সম্পাদকীয় প্রকাশনার সময়: মঙ্গলবার ৩, সেপ্টেম্বর ২০২৪

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে উদ্যোগ নিন

Share on:

বন্যা আর নদীভাঙন চিরসঙ্গী হয়ে আছে কুড়িগ্রামবাসীর। যার কারণে জেলাটিতে দারিদ্র্যের হারও বেশি। কুড়িগ্রামবাসীকে এ দুর্গতি থেকে মুক্তি দিতে কোনো সরকারই সেই অর্থে কাজ করেনি। প্রতিবছরের মতো এবারও বর্ষা মৌসুম শেষে ভয়াবহ নদীভাঙনের কবলে পড়েছেন তাঁরা। এবারের ভাঙনের গতি অপেক্ষাকৃত বেশি বলে জানা যাচ্ছে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।


প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সরকারি হিসাবে গত এক মাসে জেলায় নদীভাঙনে প্রায় এক হাজার পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়েছে। এসব পরিবার অন্যের জমিতে ও বাঁধের রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে পরিবার নিয়ে অন্য জেলায় পাড়ি জমিয়েছেন। ভাঙন চলতে থাকায় অনেক গ্রাম, সরকারি স্কুল, বাজার, দোকানপাট নদীগর্ভে চলে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

ভুক্তভোগী অনেক পরিবারের পাকা বড় বাড়ি ছিল, ছিল ফসলি জমি—সবকিছু হারিয়ে পরিবারগুলো এখন নিঃস্ব হয়ে গেছে। একসময়ের স্বাবলম্বী কৃষককে এখন দিনমজুরি করে কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে। এসব মানুষ আর টিকতে না পেরে দিন শেষে বড় শহরগুলোতে পাড়ি জমাতে বাধ্য হন। নদীভাঙনের কারণে জনমিতির যে বড় পরিবর্তন ঘটে, তা আমাদের ভাবিত করে না।

নদী রক্ষাবিষয়ক সংগঠন রিভারাইন পিপলের পরিচালক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, কোনো সরকার কখনোই কুড়িগ্রামের নদীভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। হিসাব করলে দেখা যাবে প্রতিবছর যে পরিমাণ ক্ষতি হয়, টাকার অঙ্কে তার পরিমাণ এক লাখ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। বিগত বছরগুলোতে বিপুল অঙ্কের অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। তেমন একটি মেগা প্রকল্পের অর্থেই কুড়িগ্রামের মানুষকে নদীভাঙনের কবল থেকে মুক্তি দেওয়া যেত। সেই সঙ্গে বছর বছর এক লাখ কোটি টাকার ক্ষতিও এড়ানো যেত। আমরা আশা করব, কুড়িগ্রামের দিকে অন্তর্বর্তী সরকার বিশেষ নজর দেবে। জেলাটির নদীভাঙন ও দারিদ্র্য মোকাবিলায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করবে।

তবে কুড়িগ্রাম ছাড়াও গাইবান্ধা, টাঙ্গাইল, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর ও মাদারীপুর জেলায় নদীভাঙন নিয়ে পূর্বাভাস দিয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস)। এর মধ্যে কুড়িগ্রামে ভাঙন শুরু হয়ে গেছে। এসব জেলার নদীভাঙন নিয়ে সরকারকে মনোযোগী হতে হবে। ভাঙন মোকাবিলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও সক্রিয় করতে হবে। নদীভাঙনের শিকার পরিবারগুলোর পুনর্বাসনে উদ্যোগ নিতে হবে।

প্রথম আলো