সম্পাদকীয় প্রকাশনার সময়: সোমবার ৩০, সেপ্টেম্বর ২০২৪

পলিথিন নিষিদ্ধের আইন বাস্তবায়নে জনগণকেও সচেতন হতে হবে

Share on:

পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর জেনেও আমরা বছরের পর বছর পলিথিন বা পলিপ্রোপাইলিন শপিং ব্যাগ ব্যবহার করে আসছি।


বিএনপি সরকার ২০০২ সালে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করে একটি আইনও করেছিল; যদিও তা সংশ্লিষ্টদের অবহেলা ও অমনোযোগিতার কারণে বাস্তবায়িত হয়নি। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় পলিথিনের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়।

এই পটভূমিতে নিষিদ্ধ পলিথিন ও পলিপ্রোপাইলিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন, মজুত, পরিবহন, বিপণন ও ব্যবহার বন্ধের কার্যক্রম বাস্তবায়নে সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। কাঁচাবাজারসহ দেশের সব ধরনের বাজার কর্তৃপক্ষ ১ অক্টোবর থেকে নিজ উদ্যোগে অবৈধ পলিথিন শপিং ব্যাগ বর্জন করবে—এই আশাবাদ ব্যক্ত করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে। সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। পলিথিনের বিকল্প হিসেবে সব সুপারশপে বা শপের সামনে পাট ও কাপড়ের ব্যাগ ক্রেতাদের জন্য রাখা হবে বলেও জানান তিনি।

গত বুধবার দোকান মালিক সমিতি ও প্লাস্টিক পণ্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পরামর্শক সভায় পরিবেশ উপদেষ্টা পরিবেশের সুরক্ষা ও টেকসই উন্নয়নের জন্য প্লাস্টিক ব্যবহারের বিকল্প খুঁজে বের করার ওপর জোর দেন। এর আগে ২৯ সেপ্টেম্বর পরিবেশ অধিদপ্তরে প্লাস্টিকের বিকল্প মেলার আয়োজন করা হয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধের বিষয়টি প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু জনসচেতনতা বাড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের কাজে লাগানোর যে উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে, সেটি খুব বেশি কার্যকর হয়নি।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, দেশে তিন হাজার কারখানায় দিনে ১ কোটি ৪০ লাখ প্লাস্টিক-পলিথিন ব্যাগ উৎপাদিত হয়। পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে আইন থাকা সত্ত্বেও ৮০ শতাংশ মানুষ প্রতিদিন পলিথিন ও প্লাস্টিকসামগ্রী ব্যবহার করছেন। দেশের প্লাস্টিক ও পলিথিন মূলত মাটি ও নদীতে গিয়ে জমা হয়। এসব সামগ্রী জমে কী ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়, তার প্রমাণ বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চারপাশের নদীগুলো। পলিথিন ও প্লাস্টিক জমে যাওয়ার কারণে এসব নদী খনন করাও যাচ্ছে না। বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (বাপা) হিসাব অনুযায়ী, শুধু ঢাকাতেই প্রতিদিন প্রায় দুই কোটি পলিথিন ব্যাগ জমা হয়। পলিথিন ছাড়া অন্য প্লাস্টিক বর্জ্যও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি।

সরকার ১ নভেম্বর থেকে পলিথিন কারখানাগুলোয় অভিযান চালানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমরা তাকে স্বাগত জানাই। তবে এ ক্ষেত্রে কারখানার শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের কথাও ভাবতে হবে। সরকারের উচিত বিকল্প ব্যাগের কারখানা প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করা। ক্রেতারা সাশ্রয়ী দামে পলিথিন ব্যাগ পান বলেই কিনে থাকেন। তাঁরা সাশ্রয়ী দামে না পেলে অন্য ব্যাগ কিনতে তাঁরা উৎসাহী হবেন না। তবে ক্ষতিকর পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করতে হলে সরকারের সিদ্ধান্ত ও একক উদ্যোগই যথেষ্ট নয়। এ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। মানুষকে পলিথিনের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে জানাতে হবে।

কথায় বলে, ‘আপনি আচরি ধর্ম শেখাও অপরে।’ সরকারের নীতিনির্ধাকেরা তার কিছু দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্লাস্টিক সামগ্রী নিষিদ্ধ করতে কাচের গ্লাস ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্যদিকে ডিসেম্বরের মধ্যে সচিবালয়কে ‘ওয়ান টাইম বা একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিক’মুক্ত করার যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, সেটা বাস্তবায়িত হবে আশা করা যায়। নীতিনির্ধারকেরা পলিথিন ও প্লাস্টিক সামগ্রী বর্জন করলে সাধারণ মানুষও এসব ব্যবহার করার ক্ষেত্রে দশবার চিন্তা করবেন।

প্রথম আলো