০২২ সালের রিপোর্টে পাওয়া যায়, ওপরের শ্রেণির ১০ শতাংশ মানুষের হাতে চলে যায় দেশের মোট আয়ের ৪১ শতাংশ, আর সবচেয়ে নিচের ১০ শতাংশের হাতে যায় মাত্র ১ দশমিক ৩১ শতাংশ।

একশ্রেণির মানুষের হাতে সম্পদের এমন পুঞ্জীভবন সত্ত্বেও বিস্ময়কর যে আদায়কৃত মোট আয়কর বাংলাদেশের জিডিপির মাত্র ১০ শতাংশের কম, অথচ ভারতে এই হার ১৯ দশমিক ৬৭, নেপালে ১৪ দশমিক ৮৮, শ্রীলঙ্কায় ১২ দশমিক ৭৪। আরও বিস্ময়কর যে একমাত্র শ্রীলঙ্কা ছাড়া অন্য দেশগুলোর মাথাপিছু জিডিপি বাংলাদেশের চেয়ে কম। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই হার যখন ২৫ শতাংশের কাছাকাছি, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশে এটা হওয়া উচিত ছিল কমপক্ষে ১৫ শতাংশ।

বাংলাদেশে কর-জিডিপির নিম্নহারের একাধিক কারণ আছে। আমাদের নগদ লেনদেনে কোনো লাগাম টানা যায়নি বলে কর ফাঁকি দেওয়া সহজ। আদায় ব্যবস্থাও যুগোপযোগী নয়। করদাতাদের দুর্বল নৈতিকতার কারণে ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা বেশি। ফলে যে ১০ শতাংশ মানুষের হাতে মোট আয়ের ৪১ শতাংশ পুঞ্জীভূত, তাঁদের সবাই সঠিকভাবে কর দেন কি না, সেটা নিরূপণ করার কোনো কৌশল রাজস্ব বিভাগের নেই। ফলে এই ১০ শতাংশের একটা বড় অংশ কর দেওয়ার পরিবর্তে বরং সম্পদ বিদেশে পাচারে বেশি মনোযোগ দিতে পারেন।

স্বল্প পরিসরে উত্থাপিত এ রকম পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে সাঙাতদের অর্থনীতি থেকে একটা সুন্থ ধারায় ফিরিয়ে আনার মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রণয়ন ছাড়াও অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নেতৃত্বের জন্য এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মুদ্রাস্ফীতি কমানো, ব্যাংক খাতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা, লুটপাট ও দুর্নীতিতে মুমূর্ষু ব্যাংকগুলোর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা। ব্যাংকিং কমিশন গঠনের আগে কেবল প্রচলিত আইন ও নীতিমালাগুলো যদি ব্যাংকগুলোর মেনে চলা নিশ্চিত করা যায়, তাহলে দ্রুত একটা পরিবর্তন আশা করা যায়।

প্রায় দায়মুক্তি পাওয়া খেলাপিদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ের জন্য সম্ভাব্য সর্বশক্তি নিয়োগ করে তাদের কাছে কঠোর বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। মরণাপন্ন ভুঁইফোড় ব্যাংকগুলোর প্রকৃত অবস্থা ও দায়দেনা নিরূপণের জন্য দক্ষ অ্যাকাউন্টিং প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে এগুলোর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একটা সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেই সঙ্গে এসব ব্যাংক লুটপাটকারীদের কাছ থেকে সম্পদ উদ্ধার করে প্রয়োজনে পর্যায়ক্রমে অবসায়নের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে একই সঙ্গে ব্যাংক খাত উন্নয়নে সরকারের সদিচ্ছা সম্পর্কে আমানতকারীদের নিশ্চিত করে তাদের আস্থা অটুট রাখতে হবে, কারণ, এই আস্থাই ব্যাংক ব্যবস্থার মূল চাবিকাঠি।

প্রথম আলো