মতামত/কলাম প্রকাশনার সময়: বৃহস্পতিবার ৮, অগাস্ট ২০২৪

পুলিশের পাশে দাঁড়ান, আপনার সর্বশেষ ভরসাস্থল কিন্তু পুলিশই

Share on:

আমরা আসলে কি প্রমাণ করতে যাচ্ছি? একনায়কতান্ত্রিক, দুর্নীতিবাজদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করে যখনই আমরা নতুন করে স্বাধীনতার স্বাদ আস্বাদন করতে যাচ্ছিলাম, আমরা এসব কি দেখতে পাচ্ছি, চারিদিকে লুটতরাজ এবং ধ্বংসযজ্ঞ করা হচ্ছে।


ছাত্র জনতার এই বিশাল বিজয়কে কালিমা দীপ্ত করা হচ্ছে। বিশেষ করে আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ নিরীহ পুলিশ সদস্যরা তাদের পরিবারের সদস্যবৃন্দ।

বিশ্বাস করুন এই সকল নিরীহ পুলিশ সদস্যদের কোনরকম কোন ক্ষমতা নেই। এরা শুধু সেই সকল কিছু দুষ্কৃতিকারী, দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক পালেহনকারী সিনিয়রদের আদেশ ফলো করেছে। এই সকল পা-চাটাদের দল এখন পলাতক। এই সকল দুর্নীতিবাজ, হত্যাকারী পুলিশ অফিসারদের বিচার অবশ্যই হবে দেশের মাটিতে। কিন্তু দিনশেষে আক্রান্ত হচ্ছে সেই আমাদের নিরীহ পুলিশ সদস্যরাই যারা অধিকাংশই ছাত্রদের এই যৌক্তিক আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন।

কিন্তু এখন আমরা কি দেখতে পাচ্ছি, প্রতিটি থানা পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, অস্ত্রাগার লুট করা হচ্ছে, পুলিশ সদস্যদের বিভিন্নভাবে হত্যা করা হচ্ছে, আমরা কি ভাবতেছি যে পুলিশ ছাড়া কি একটা দেশ চলতে পারে। চারিদিকে একটা চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। দেশে আইন-শৃঙ্খলা বলতে কিছু নেই। বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি, গণ ডাকাতি হচ্ছে। কিন্তু মানুষের যাওয়ার কোন জায়গা নেই, আমরা কোথায় যাব- যদি পুলিশ না থাকে। আপনি কোথায় গিয়ে কমপ্লেন দিবেন? আপনার যদি একটা জিডি করা লাগে, আপনার যদি একটা মামলা করতে হয়, আপনার যদি একটা পুলিশ ক্লিয়ারেন্স লাগে দেশের বাহিরে যাওয়ার জন্য?

পুলিশের ‌'৯৯৯' মানুষের একটি আশা ভরসার প্রতীক হয়ে উঠেছিল। আমরা যখনই কোন জায়গায় আক্রান্ত হচ্ছিলাম, যখনই কোন জায়গা থেকে কোন আলোর দিশা পাচ্ছিলাম না এবং এরকম অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে যে নিজের পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনকে ফোন না করে আমরা ৯৯৯ ফোন দিয়েছি এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাঙ্খিত ফলাফল পেয়েছি।

আমরা কি সেই করোনার (COVID-19) কথা ভুলে গিয়েছি, যখন কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়েছিল বা আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিল, আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম তার মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী বা অন্য কেউ সেই ডেড বডিটাকে স্পর্শ পর্যন্ত কেউ করেনি। তখন কিন্তু ভাই পুলিশ সদস্যই গিয়ে সেই মরদেহ সৎকার করেছে। ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়েছে, ঘরে ঘরে বাজার পৌঁছে দিয়েছে, আক্রান্ত হলে হসপিটালে পৌঁছে দিয়েছে। তারা কিন্তু কখনো চিন্তা করেনি যে আমরাও করোনায় আক্রান্ত হতে পারি এবং এ কাজ করতে গিয়ে অসংখ্য পুলিশ সদস্য নিজের জীবন অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন। আমরা কি ভুলে গিয়েছি স্বাধীনতার প্রথম বুলেট কিন্তু পুলিশের বন্দুক থেকেই বের হয়েছিল এবং অসংখ্য পুলিশ সদস্য সেদিন নিহত হয়েছিল। যে কোন জাতীয় দুর্যোগের ক্ষেত্রে পুলিশ কিন্তু তার জীবন অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছে এবং প্রথম সারির যুদ্ধ হিসেবে সেই যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। একটা আধুনিক দেশ পুলিশ ছাড়া চলতে পারে না যেটার প্রমাণ আমরা কয়েক দিনেই পেয়েছি। অসংখ্য অভিযোগ আসছে কিন্তু অভিযোগ নেওয়ার মতো কেউ নেই, ব্যবস্থা নেওয়ার মতো কেউ নেই। সংখ্যালঘু ভাই বোনেরা আক্রান্ত হচ্ছে, সাধারণ মানুষজন, যাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই তারা আক্রান্ত হচ্ছেন। কিন্তু আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কেউ নেই। পুলিশের কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করে দিন, দিনশেষে আমাদের নিরাপত্তা বলেন, আইনগত আশ্রয় বলেন বা আইনগত বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ বলেন সবশেষে পুলিশের কাছেই যেতে হয়।

আমিও আপনাদের সঙ্গে একমত। পুলিশ বাহিনীর সংস্কার দরকার যেন আর এরকম পদলেহনকারী, দুষ্কৃতিকারী, দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক চামচাদের সৃষ্টি না হয়, যেন এখানে রাজনৈতিক দুর্বিতায়ন না ঘটে, পুলিশ যেন পেশাদারিত্বের সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করতে পারে। চলুন আমরা সেরকম পুলিশ বাহিনী গড়ে তুলি এবং পুলিশ ভাইকে আমাদের নিজেদের ভাই বলে তাদের পাশে দাঁড়াই। কেননা প্রতিটি পুলিশ সদস্য আপনার আমার বা অন্য কারো ভাই, বোন, স্বামী, স্ত্রী বা সন্তান এবং এই সমাজেরই অংশ। আসুন দেশটাকে আবার নতুন করে গড়ে তুলি, আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে নিয়ে আসি, পুলিশদের কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করে দিই। যেন আরেকজন পুলিশ সদস্য আক্রান্ত না হয়, যেন আর একজন সংখ্যালঘু বা সাধারণ মানুষ আক্রান্ত না হয়। নতুন বাংলাদেশ গঠনে অংশগ্রহণ করি।

দৈনিক সমকাল